সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা। প্রতিদিনের মতো পাঁচ বছরের ছোট্ট সুরাইয়া বাবার মোটরসাইলে নিশ্চিন্ত মনেই যাচ্ছিল স্কুলে। হয়তো বাবার মুখে ছিল স্বপ্নের কথা, মেয়ের চোখে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আলো। কিন্তু হঠাৎ রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা এলাকার বানিয়াপাড়ায় ঈশ্বরদী-বাঘা আঞ্চলিক মহাসড়কে মহাসড়কে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। ঘাতক বাসের চাকা বাবা ও মেয়ের ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গেছে, যা চিরতরে বদলে দিল শান্ত ইসলাম ও তার মেয়ে সুরাইয়ার পুরো জীবন।
সোমবার (১৯ মে) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুরাইয়ার বাবা শান্ত ইসলাম সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুর উপজেলার আটটিকা-জামতলা এলাকার এজাহার আলীর ছেলে তিনি। কয়েক দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। বাড়িতে এসে আদরের টুকরো মেয়েকেই বেশি সময় দিত। মেয়ে সুরাইয়াও বাবাকে পেয়ে ছিল আনন্দে আত্মহারা। সুরাইয়া বাঘা পৌরসভা সংলগ্ন স্থানীয় গ্রিন হ্যাভেন স্কুলের শিশু শ্রেণির ছাত্রী। .
কয়েক দিন থেকেই বাবার মোটরসাইকেলের পেছনে বসেই স্কুলে যাতায়াত করত। সোমবার সকালে সুরাইয়ার স্কুলে যাওয়ার সঙ্গী হয় বাবা-মা দুজনই। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মোসা. জেসমিনকে সঙ্গে নিয়েই মেয়ে সুরাইয়াকে মোটরসাইকেলে নিয়ে স্কুলে রওয়ানা হন শান্ত।
কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পাবনা থেকে ঢাকাগামী সুপার সনি নামের একটি বাস শান্তর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেলের পেছনে বসা স্ত্রী দূরে ছিটকে পড়ে গিয়ে রক্ষা পায়। কিন্তু শান্ত ও তার কন্যা সুরাইয়ার ডান পা ঘাতক বাসটির চাকার নিচে পড়ে যায়। এতে উভয়ের ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত গুরুতর আহত শান্ত, তার স্ত্রী জেসমিন ও একমাত্র শিশু কন্যা সুরাইয়াকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আহত বাবা-মেয়েসহ বিছিন্ন পা ২টি উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কাটা পাসহ তাদের ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, বাবার একটি ও মেয়ের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। আমার এখানে তাদের প্রথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাঘা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি শান্ত বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। সকালে শান্ত তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে মেয়ের স্কুলে যাচ্ছিলেন। পথে বানিয়াপাড়ায় পৌঁছলে ঢাকাগামী সুপার সনি নামের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় বাবা-মেয়ে বাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে বাবা ও মেয়ের শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় শান্তর স্ত্রীও আহত হয়েছেন। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনার পরে বাসের চালক ও সহকারীরা পালিয়ে যায়। পরে বাসটি পুলিশ জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয়রা জানান, সড়কে রাস্তার কাজ চলমান থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে যানজট লেগেই থাকত। এতে ঢাকাগামী বাসগুলো যানজটে আটকা থাকত। এরই ধারাবাহিকতায় সুপার সনি নামের ওই বাস যানজট থেকে বেরিয়েই বেপরোয়া গতিতে ছুটতে গিয়ে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটায়।
মন্তব্য করুন