কুড়িগ্রামের রৌমারীর ফুলুয়ারচর নৌ-ঘাটে ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। এতে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঘাটে আটকা পড়েছে। এছাড়া ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা পড়েছে বিপাকে।
শুক্রবার (৬ জুন) ওই ঘাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ট্রাকচালক হাফিজুর রহমান বলেন, গত ৪ দিন ধরে রৌমারীর এই ঘাটে মালামাল নিয়ে আটকে আছি। কাল ঈদ, বাড়িতে যেতে পারবো কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ ফেরি কর্তৃপক্ষ বলছে রাস্তা সমস্যার কারণে ফেরি আপাতত বন্ধ।
তিনি আরও বলেন, ঈদ সামনে রেখে কর্তৃপক্ষের আগেভাগে রাস্তা ঠিক করা দরকার ছিল। এখানে শুধু সিন্ডিকেট কাজ করছে। কারণ নৌ ঘাট রয়েছে। সম্ভবত ঈদের শতশত যাত্রী সহজে ফেরিতে যেতে পারতো এজন্য সিন্ডিকেট করে ফেরিতে ওঠানামার রাস্তা ঠিক করেনি। এতে নৌকায় করে যাত্রী চলাচল করছে।
ইমরান হোসেন, মামুন মিয়া, আশরাফুল ইসলামসহ অনেক যাত্রী কালবেলাকে বলেন, ঈদের ছুটি পেয়ে ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে রৌমারীর ফেরি দিয়ে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখানে এসে দেখি সিন্ডিকেট করে ফেরি চলাচল বন্ধ করে রেখেছে। এজন্য নৌকায় করে গ্রামের বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, নৌকায় উঠতেও সিন্ডিকেট করে ভোগান্তি করা হচ্ছে। যে যাত্রী আগে আসছেন তাদের নৌকায় নেওয়া হচ্ছে না। অথচ পরে আসা যাত্রীরা আগে নৌকায় উঠছেন। কীভাবে তারা উঠছেন তা বোঝা মুশকিল। তাদের প্রতিবাদ করে বললে ঘাট ইজারাদারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ ঘাটের দায়িত্বে নিয়োজিত নাছির উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, এখানে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে না। কারণ ঈদে এই ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় হয়। এতে করে কে কার আগে নৌকায় উঠবে তা নিয়ে হুড়াহুড়ি করে। এখানে শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য পুলিশও কাজ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেট করে ফেরি বন্ধ নয় বরং নদের বৃদ্ধি পাওয়া পানি রাস্তায় উঠায় যানবাহন ও যাত্রী উঠতে না পারায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রৌমারী-চিলমারী ফেরি সার্ভিসের মেরিন অফিসার মো. নজরুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, গাড়ি ওঠানামার এপ্রোচিং রোডের কাজ করানো হচ্ছে না। বিআইডব্লিউটিএ -এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হলেও কাজের অগ্রগতি নেই। তাছাড়া কাজ তদারকির জন্য বিআইডব্লিউটিএ -এর কোনো ইঞ্জিনিয়ারকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, আমরা দুটি ফেরি সর্বসম্মতভাবে ঈদে যাত্রী ও গাড়ি পারাপারের জন্য দুটি ফেরিকে প্রস্তুত রেখেছি। বিআইডব্লিউটিএ রাস্তার কাজ শেষ করে ক্লিয়ারেন্স দিলেই ফেরি চলাচল করবে, ইনশাআল্লাহ।
বিআইডব্লিউটিএ সিরাজগঞ্জ ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী সঞ্জয় কালবেলাকে জানান, আজ রাস্তার কাজ শেষ হবে। তখন ফেরি চলাচল করতে পারবে।
সিন্ডিকেট ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আসলে এগুলো মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে, আমাদের কাছে ফেরি কর্তৃপক্ষ বার্তা পাঠিয়েছে ফেরিতে উঠানামার রাস্তাটি নদের পানিতে তলিয়ে গেছে। পরে আমরা কিছু শ্রমিক দিয়ে রাস্তার কাজ করানো হচ্ছে বলে জানান।
উল্লেখ্য, নৌকা দেরিতে ছাড়ায় যাত্রী, ইজারাদারের লোকজন ও নৌকার মাঝিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ৫ জন আহতের খবর পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার ফুলুয়ারচর নৌকা ঘাটে এ ঘটনাটি ঘটে।
মন্তব্য করুন