মাগুরায় পাঁচ ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় যৌথবাহিনীর অভিযানে নিষিদ্ধ সংগঠনের ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই পাঁচজন ব্যবসায়ীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২৮ মে) রাতে যৌথবাহিনী মাগুরা পৌরসভার সাজিয়ারায় একটি ছাত্রাবাস থেকে পাঁচজন ব্যবসায়ীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
আটক ওই নেতার নাম ইশতিয়াক আহমেদ শান্ত (২৮)। তিনি সাজিয়ারা এলাকায় একজন বখাটে ও মাদকসেবী নামেই পরিচিত। তিনি মাগুরা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন বলে জানা যায়।
জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়া ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা হলেন- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বরফা গ্রামের রাজিব সরদার (২৫), রিয়াদ ইসলাম (২৪), বাবু শেখ (২৩) ও হৃদয় সর্দার (২০)।
উদ্ধার হওয়া ব্যবসাীরা জানান, সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি যৌথ দল গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে আমাদের উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মামলা রুজু হলে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
ভুক্তভোগী ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, ২১ মে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রির জন্য আমরা মাগুরায় আসি। মাগুরা থেকে ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য একটি অস্থায়ী মেস বাড়ির সন্ধান করতে থাকলে ইশতিয়াক নামে ছেলেটি আমাদের জানায় আমার একটি মেস আছে, আপনাদের পছন্দ হলে থাকতে পারেন। আমরা পাঁচ জন ব্যবসায়ী সাজিয়ারা এলাকায় ‘এমএস ছাত্রাবাস’ নামের একটি মেসে দুটি কক্ষ ভাড়া নেই। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইশতিয়াকসহ একই এলাকার আরও প্রায় ৯ জন সেই মেসে ঢুকে বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে আমাদের ব্যবসার সব মালামাল লুট করে নেয়। এই সময় তারা আমাদের মারধরের পাশাপাশি হত্যার হুমকি দিতে থাকে। এমনকি আমাদের মারধরের ভিডিও ধারণ করে আমাদের পরিবারের কাছে সেই ভিডিও পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আর আমাদের যখন মারধর করা হতো তখন উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স বাজানো হতো।
ব্যবসায়ীদের একজন রাজীব সরদার কালবেলাকে জানান, আমাদের পরিবার টাকা না পাঠানোয় তারা আমাদের দুজনকে মোটরসাইকেলে একটি পরিত্যক্ত ভাটায় নিয়ে রক্তাক্ত করে সেই ভিডিও পরিবারকে পাঠাবে কিন্তু মাঠের কিছু মানুষ আসা যাওয়ায় তারা সেটা পারেনি। তবে তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের হত্যা করে ফেলে আসবে। তারপর মেসে এনে আলাদা আলাদা ঘরে আটকিয়ে রাখে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।
মাগুরা সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ওই যুবকদের আটকের পর মারধরের একটি ভিডিও চিত্র তাদের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, চার যুবককে পাশাপাশি দেয়ালের দিকে দুই হাত উঁচু করে দাঁড় করিয়ে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে তাদের পেটাচ্ছেন। বুধবার দুপুরে খবর পেয়ে সাজিয়াড়া গ্রামের ‘এম এস ছাত্রাবাস’ ও পাশের একটি বাড়ি থেকে তালা ভেঙে ওই পাঁচ যুবককে উদ্ধার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই গ্রামের ইশতিয়াক আহমেদের (শান্ত) বাড়ি থেকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ইলেকট্রনিক সামগ্রী উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। পরে ওই মেসবাড়ি থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সামগ্রী, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইয়ুব আলী কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় বাবু শেখ বাদী হয়ে সাত জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন এবং আটক রয়েছে। পাশাপাশি জড়িত অন্য ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলছে।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ০১ জুন ২০২৫ 
