বাঁশ ঝাড়ের নিচে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে থাকেন বৃদ্ধা হাজেরা বেগম। সম্পদ বলতে শুধু ওই পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরটি। পলিথিন মুড়িয়ে বৃষ্টির পানি থেকে রেহাই পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে তিনি। ঘরের ভেতরে বিছানায় শুয়েই দিনের বেলা সূর্যের আলো আর চাঁদনি রাতে জোসনা দেখে হাজেরা।
কয়েক বছর আগে হাজেরার স্বামী জোবেদ আলী মারা যাওয়ায় এক ছেলে হিমেলকে (১২) নিয়ে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে থাকেন হাজেরা। আর বড় ছেলে ঢাকায় মানুষের বাড়িতে কাজ করে। সবার মাঝে ঈদের আনন্দ থাকলেও হাজেরা বেগমের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দুশ্চিন্তা। ঈদের পরেই হাজেরার পলিথিনে মোড়ানো ঘরটি সড়াতে বলেছে জমির মালিক। মানুষের জমিতে আজ এখানে কাল ওখানে ঘর করেই চলে হাজেরার যাযাবরি জীবন! বয়সের ভারে চোখে ঝাপসা দেখা হাজেরা মানুষের কাছে চেয়ে খেয়ে দিন পার করে তিনি।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারি ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী এলাকার ভূমিহীন হাজেরার বেগমের বাড়ি। পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে কোনোরকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন হাজেরা ও তার ছোট্ট সন্তান হিমেল হোসেন।
সরকার ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য ঘর বরাদ্দ দিলেও বৃদ্ধা হাজেরার কপালে জোটেনি একটি ঘর। এলাকার সবার ঘরে বিদ্যুতের বাতি জ্বললেও হাজেরার ঘরে জ্বলে পুরোনো কেরোসিন তেলের কুপি। একটু বাতাস হলেই নিভে যায় কুপির সেই আলো৷ বয়সের ভারে কোন কাজ করতে পারে না হাজেরা। তাই অসহায় হাজেরা মানুষের বাড়ি বাড়ি চাল-ডাল সংগ্রহ করে কোন রকম চলে হাজেরা জীবন।
প্রতিবেশী কামরুজ্জামান বলেন, অনেক দিন ধরে অসহায় হাজেরা বেগম পলিথিনের ছাউনি দিয়ে কোন রকম আছে। একটু বাতাস হলেই উড়ে যেতে চায় তার ঝুপড়ি ঘরটি। ওনাকে সহযোগিতা করার কি কেউ নেই! তার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু সরকার যদি করে দেয় ভালো হতো।
স্থানীয় আর এক আনোয়ার হোসেন বলেন, বহুদিন আগে হাজেরার স্বামী মারা গেছে। সে খুব কষ্ট করে সন্তানদের নিয়ে পলিথিনের ঝুপড়িতে থাকেন। সবাই যদি একটু সহযোগিতা করে তাহলে হাজরার উপকার হবে।
বৃদ্ধা হাজেরা বেগম বলেন, ঈদ আসছে বাবা মানুষের ছাওয়ার (ছেলেরা) ঘর আনন্দ করবে আর হামার (আমার) বাচ্ছারা (ছেলেরা) ভাতে পাবে না। তিন বেলা তিন মুটি (মুঠো) যে খাবে তার চাল নাই। তরকারি কিনার পাইসা (পয়সা) নাই। হুরকা (বাতাস) আসলে প্লাস্টিক উড়ি (উড়ে) যায় ঘরত (ঘরে) থাকির পাংনা (পাইনা)। ঝরি (বৃষ্টি) আসলে পানি পরে বাচ্ছাটা (ছেলেটা) ঘুমির পায় না।
তিনি বলেন, ঈদের পারে জমি মালিক জায়গা ছাড়ি দিবার কইছে কোটে যাইম বাচ্চা দুইটাক নিয়া সেই চিন্তা ঘুমে ধরে না। আজকে সরকার থাকি নাকি ১০ কেজি করে চাল দিলো সবাই পাইলো মোর কপালে জুটলো না। সরকার যদি মোক দুই শতক বাড়ি করার জমি দিতো তাহলে বাচ্চাদের নিয়া থাকির পানুং হয়।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, হাজেরা বেগমের বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। খোঁজখবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা তাকে করা হবে।
মন্তব্য করুন