আওয়ামী লীগের শাসনামলে হামলা-মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখানে বিরোধী দলে থেকেও নিজ পরিবারের ১৫ সদস্যকে একটি কলেজে চাকরি দিয়ে রীতিমতো সমালোচনায় পড়েছেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রিমন।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে বিধিবহির্ভূতভাবে নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে ১৫ জনকে চাকরি দিয়েছেন বিএনপির ওই নেতা।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, দপদপিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার অহিদুল ইসলাম বাদল ১৯৯৫ সালে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দপদপিয়া ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজ। বর্তমানে কলেজটিতে অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন রিমন আকনের আপন বড় ভাই সুমন আকনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার। দুই চাচা আবু সাইদ রুবেল আকনকে কারিগরি শাখার প্রভাষক ও তারই আপন ভাই মো. মেজবাহ উদ্দিন দুলাল আকন চাকরি করেন সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে।
আপন চাচাত ভাই মহিউদ্দিন আকনের ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেনকে অফিস সহকারী পদে, চাচাত দুই ভাই তামিম আকনকে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও তানজিল আকনকে অস্থায়ী এমএলএসএস (এমপিওভুক্ত হয়নি) পদে, তারই চাচাত চাচা ফরিদ উদ্দিন আকনকে এমএলএসএস, চাচাত বোন ইসরাত জাহান রনিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক, বিএনপি নেতা রিমন আকনের বাসার কাজের বুয়া পারভীন আক্তার পরিকে এমএলএসএস, তারই চাচা মহিউদ্দিন আকনের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় নাসির উদ্দীনকে এমএলএসএস, আরেক চাচাত চাচা মোস্তফা আকন ও কাজেম আলী আকনকে এমএলএসএস, তারই চাচা মহিউদ্দিন আকনের ভাগিনার স্ত্রী শারমিন আক্তার লিজাকে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং চাচা আলম আকনকে এমএলএসএস পদে চাকরি দিয়েছেন বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম রিমন।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু চাকরিই নয়, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রিমন পরিবারের কবজায়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে গভীর সক্ষতা থাকায় ঘুরে-ফিরে তার আত্মীয়-স্বজনরাই অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন কমিটিতে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন দপদপিয়া ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজকে।
কলেজ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিএনপির এই নেতার ভাই যুবলীগ নেতা মরহুম সুমন আকন ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলেজ ভবনেই চালু করেছেন একটি কিন্ডারগার্টেন। তৎকালীন সময় এ নিয়ে তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও ক্ষমতার কাছে পরাস্ত হতে হয় এলাকাবাসীকে।
তবে কলেজ অধ্যক্ষ ইমরানা পারভীন দাবি করেন, তিনি ছয় মাস আগে যোগদান করেছেন কলেজটিতে। তাই একই পরিবারের ১৫ জন সদস্যের চাকরির বিষয়টি অবগত নন তিনি। তা ছাড়া লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন নলছিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল আজিম।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম রিমনকে একাধিকবার কল দিলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।
তবে দপদপিয়া ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজে একই পরিবারের ১৫ জনের চাকরি করার বিষয়টি শুনেই বিস্ময় প্রকাশ করেন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম রিমনের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেল চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
মন্তব্য করুন