শখের বসে মানুষ কত কিছুই না করেন। শখ পূরণ করতে অনেকে নানান ত্যাগ স্বীকার করতেও পিছপা হন না। এমনই এক শৌখিন মানুষের দেখা মিলেছে দিনাজপুরে। অরুণ কুমার সরকার (৪০) নামে এই ব্যক্তি শুধু শখ থেকে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে বাঁ হাতের নখ কাটেননি।
দীর্ঘদিন ধরে নখ না কাটায় শুধু এলাকাতেই নয়, পুরো উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্যের। লোকমুখে শুনে এক নজর অরুণ কুমারের হাতের নখ দেখার জন্য প্রতিদিনই ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ।
অরুণ কুমার সরকার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে। পেশায় তিনি একজন ফটো স্টুডিও ব্যবসায়ী। ১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া অরুণ কুমারের নখ রাখা নিয়ে প্রথম দিকে বাবা-মার আপত্তি থাকলেও পরে তারাও ছেলের শখের কাছে আর তেমন কোনো আপত্তি করেননি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে অরুণ কুমার চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এক সপ্তাহ ধরে নখ না কাটায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে নখ কাটার কথা বলেন। কিন্তু সে শিক্ষকদের কথায় কর্ণপাত না করে আরও একটু নখ বড় হলে কেমন লাগবে সেটি দেখার জন্য বাঁ হাত লুকিয়ে রাখতে শুরু করে। এতে নখের প্রতি প্রবল ভালোবাসা জন্ম নেয় তার। সেই ভালোবাসাকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে অরুণ কুমার বাঁ হাতের নখ কাটাই বন্ধ করে দেন। তখন থেকেই নখ না কাটার যাত্রা শুরু হয় তার। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৩ বছর। নখগুলো এতটাই বড় হয়ে গেছে যে, গাছের ডালের মতো আকা-বাঁকা হয়ে রয়েছে।
বর্তমানে অরুণ কুমারের বাঁ হাতের মধ্যমা আঙুলের নখ ১১ ইঞ্চি, অনামিকা ১৫ ইঞ্চি, কনিষ্ঠ ১৩ ইঞ্চি, বৃদ্ধাঙ্গুল দেড় ইঞ্চি এবং তর্জনি ২ ইঞ্চ লম্বা হয়ে রয়েছে।
গ্রাম সম্পর্কে কাকাতো ভাই গৌতম কুমার রায় ও গ্রাম পুলিশ যোতিশ চন্দ্র রায়, অরুণ দীর্ঘদিন ধরে বাঁ হাতের নখ না কেটে রেখে দিয়েছে। আগে বিষয়টি ভালো না লাগলেও এখন নখগুলো দেখতে ভালোই লাগে।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) নূর ইসলাম বলেন, অরুণ কুমারের হাতের নখ দেখলে নিজেও অবাক লাগে। এটি খুব ধৈর্যের বিষয়। নখগুলো দেখতে ভালোই লাগে। লোকজনও দেখতে আসে তার নখ।
উত্তর লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, অরুণ কুমার উত্তর লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র। ছাত্র থাকা অবস্থাতেও সে নখ কাটত না। শিক্ষকরা এ নিয়ে তাকে বকাবকিও করতেন। কিন্তু সে হাত লুকিয়ে রেখে ক্লাস করত। এখন তো সে তার নখের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। তবে এটি সাধনার আর ধৈর্যের বিষয়।
স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক লিয়াতক আলী বলেন, হাতের নখ বড় হলে নখের সঙ্গে রোগজীবাণু শরীরে ঢুকতে পারে। এজন্য নখ না রাখাই ভালো। তবে যেহেতু অরুণ তার শখের নখ বড় করতে করতে এই পর্যায়ে এসেছে এ জন্য তাকে নখগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা উচিত।
হাতের নখের প্রসঙ্গে অরুণ কুমার সরকার জানান, শখের বশেই নখ রাখা। প্রথম দিকে মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজন ও শিক্ষকরা বড় নখ নিয়ে আপত্তি করলেও পরে সবাই মেনে নিয়েছেন।
জানা গেছে, পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ২০০৩ সালে বিয়ে করেন অরুণ কুমার। বর্তমানে এক ছেলে ও এক কন্যাসন্তানের জনক। ছেলের নামেই উত্তর লক্ষ্মীপুর বাজারে ‘কান্না ডিজিটাল ফটো স্টুডিও’ ব্যবসা রয়েছে। সেখানে ছবি তোলা, বিকাশে টাকা লেনদেন, ফ্লেক্সিলোডসহ ডিস সরবরাহ ব্যবসার আয় দিয়েই চলে তার জীবন-জীবিকা।
তিনি জানান, বড় বড় নখের জন্য আগে ব্যবসায়িক কাজকর্মে অসুবিধা হলেও আর তেমন কোনো সমস্যা হয় না। নখগুলোর প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা রয়েছে তার। এ কারণে সে তার বেড়ে ওঠা নখ আর কোনোদিন কাটবেন না। কারণ নখগুলো তার গৌরবের বিষয় হয়ে গেছে। নখ আছে বলেই বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাকে দেখতে আসে আর তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে চতুর্দিকে। নখের জন্য তার ব্যাপক পরিচিতি হয়েছে। তবে নখগুলোকে টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করে যত্নসহকারে কাজ করতে হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, নখ বড় হলে নখের ভেতর ময়লাসহ রোগজীবাণু ঢুকে মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইসহ স্বাস্থ্যহানির ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য দীর্ঘদিন না কেটে নখ রাখা ঠিক না। বড় নখ উষ্ঠে গিয়ে আঙুলের ক্ষতি হতে পারে।
মন্তব্য করুন