

বড়দিনসহ টানা ছুটিতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের দর্শনার্থীরা প্রাচীন নিদর্শন উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। সুন্দরবনের কটকা, করমজল, হারবাড়িয়াসহ ভ্রমণ স্পটগুলোতে নির্মল পরিবেশে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করছেন পর্যটকরা।
এছাড়া বিশ্ব ঐতিহ্য ষাট গম্বুজ মসজিদ ও খানজাহান (র.) মাজারসহ বিভিন্ন ভ্রমণ স্পটগুলো আনন্দ সাথে উপভোগ করছেন পর্যটকরা। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম বেড়েছে কয়েকগুণ।
ছুটির দিনে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে শীত উপেক্ষা করে ভ্রমণপিপাসুদের উপচেপড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীদের সমাগম বেড়েছে কয়েকগুণ। শনিবার ছুটির দিন দর্শনার্থীদের সমাগম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হয় টুরিস্ট পুলিশ ও কর্তৃপক্ষকে।
সকাল থেকেই বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে হাজারো দর্শনার্থীরা ভিড় করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে, আবার কেউ বা পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রাচীন নিদর্শন দেখতে আসছেন। অভিভাবকরা সন্তানদের ষাটগম্বুজ সম্পর্কে জানাতে নিয়ে এসেছেন। শিশুরাও বিভিন্ন রাইডে উঠে আনন্দ করছেন।
টানা ছুটিতে অনেকে আবার প্রথমবারের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখে ও নামাজ পড়ে প্রশান্তি মনে করছেন। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটন স্পট দেখতে আসছেন। দিনের মধ্যে এসব স্পট ঘুরে গন্তব্যে ফিরে যেতে পারছেন। দিন দিন বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যাও।
ষাটগম্বুজ মসজিদ ক্যাম্পাসে রয়েছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইডস, প্রশস্ত সড়ক, নানা জাতের ফুল রয়েছে এখানে। অনেক দর্শনার্থীরা মসজিদ ও ফুলের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। ষাটগম্বুজ মসজিদসহ প্রাচীন এ ঐতিহ্য দেখে খুশি হয়েছেন দর্শনার্থীরা।
ঢাকা থেকে চাকরিজীবী নিয়ামুল নামের এক দর্শনার্থী বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া প্রায় সাড়ে ৬শ বছর আগে নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদ বাচ্চারা বইতে পড়েছে। প্রাচীনতম নিদর্শন দেখতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখতে আসছি। পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে অনেক ভালো লেগেছে। এখানে আবারও আসব।
সুন্দরবনে ঘুরতে আসা সাব্বির আহমেদ বলেন, অনেক দিন থেকে ইচ্ছা ছিল সুন্দরবন ঘুরতে আসব। বড়দিনসহ ৩ দিনের ছুটি পেয়ে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সুন্দরবনে চলে এলাম। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। বিভিন্ন রকম বন্যপ্রাণী দেখলাম। নিজ হাতে হরিণকে গাছের পাতা খাইয়েছি। কাছ থেকেই বানরের লাফালাফি দেখেছি। সুন্দরবনের এ বন্য পরিবেশ দেখে অনেক ভালো লাগছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের অন্যতম পর্যটন স্পট কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. মতিউর রহমান কালবেলাকে জানান, সুন্দরবনে পর্যটকের সমাগম বেড়েছে। প্রতিদিন লঞ্চ ও জাহাজে করে শত শত পর্যটক সুন্দরবনে আসছেন।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) একদিনে এ মৌসুমের সর্বোচ্চসংখ্যক ৩৮টি জাহাজে করে দুই সহস্রাধিক পর্যটক কটকা পর্যটন কেন্দ্রে এসেছেন।
পর্যটকরা কটকায় মায়াবী চিত্রল হরিণের ছোটাছুটি এবং নদী ও খালের চরে কুমিরের রোদ পোহানোর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। তা ছাড়া পর্যটকরা কটকার জামতলা সি-বিচে ঘোরাঘুরি এবং কেউ কেউ সাগরের পানিতে গোসল করছেন বলে কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. আজাদ কবীর কালবেলাকে বলেন, বড়দিনসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে সুন্দরবনে পর্যটকের ঢল নেমেছে। বিপুল দেশি-বিদেশি পর্যটক করমজলে ঘুরতে এসেছেন।
ট্যুর অপারেটর অব সুন্দরবন (টোয়াস) এর সেক্রেটারি নাজমুল আযম ডেভিট বলেন, সুন্দরবনে বর্তমানে পর্যটকের প্রবাহ বাড়লেও গত বছরের তুলনায় এ বছর কমসংখ্যক পর্যটক সুন্দরবনে যাচ্ছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করীম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে পর্যটকের যাতায়াত বেড়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য বিভাগীয় দপ্তর থেকে ২৫ ডিসেম্বর ১৮টি ট্যুর পারমিশন ইস্যু করা হয়েছে। ১৮টি পারমিশনে ৬১১ দেশি ও ১৩ বিদেশি পর্যটক সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়েছেন। সুন্দরবনে ভ্রমণের সময় পর্যটকদের গাইড সাপোর্টসহ সার্বিক নিরাপত্তায় বনরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে।
বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ কালবেলাকে বলেন, ৩ দিনের টানা ছুটিতে দর্শনীয় স্থান বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আগের তুলনায় কয়েকগুণ দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী বাড়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে ৩ দিনে প্রায় ১০ হাজার দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী এসেছেন।
মন্তব্য করুন