বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে, জাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে নির্বাচন হতে হবে, রেগুলার সরকার লাগবে।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি পাহাড়ে ‘বৈঠকখানা মিলনায়তনে’ চট্টগ্রাম জেলা সিপিবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর, করিডোর নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কসহ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় তিনি বলেন, মানুষ ২০১৪ সালে ভোট দিতে পারেনি, ২০১৮ সালে ভোট দিতে পারেনি, ২০২৪ সালে ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনার আমলে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। লড়াইটা হয়েছে মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হলো মিনিমাম সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে চলে যাওয়া, দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তারা সেটা না করে বড় বড় অ্যাজেন্ডা সামনে এনে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকারকে বলব- অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সেটা অক্টোবরে হতে পারে, নভেম্বরে হতে পারে, ডিসেম্বরে হতে পারে। তবে ডিসেম্বরের বাইরে কোনোভাবেই না। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা। জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনের বিকল্প আর কিছু নেই। আমরা কোনো অসাংবিধানিক কেউ ক্ষমতায় আসুক, সেটা চাই না। আমরা চাই গণতন্ত্র, আমরা চাই নির্বাচন। মানুষের দম বন্ধ হয়ে গেছে, দেশের দম বন্ধ হয়ে গেছে।
ভারতের পুশইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, সীমান্তে ভারত যেটা করছে, পুশইন, এটা মানবতাবিরোধী কাজ। আমরা ভারতের পুশইনের বিরুদ্ধে। এ তৎপরতা কেন? দুই দেশের সরকার পর্যায়ে আলাপ করে এটা সমাধান করা যায়। কিন্তু এটা জিইয়ে রাখা কেন?
করিডরের বিষয়ে তিনি বলেন, করিডোরের বিষয়টি খুবই সেনসিটিভ। এটা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত। রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন থেকে মুক্ত হোক, এটা আমরা চাই। কিন্তু এখানে করিডোর দিতে হবে কেন? করিডরের বিরোধিতা যখন এসেছে, এখন বলছে ত্রাণ চ্যানেল। দুইটার মধ্যে তফাত কী, এ দেশের মানুষ বুঝতে পারছে না। মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে পাশ কাটিয়ে করিডোর দিতে গেলে দেশে একটা যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক লাইনের ভূরাজনীতি, তারা চীনকে ঘেরাও করতে চায়। আমরা কেন বাংলাদেশকে আমেরিকার ভূরাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছি? এটা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ভয়ংকর হুমকি হবে। এজন্য আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এটার বিরুদ্ধে তীব্রভাবে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, এই করিডোর, ত্রাণ চ্যানেল- এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে শাহআলম বলেন, কর্ণফুলী নদীর মোহনা ইজারা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এসএসএ সেখানে বন্দর গড়তে চেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা বামপন্থিরা সেদিন আপস করিনি। আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম, হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। পরে সরকার এসএসএ-কে পোর্ট করতে দেয়নি। এখনও বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ডিপি ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর প্রতিবাদে আমরা মাঠে নেমেছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া।
মন্তব্য করুন