কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

তিস্তায় চর জেগে ওঠায় বাড়ছে নারী-পুরুষের কাজের সুযোগ

কুড়িগ্রামে তিস্তার জেগে ওঠা চরে কাজ করছেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। ছবি : কালবেলা
কুড়িগ্রামে তিস্তার জেগে ওঠা চরে কাজ করছেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। ছবি : কালবেলা

তিস্তা চরাঞ্চলে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য কৃষিকাজ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে, কয়েক মাস আগেও কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীতে ছিল অথৈই পানি। এখন সেই পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে চর। যেদিকে দু-চোখ যায় শুধু ধু-ধু বালুচর। এ বালুচরে স্থানীয় কৃষকরা আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মিষ্টিকুমড়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ব্যাপক পরিসরে তিস্তার চরে চাষাবাদ হওয়ার ফলে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক পুরুষ ও নারী শ্রমিকের। কেননা কৃষি সেক্টর ছাড়া, তেমন কোনো কাজের সুযোগ নেই এ অঞ্চলে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এলাকার অনেকের জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখে। কৃষিতে নারী ও পুরুষ উভয়ের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

কৃষকরা বলছেন, এ বছর বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদাপানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

জানা গেছে, তিস্তা নদীটি নীলফামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লালমনিরহাট হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি কুড়িগ্রাম অংশে পড়েছে ৪০ কিলোমিটার।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ ও ১৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ হয়েছে। তবে এখনো পেঁয়াজ ও রসুনের পরিসংখ্যান হাতে পায়নি কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ জানায়, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন চরাঞ্চলের ৪৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার আবাদ করা হয়ে থাকে।

উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের চাপড়ারপাড় এলাকার কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, আমার তিস্তার চরে এক একর জমি আছে। সেই জমিতে প্রতি বছর বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেই চলি। চরের এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হবে ৩০-৩৫ মণ। আমাদের এখানকার অনেকে চরে বিভিন্ন আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

একই উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গড়াইপিয়ার এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি ১০ একর চরে জমি লিজ নিয়েছি। সেখানে আলু, পেঁয়াজ ও রসুন রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। চরের জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ করেই আসলে জীবিকা নির্বাহ করি আমি।

তিস্তার চরে কাজ করতে এসেছেন আলেয়া বেগম (৫০) নামের এক নারী। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করলে মজুরি পাই ২০০ টাকা। পুরুষরা পান ৪০০ টাকা। মজুরিটা একটু বেশি হলে ভালো হতো। তারপরেও নিয়মিত কাজ থাকার কারণে সংসারে একটু অভাব কমেছে। এ রকম কাজ সারা বছর থাকলে, আমার মতো পরিবারগুলোর জন্য অনেক ভালো হতো।

ঘোড়ার গাড়ি চালক রহিম মিয়া বলেন, পুরোদমে কাজ চলছে তিস্তার চরে। জমিতে আমরা বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করছি। সেখানে তো অন্য কোনো গাড়ি যায় না। তাই ঘোড়ার গাড়ি ভরসা। আমার কাজেরও ব্যস্থতা বেরেছে। নিয়মিত এমন কাজ থাকলে,আয়টা ভালো হয়।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমাদের কৃষকরা শীতকালীন আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ও মিষ্টিকুমড়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে আগাম অনেক শাকসবজিও পাওয়া যায়। যেহেতু কৃষকরা দাম ভালো পায়, তাই একটু বেশি পরিসরে আবাদে করার জন্য উৎসাহী হচ্ছেন। আমরা তাদেরকে সবসময় পরামর্শ দিয়ে আসছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ৬ সেপ্টেম্বর

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

১০

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

১১

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

১২

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

১৩

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

১৪

ডাকসু নির্বাচনে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন

১৫

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

১৬

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১৭

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

১৮

পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১৯

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর

২০
X