

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা : গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সিলেটে নানা আড়ম্বরপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের সিলেট বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় এবং সিলেট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী।
এদিন দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা কালেক্টরেট মাঠ ও সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, ব্যাংক, এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এরআগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি নগরীর বন্দর পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে কালেক্টরেট মাঠে সমাপ্ত হয়। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে সাথে এবং জাতীয় ও দুদকের পতাকা উত্তোলনপূর্বক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের আলোচনা শুরু হয়।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন দুদক সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক রেভা হালদার। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাতে সচেষ্ট, কারণ সেসব দেশে দুর্নীতি কম থাকায় তারা উন্নত জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা পায়। এজন্য আমরাও চাই, আমাদের দেশেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতে হবে, যাতে নতুন প্রজন্মকে বাসযোগ্য দেশ ও টেকসই ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী বলেন, অপরের দুর্নীতি দেখার পূর্বে নিজেকে ও নিজের দপ্তরকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। তাহলেই এক সময় সিলেট দুর্নীতি প্রতিরোধে উদাহরণ হবে। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা সিলেট করে অনুসরণ করবে।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম ও সনাক সিলেটের সভাপতি সৈয়দা শিরিন আখতার প্রমুখ। পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, জনগণের হাতে পুলিশী সেবা সহজেই পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে জিনিয়া নামক একটি মোবাইল এ্যাপস চালু করা হয়েছে, এতে যে কোন দুর্নীতি বিষয়ক দেয়া হলে সেটির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম সিলেটকে বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তার নিজ দপ্তরে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে জানান, এটির চাবি একমাত্র তার নিকটই থাকবে, যে কোন নাগরিক নাম গোপন রেখে নির্বিঘ্নে এখানে অভিযোগ রাখতে পারবে। এখান থেকে তিনি দেখতে চান, সিলেটে কোন কোন অফিসে দুর্নীতি হয়? যারা দুর্নীতি করে, তিনি জনগণের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চান। তিনি আরও বলেন, আমি নিজে দুর্নীতি করি না, আমি কাউকে দুর্নীতি করতে দিব না।
সিলেট জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ ও এনজিও সংগঠনসমূহের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত অপর একটি আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস্ সা’দাৎ বলেন, পূণ্যভূমি সিলেটের নাগরিকবৃন্দ ও তরুণ প্রজন্মের নিকট এখনই সুযোগ সিলেটকে বাংলাদেশে প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এ উদ্দেশ্যে তিনি সিলেটের শ্রেনি-বয়স নির্বিশেষে সকল নাগরিককে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হতে এবং নিজ নিজ ভূমিকা পালনের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
সিলেট জেলা কালেক্টরেট মাঠে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শতাধিক সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত দপ্তর থেকে প্রায় দুই সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অসংখ্য নাগরিক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষে প্রধান ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন।
মন্তব্য করুন