ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন থেকে কোনো পেঁয়াজ তাদের দেশের বাইরে রপ্তানি করতে হলে সরকারকে ৪০ শতাংশ শুল্ককর দিতে হবে।
এ কারণে রোববার (২০ আগস্ট) থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সকাল থেকে কোনো পেঁয়াজবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেনি। এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত সরকারের শুল্ককর বৃদ্ধিতে দেশে পেঁয়াজের বাজার ঊধ্বগতির আশঙ্কা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
জানা গেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। যা ঘোষণার পর থেকেই কার্যকর হবে। শনিবার (১৯ আগস্ট) ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
সূত্র মতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রবের যে কোটা চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা অনেকটা কাটবে। অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়াতে রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে বাড়তি এ শুল্ক আরোপের পথে হাঁটল প্রতিবেশী দেশটি। ভারতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ, টমেটোসহ বেশি ব্যবহার হয় এমন প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়ছে। গত কয়েক মাসে এসব সবজির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত জুলাইতে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়েছে, যা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের মাসে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগস্টের বড় সময়জুড়ে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে দেশটিতে। সবজি উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। অন্যদিকে ভালোমানের পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় এমন কিছু এলাকা জুলাইয়ে বন্যার কারণে রান্নার নিত্য ব্যবহারের এ পণ্য ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। তবে নিজেদের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখাই শুল্ক বাড়ানোর কারণ বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী জানান, গত সপ্তাহে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন, সে দেশের নাসিক প্রদশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় এবং সেগুলোর জাতও অনেক ভালো। এবার ওই এলাকায় বন্যা হওয়ায় তাদের পেঁয়াজের উৎপাদনও মজুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক, আব্দুল লতিফ জানান, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা যখন বৃদ্ধি পায় তখন ভারত সরকার শুল্ক আরোপ করাসহ নানা উপায় বের করে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে করে আমদানিকারকরা অনেকটাই বিপাকে পড়ে।
এ বিষয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক উজ্জল বিশ্বাস বলেন, হঠাৎ করে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক করাদি আরোপ করায় আমরা আমদানিকারকরা এই পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
এ প্রসঙ্গে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক কাস্টমস চেকপোস্টবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপুল জানান, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে যে শুল্ককর বৃদ্ধি করেছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি কমে যাবে। কারণ এই টাকাটা বাংলাদেশের আমদানিকারকদের কাছে থেকেই যাবে। যাতে করে বাণিজ্যিক সিন্ডিকেটরা আরও শক্তিশালী হবে। এ ক্ষেত্রে দেই দেশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে পেঁয়াজ আমদানিকে সহজ করা যায় কী করে সে দিকে লক্ষ্য করতে হবে।
শনিবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হওয়ার পর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমদানিকারকদের। তাছাড়া হঠাৎ ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
মন্তব্য করুন