

প্রতিটি ঘরেই আজকাল একই দৃশ্য; বাবা-মা কাজ থেকে ফিরছেন ক্লান্ত হয়ে, আর ছেলেটা তখনো ফোন হাতে গেম খেলছে। আর ধুলো জমেছে পড়ার টেবিল, বই-পত্রের ওপর। বাবা-মায়ের প্রায়ই দুশ্চিন্তা হয় ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গ্রাম-শহর সবখানে কমবেশি একই অভিজ্ঞতা।
কিন্তু একথা ভুললে চলে না, প্রতিটি বাচ্চার ভেতরেই থাকে এক অসম্ভব সুন্দর সম্ভাবনা। যেটার একটু যত্ন, একটু শৃঙ্খলা আর একটু সঠিক দিকনির্দেশনা পেলেই বদলে যেতে পারে তার জীবন।
এ জন্যই চ্যাম্পিয়ন অ্যাকাডেমি অনেক বাবা-মায়ের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে। সার্বক্ষণিক আবাসিক শিক্ষকরা দিনরাত ছেলেদের পাশে থেকে, খাওয়া, ঘুম, পড়া, খেলাধুলা সব কিছুই তদারকি করেন নিবিড়ভাবে। সেই সঙ্গে কোরআন-হাদিস ও নৈতিকতার বিশেষ ক্লাস, বিজ্ঞান ক্লাব, রোবটিক্স, বিতর্ক, লেখালিখিসহ নানা দিক থেকে প্রতিটি ছাত্রের প্রতিভা বিকাশের নিবিড় চেষ্টা চলছে।
সবমিলে প্রায় শখানেক প্রাণবন্ত কিশোর গড়ে উঠছে সুনাগরিক হিসেবে, চ্যাম্পিয়ন একাডেমিতে। ঢাকার মূল শহরের পাশেই উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের একটি পূর্ণাঙ্গ ভবন নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দারুণ এ আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশের বুয়েট থেকে পাস করে, পরবর্তীতে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা একদল স্বপ্নবাজ মানুষ ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন। তাদের মূল চিন্তা ছিল, শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক বিজ্ঞান, শারীরিক সুস্থতা ও নৈতিক বিকাশের একটা সম্পূর্ণ প্যাকেজ যেন একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েরাও যেন তাদের ছেলেদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করার সুযোগ পান, সে ব্যবস্থা করা।
তারই অংশ হিসেবে তারা শুরু করেছিলেন শুধু ছেলেদের জন্য সম্পূর্ণ আবাসিক স্কুল চ্যাম্পিয়ন একাডেমি। শুরু থেকেই তারা দরিদ্র-এতিম ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থাও করেছেন। শুরুর পর মাত্র চার বছরের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন একাডেমি এখন সচেতন পিতামাতার জন্য এক নির্ভরতার নাম। এখানে শিক্ষা মানে শুধু বই না— শিক্ষা মানে মানুষ হওয়া।
চ্যাম্পিয়ন একাডেমিতে জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী ক্লাস হয় ঠিকই। তবে ক্লাস টাইমের বাইরেও তারা করে আরও অনেক কিছু। নিয়মিত কোরআন ক্লাস, নৈতিক প্রশিক্ষণ, আচরণগত শিক্ষা— সব মিলিয়ে প্রতিটি ছেলেকে গড়ে তোলা হয় আদর্শ মানুষ আর সুনাগরিক হওয়ার দীক্ষা দিয়ে।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. আহসান হাবীব বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা এমনভাবে তৈরি করি, যেন তারা নিজ নিজ অ্যাকাডেমিক ও প্রফেশনাল ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি মানুষ হিসেবেও চ্যাম্পিয়ন হয়।
প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান বলেন, এখানে আইইউটি, এমআইএসটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগরসহ শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশকরা মেধাবীরা শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি প্রতিটি শিক্ষার্থীর নৈতিক বিকাশের দিকে। ফলে তাদের আচরণে সুস্পষ্ট পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব ও শারীরিক অবস্থার নিয়মিত চেক আপ করে এবং নিয়মিত খাবারের মান যাচাই করে আবাসিক প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ মান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে মেধা বিকাশের জন্য রয়েছে নানা রকম উদ্যোগ। ক্লাস টাইমের বাইরে ছেলেরা এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রত্যেকটা ছাত্রের আগ্রহ বিবেচনায় একেকটি কাজে যুক্ত করা হয়। কেউ কেউ বিজ্ঞান পড়তে ভালোবাসে, কেউ গণিত, কেউ রোবটিক্স, আবার কারও ভালো লাগে সঙ্গীত কিংবা ক্যালিগ্রাফি। কেউ ভাষা শিখতে ও লিখতে পছন্দ করে; চ্যাম্পিয়ন একাডেমি এসব বিষয়ে ছাত্রদের লুকিয়ে থাকা প্রতিভার উন্মোচন করে এবং সেটাকে যত্নসহকারে বিকশিত করার জন্য কাজ করছে।
স্কুলের আবাসিক কোঅর্ডিনেটর শফিকুল ইসলাম জানান, যেহেতু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেলেরা এখানে থাকে। বাবা-মা থেকে দূরে থাকার কারণে তারা যেন হতাশ না হয়, সেজন্য তাদেরকে সারাক্ষণ প্রাণোচ্ছল রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করি। তারা অনেকে ছবি আঁকে, কেউ প্রোগ্রামিং শেখে, কেউ বাগান করে। আমরা সবসময় এগুলোর তদারকি করে থাকি। তাছাড়া প্রতিটি ছেলেকে নিয়মিত তার বাবা-মার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার জন্য ব্যবস্থা করে থাকি।
ব্যতিক্রম এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে নতুন ছাত্র ভর্তি করা হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যে কোনো ক্লাসে ভর্তি নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন