কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কাশিমপুর কারা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, ভোগান্তি চরমে

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ফটক। ছবি : সংগৃহীত
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ফটক। ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসার জন্য আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হলেও চিকিৎসক সংকট তীব্র থাকায় সুফল পাচ্ছে না বন্দিরা। সামান্য অসুখ-বিসুখে তাদের পাঠানো হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় ১৮ বছর আগে কারাগার পার্ট-২ এর অভ্যন্তরে গড়ে তোলা হয় ৩ তলা বিশিষ্ট ২০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। এখানে সেবার জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ, ভোগান্তি বেড়েছে বন্দিদের।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, মহিলা কারাগারসহ কাশিমপুরের ৪টি কারাগারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার এক দিনেই মৃত্যু হয় দুই বন্দির। কাশিমপুর কারাগারে সব মিলিয়ে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৬০০ জন। এর মধ্যে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ১ হাজার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ মোট বন্দি ২ হাজার ৪০০ জন, কারাগার-২-এ বন্দির সংখ্যা ২ হাজার ৪১৮ কারাগার-১-এ বন্দির সংখ্যা ১ হাজার ১৫০ ও কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দির সংখ্যা ৬২২। বন্দিরা সাধারণত যক্ষ্মা, টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হন। তবে যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন হৃদরোগে আক্রান্ত বন্দিরা।

নিয়মানুযায়ী, প্রতিটি কারাগারে একজন মনোরোগ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ওই চিকিৎসকও নেই কাশিমপুর কারাগারে। নেই নারী বন্দিদের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসক।

যেসব বন্দির অবস্থা গুরুতর হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নেওয়া হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যা কাশিমপুর কারাগার থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে। যানজটের কারণে অনেক সময় হাসপাতালটিতে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। অনেক সময় পথে মারা যান অসুস্থ বন্দি। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রয়েছে সমস্যা। সেখানে বন্দি রোগীদের জন্য নেই প্রিজন সেল বা প্রিজন ওয়ার্ড।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মাজহারুল ইসলাম বলেন, কারাগারে প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ময়নাতদন্ত করে দেখা যায়, বেশির ভাগই হৃদরোগে আক্রান্ত। কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে না পারলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে কাশিমপুর কারাগারে ২০০ শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। মোটামুটি সব ধরনের রোগের চিকিৎসা দিতে সক্ষম এই কারা হাসপাতালে উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, প্যাথলজি ল্যাবসহ সবকিছু রয়েছে। নেই শুধু নিয়মিত চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও নার্স। হাসপাতালটিতে একজন তত্ত্বাবধায়ক, দুজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ৯ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, পাঁচজন আবাসিক চিকিৎসক, ১৯ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা, দুজন সহকারী সার্জন, একজন প্যাথলজিস্ট, দুজন রেডিওলজিস্ট, দুজন ফার্মাসিস্ট, একজন ডিপ্লোমা নার্সসহ ৩৩টি পদও সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে এসব পদের জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

হাসপাতালে গাজীপুর সিভিল সার্জনের মাধ্যমে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাত্র দুজন চিকিৎসককে পালাক্রমে প্রেষণে পাঠানো হয়। গাজীপুর সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, দু-একজন চিকিৎসক কারাগারে সংযুক্ত আছেন। তারা প্রতিদিন সেখানে গিয়ে রোগী দেখেন। এ ছাড়া সপ্তাহের দুদিন দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাঠানো হয়।

কাশিমপুর কারাগার-২-এর জেল সুপার আমিরুল ইসলাম বলেন, কারা হাসপাতালে জনবল চাহিদা বিবেচনা করে কারা কর্তৃপক্ষ এক ব্যতিক্রমী সিন্ধান্ত নেয়। কারারক্ষীদের মধ্য থেকে যারা এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছেন, এমন ১২ জনকে নির্বাচন করে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ তাদের আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ থেকে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিংয়ে পড়াশোনা করায়। সেখান থেকে রেডিওলজিস্ট হিসেবে একজন, ফার্মাসিস্ট হিসেবে দুজন, ডিপ্লোমায় একজনসহ মোট চারটি পদে হাসপাতালে কাজ করেছেন কারারক্ষীরা।

কারা হাসপাতালের বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, দেশের অন্যান্য কারাগার থেকে রোগীদের হাসপাতালে নিতে পাঁচ-সাত মিনিট লাগলেও কাশিমপুর থেকে নিতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। ফলে অনেক সময় রোগীদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। কারা হাসপাতালে যদি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া যেত, তাহলে বন্দি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া অনেক সহজ হতো।

‘আমার এই কারাগারে বন্দি ১ হাজার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ মোট বন্দি ২ হাজার ৪০০ জন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত বন্দিদের পাঠাতে বিলম্ব হলে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। এ ছাড়া শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রিজন সেল না থাকায় অনেক রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানবপাচারবিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করেছে বাংলাদেশ : মার্কিন রিপোর্ট

নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা পড়া কীসের লক্ষণ?

ভারত নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি

‘বাংলাদেশ-চীনের জনগণের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে’

রাত ১টার মধ্যে ঝড়-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

চাঁদাবাজদের ছাড়িয়ে নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওপর হামলা

৭ অক্টোবর বছরের প্রথম সুপারমুন, বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে কি?

বিপিএল থেকে সরে দাঁড়াতে পারে ফরচুন বরিশাল

ইরানের হামলার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে চান ইসরায়েলি রাজনীতিক

১০

ইয়ারফোন কানে না দিলে কাজে মন বসে না? অজান্তেই যে ক্ষতি করছেন

১১

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে পাকিস্তানের বার্তা

১২

অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য চমক রেখে ভারতীয় দল ঘোষণা

১৩

যশোরে এক দিনে কাঁচা মরিচ কেজিতে বাড়ল ১৭০ টাকা

১৪

গাজায় হামলা বন্ধে ট্রাম্পের আহ্বানের পরই বোমা ফেলল ইসরায়েল

১৫

সচিবালয়ে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ

১৬

নির্বাচন বিলম্বিত হলে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হবে: সালাহউদ্দিন

১৭

ক্যারিবীয়দের উড়িয়ে তিন দিনেই ভারতের টেস্ট জয়

১৮

ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে মিলল ১২ কোটি টাকার সোনা-রুপার মুদ্রা

১৯

বিদ্যুৎস্পর্শে প্রাণ গেল জামায়াত নেতার

২০
X