সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক, পাবনা
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০২:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ

সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িতে জেলা প্রশাসক মু.আসাদুজ্জামান। ছবি : কালবেলা
সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িতে জেলা প্রশাসক মু.আসাদুজ্জামান। ছবি : কালবেলা

উপমহাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান শহরের হেমসাগর লেনে অবস্থিত সুচিত্রা সেনের বাড়ি পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরীফ আহম্মেদ, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য এবিএম ফজলুর রহমান, এনডিসি মোহাম্মহদ আবুল হাসানাত, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু, সহকারী কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম, পরিষদের নির্বাহী সদস্য মাজাহরুল ইসলাম ও সদস্য আবুল কালাম আজাদ।

সুচিত্রা সেনের বাড়িতে কীভাবে সংগ্রহশালা হিসেবে আরও সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সরকারের কাছে সংগ্রহশালা করার যে প্রস্তাব রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হয়। বাড়িটিকে ঠিক রেখে বর্তমানে সংস্কারের জন্য এনডিসি মোহাম্মহদ আবুল হাছানাত এবং পরিষদের পক্ষ থেকে ড. নরেশ মধুকে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, প্রতিদিনই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য দর্শানার্থী বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। বাড়িটির প্রতি সংস্কৃতিপ্রেমীদের গভীর ভালোবাসা ও আবেগ রয়েছে। সুতরাং বাড়িটিকে সুন্দর দর্শনীয় রাখার প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক মহোদয় বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন। এ সময় ড. নরেশ মধু সুচিত্রা সেনকন্যা মুনমুন সেনের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের মতাবিনিময় করার সংযোগ স্থাপন করে দেন। পরস্পর মতবিনিময় করেন এবং জেলা প্রশাসক মুনমুন সেনকে পাবনায় তার পৈতৃক বাড়ি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা জায়, ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার হেমসাগর লেনের এ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সুচিত্রা সেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে সুচিত্রা ছিলেন পঞ্চম। বাড়ির ছোটরা ডাকতেন রাঙাদি বলে। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন রমা। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী নীতীশ রায় তা বদলে রাখেন সুচিত্রা। কিন্তু পাবনার মহাকালী পাঠশালায় খাতায় কলমে তার নাম ছিল কৃষ্ণা দাশগুপ্ত।

পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষ করে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগী ও মেধাবী না থাকলেও গান, নাটক, অভিনয় প্রিয় ও পছন্দের ছিল সুচিত্রা সেনের। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান।

উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সুচিত্রা সেন ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কয়েক মাস আগে বাবা করুণাময় দাসগুপ্ত পাবনার বাড়িঘর, চাকরি সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারত চলে যান। কলকাতা যাওয়ার দুই বছর পরেই সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে রমা দাশগুপ্তের বিয়ে হয়। আর বিয়ের পর স্বামীর পদবি যোগ করে হয়ে যান রমা সেন। সুচিত্রা সেনের স্বামী দিবানাথ সেনের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ছিল বাংলাদেশেরই দক্ষিণ অঞ্চলে।

বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন।

‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই একজন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় এ ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি মুক্তির সময় রমা নাম বদলে নাম দেন ‘সুচিত্রা সেন’।

সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে সিনেমা দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন।

১৯৬৩ সালে সাতপাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তাকে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করে। ১৯৫৫ সালে তিনি দেবদাস ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা

খালেদা জিয়ার হাসপাতালে ভর্তির কারণ জানালেন চিকিৎসক

ফাইনালে সুপার ওভারে হেরে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

বিদেশিদের হাতে বন্দরের ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়া অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত : লায়ন ফারুক

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় / পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় মেজর সিনহাকে

কর্মী নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশকে সুখবর দিল সৌদি আরব

সোনালী ব্যাংকে ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ দিয়ে প্রতারণা

জাল টাকার নোটসহ আটক ২

রাজশাহীতে ৬ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

এসএ সিদ্দিক সাজুকে বিএনপির শোকজ

১০

বিএনপি নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বিতা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ : সেলিমা রহমান

১১

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমী গ্রেপ্তার

১২

রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত : রিজভী

১৩

যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় হামলা, কমান্ডারকে নিহতের দাবি ইসরায়েলের

১৪

রাবির দুই শিক্ষককে বিভাগীয় সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি

১৫

এ দেশ সবার, কারো একার না : সালাউদ্দিন বাবু

১৬

‘স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় না গিয়ে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে ফিরে যান’

১৭

ফাইনাল জিততে বাংলাদেশের দরকার ১২৬ রান

১৮

শাহজাহানের বক্তব্য সমর্থন করে না জামায়াত

১৯

আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’, নামের অর্থ জানুন

২০
X