

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেল প্রেমিসিসে যখন পৌঁছালাম, সুনসান নীরবতা চারপাশজুড়ে। কিন্তু হোটেল লবিতে ঢুকতেই চোখে পড়ল ভিন্ন চিত্র। লবিজুড়ে উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন জায়গায় তিন-চারজনের দল বসে কফি কাপে চুমুকের সঙ্গে তুমুল আড্ডা জমিয়ে তুলুছে। বাইরের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে কুয়াশার প্রলেপ। মৃদুমন্দ শীতল সমীরণ। আড্ডার যুৎসই পরিবেশ সম্ভবত একেই বলে। অথচ আমার দলে আমি একা।
লবির মাঝখানে বড় একটা সোফা খালি দেখে এগিয়ে গিয়ে বসলাম। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে পরিচিত কাউকে পেলাম না। অগত্যা পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করলাম। স্ক্রলিং করছি, হঠাৎ কে যেন ‘মিলটন ভাই’ বলে ডেকে উঠল। ফিরে তাকাতেই দেখি জনি ভাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা। অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র মানুষ। সেই ২০১০ থেকে পরিচয়। জানতে চাইলেন, এখানে কেন এসেছি?
হামজা...। বাক্য শেষ করার আগেই তিনি বললেন, বুঝেছি, আজকে অনেকেই এসেছে হামজার সঙ্গে দেখা করতে।
আমি বললাম, হ্যাঁ, আমিও তাদেরই একজন। তবে আমি একজন ক্ষুদে ফুটবল ভক্তের আবদার মেটানোর জন্য হামজার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
জনি ভাই সেই ক্ষুদে ভক্তকে খুঁজলেন আশেপাশে। আমি বললাম, এখনো এসে পৌঁছাননি। ভক্তের পরিচয় দিলাম। পরিচয় পেয়ে খুশি হলেন। নিজে থেকেই জানালেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল এই হোটেলেই উঠেছে। এ কারণে তাকেও এখানে থাকতে হচ্ছে।
আমি অবশ্য জানতাম, একদিন পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে। মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা হবে। তবে ওই মুহূর্তে জাতীয় দলের বিষয়টি মাথায় ছিল না। যাই হোক, হাত মিলিয়ে জনি ভাই আমাকে বিদায় জানিয়ে নিজের পথে চলে গেলেন।
হামজা আমাদের দেখা করার জন্য সময় দিয়েছেন রাত নয়টায়। এখনো প্রায় ত্রিশ মিনিট হাতে আছে। অবসরটুকুতে কী করব ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, মিরাজ তো এই টেস্ট ম্যাচে দলে আছে। শুধু দলে আছে বললে কম হবে, মিরাজ টেস্ট দলের অধিনায়ক। ওকে নক করে দেখি ফ্রি আছে কিনা। বেশ কিছুদিন কথা হয়নি আমাদের। যেই ভাবা সেই কাজ। মিরাজকে টেক্সট পাঠালাম- কেমন আছো? মিরাজ সঙ্গে সঙ্গে ফোন ব্যাক করল। দু’এক কথা বলার পর মিরাজ জানতে চাইল, আপনি কোথায় মিলটন ভাই? বললাম, সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে। তাই নাকি! এখানে কী? কোনো কাজে এসেছেন? কত সময় থাকবেন? মিরাজ এমনই- সহজ, সরল, বন্ধুবৎসল। এবং অবশ্যই বিনয়ী। বয়স কম হলেও সে ম্যাচিউরড। মিরাজের সঙ্গে আমার সখ্য সম্ভবত ২০১৫ সাল থেকে। তখন মিরাজ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যাই হোক, আমি বললাম ঘণ্টাখানেক আছি।
দাঁড়ান, আমি আসতিছি বলেই মিরাজ ফোন কেটে দিল। আগেই বলেছি মিরাজ সহজ-সরল ছেলে। আমরা দুজনই এক এলাকার- খুলনার। যে কারণে আমাদের দুজনের কথোপকথনের সময় এলাকার টানে মজা করে কথা বলি।
মিরাজ কল কেটে দিতেই ক্ষুদে ভক্তের কল ঢুকল আমার ফোনে। তার গাড়ি হোটেলের গেইট দিয়ে ঢুকছে। আমি লবির এন্ট্রি গেইটের বাইরে এসে দাঁড়াতেই গাড়ি এসে থামল। গাড়ি দুটি। সামনের গাড়ি থেকে দু’তিনজন নেমে দ্রুত পেছনের গাড়ির দু’পাশে গিয়ে দাঁড়ার। তারপর ব্যস্ত হাতে গেইট খুলল। গাড়ির দু’পাশ থেকে দুজন নেমে আসলেন। তাদেরই একজন ক্ষুদে ফুটবল ভক্ত। নাম রাফসান রাফিদ। সঙ্গে এসেছেন বড় বোন নিশাত তাসনিম সুচি। বিশেষ কারণে তাদের পরিচয় প্রকাশ করছি না। সামনের গাড়ি থেকে তিনজন নেমেছিলেন। তারা আসলে সিকিউরিটির প্রয়োজনেই এসেছেন। বলা হয়নি ওই দিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় বেশ গোলমেলে অবস্থা বিরাজ করছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মামলার রায় হয়েছিল সেদিন। সম্মানিত অতিথিগণ এমন পরিস্থিতিতে যথেষ্ট দূর থেকে এসেছেন। আমি রিসিভ করে তাদের নিয়ে লবির আগের সোফাটায় বসালাম। মিরাজের কথা মনে পড়তেই লবির উল্টো পথে তাকিয়ে দেখি মিরাজ হেঁটে আসছে। কাছে এসে সালাম দিলো। আমি মিরাজকে অতিথি দুজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবার আন্তরিকতায় আলো আধারি পরিবেশ এক অন্যরূপ পেলো। মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ গত আট বছর যে পরিবারের সাথে একান্তভাবে মিশেছে এই অতিথি সেই পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেও মিরাজ পরিচয়ের আগ পর্যন্ত চিনতে পারেনি। বলেই ফেলি, অতিথি দুজন হলেন দেশের ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পের সবচেয়ে বড় দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এবং ওয়ালটন মাইক্রো টেক কর্পোরেশনের সিইও নিশাত তাসনিম শুচি। অপরজন ছোট ভাই রাফসান রাফিদ। বয়স এগারো বা বারো হবে। মূলত ক্ষুদে এই ভক্তের জন্যই আজকের আয়োজন।
গল্পে গল্পে নয়টা বেজে গেছে। মোবাইলের ভাইব্রেশানে পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখি ফাহাদ করিম ভাইয়ের ফোন। ফাহাদ ভাই বাফুফের ভাইস প্রেসিডেন্ট। রিসিভ করতেই জানতে চাইলেন, আমি এসেছি কিনা। বললাম, আমি লবিতে আছি। তিনি বললেন, আমিও লবিতে। ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম ফাহাদ ভাইকে। দূর থেকে হেঁটে এদিকেই আসছেন। সাথে বাফুফের প্রেসিডেন্ট তাবিথ আওয়াল। আমি এগিয়ে গেলাম। দুজনকে সালাম দিলাম। ফাহাদ ভাই জানতে চাইলেন আমার গেস্ট পৌঁছেছেন কিনা। আমি সোফা দেখিয়ে বললাম, তারা এসে বসে আছেন।
বাফুফের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট এত বড় মানুষ হয়েও এতটা বিনয়ী কথা না বলরে কেউ বুঝবে না, জানবেও না। ফাহাদ ভাই এগিয়ে গিয়ে আমার গেস্টয়ের কুশলাদি জানতে চাইলেন। তাবিথ ভাইয়ের সঙ্গে আমি তাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। আন্তরিকতার উপভোগ্য একটা মুহূর্ত তৈরি হলো। তাবিথ ভাই বললেন, আমি হামজাকে বলে এসেছি, আপনাদের সময় দেবেন। আর ফাহাদ ভাই আমাকে বললেন, আপনি তো মহসিনকে চেনেন। ও এক্ষুনি আপনাদের নিতে আসবে। বলেই দুজন বিদায় নিলেন।
তারা যেতে না যেতেই মহসিন ভাইয়ের ফোন। ফোনে কথা বলতে বলতেই লবিতে আমাকে খুঁজে নিলেন। তার সঙ্গে দুজন ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা। আমাদের সঙ্গে দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলেন। হামজা চৌধুরীর বাবা মা। সালাম এবং কুশলাদি বিনিময় করলাম। অমায়িক এবং দারুণ হাসিখুশি মানুষ দুজনই। এত বড় তারকা ফুটবলারের বাবা মা হয়েও বিন্দু পরিমাণ অহমিকা তো নেই-ই, বরং আছে বাংলাদেশিদের প্রতি পাহাড়সম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ। সেই শ্রদ্ধার প্রকাশ কথা বলার সময় অনেকবারই পেয়েছি। এবং মুগ্ধ হয়েছি।
আমি মিরাজের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। হামজার বাবা মিরাজকে দেখেই চিনলেন। তবে মা চিনলেন না। না চিনলেও মিরাজের নাম শুনেছেন বলে জানালেন। এরপর আমার সঙ্গের দুজনকে পরিচয় করিয়ে দিতেই হামজার বাবা দারুণ অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন।
হামজার মা মহসিন ভাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা হামজার গেস্ট কিনা? মহসিন ভাই জি বলতেই তিনি তাহলে চলেন চলেন বলে আমাদের উপরের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত করলেন। আমার ক্ষুদে ফুটবল ভক্তের চেহারায় তখন খুশির ঝিলিক! এমনিতেই ও দেখতে মিষ্টি। তার উপর হামজার সাথে দেখা হবে ভাবতেই সে মহা খুশি।
মিরাজ আমাকে বলল, ভাই, আমি না যাই, আপনারা ঘুরে আসেন। আমি মিরাজকে তাড়া দিলাম, যেতেই হবে। মিরাজকে বললাম, তোমাদের দুই মেগাস্টারকে একসাথে দেখব। চলো। বলে এগিয়ে চললাম।
লিফটের কাছে এসে দাঁড়াতেই ওয়ালটনের চীফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) জোহেব আহমেদের ফোন। তারও এখানে থাকার কথা। সন্ধ্যায় আমি তাকে ফোন করেছিলাম। আমি জানতে চাইলাম কত দূর? তিনি বললেন, হোটেলের কাছেই। আমি তাকে বারো তলায় চলে আসতে বলে ফোন রেখে দিলাম। হামজার রুম বারো তলায়। আমরা লিফটে উঠলাম একসঙ্গে। লিফটেই মিরাজ জানালো ওর রুম দশ তলায়। লিফট থেকে হামজার ফ্লোরে নেমে আমরা করিডোর ধরে এগিয়ে যেতে থাকলাম। সামনে হামজার বাবা মা। পেছনে মহসিন ভাইয়ের সাথে আমরা চারজন। করিডরের মাঝামাঝি একটি রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা। মহসিন ভাই ডোর লক খুললেন। আন্টি আমাদের নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। একটা স্যুইটে উঠেছে হামজা। ওর থাকার রুমের সাথে আরো একটি কানেকটিং রুম। আমরা এই রুমে। পুরু কার্পেট মোড়ানো কক্ষে একটি সোফা, একটি ডিভান আর সোফা, কয়েকটি চেয়ার। আমরা সবাই বসলাম। মহসিন ভাই জানালেন হামজা কিছুক্ষণ আগে প্র্যাকটিস সেড়ে হোটেলে ফিরেছেন। মিনিট দশেক সময় চেয়েছেন। এই অবসরে আমাদের সঙ্গে আন্টি (হামজার মা) গল্পজুড়ে দিলেন। গল্পে গল্পে আমার অতিথিদের সঙ্গে তার দারুণ সখ্য তৈরি হয়ে গেছে। এর মধ্যেই জোহেব ভাই এসে দরজায় দাঁড়াতেই আমি তাকে ভেতরে নিয়ে আসলাম। তিনি সবার সঙ্গে পরিচিত হলেন। গল্পে গল্পে আড্ডা জমে উঠল। আমার সঙ্গে আসা অতিথির সঙ্গে আন্টির গল্প চলছে একদিকে। অন্যদিকে মিরাজ, জোহেব আহমেদ, আমি আর হামজার বাবা। আংকেল মিরাজের কাঁধে হাত রেখে আন্তরিকতার সাথে কথা বলছেন। জোহেব ভাই মোবাইল ঘেঁটে কয়েক মাস আগের ছবি বের করে দেখালেন। হামজার সাথে তোলা নিজের ছবি। সেবার সিলেট থেকে একই উড়ানে ঢাকা ফিরেছিলেন। আমি তাদের স্মৃতিচারণ উপভোগ করছি। রুমজুড়ে গমগমে ভাব বিরাজমান। মহসিন ভাই পাশের দরজা খুলে এ রুমে ঢুকলেন। জানালেন হামজা প্রায় রেডি।
হঠাৎ করেই রুমজুড়ে স্তব্ধতা নেমে এলো। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই হামজা প্রবেশ করলেন। হাফ প্যান্ট এবং স্পোর্টস টি শার্ট পরা। লেস্তারসিটির ঝাঁকড়া চুলের বিখ্যাত খেলোয়াড়, কোটি বাংলাদেশির প্রাণের ফুটবলার হামজা চৌধুরী। হামজাই সালাম দিলেন সবাইকে। আমরা আসন ছেড়ে করমর্দন করলাম সবাই। মিরাজ একটু পেছন দিকে থাকায় আমি সামনে ডেকে আনলাম। হামজার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে যাব, তার আগেই মিরাজকে জড়িয়ে ধরলেন হামজা। হবিগঞ্জের আঞ্চলিক টানে বললেন, মিরাজ ভাই কেমন আছেন? মিরাজ হয়তো অবাক হয়েছে একটু। আমাদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট রাফসান রাফিদ। হামজাকে বললাম, ওর জন্যই আজ আপনার সময় নষ্ট করতে এসেছি আমরা। হামজা একগাল হেসে খুবই স্বাভাবিকভাবে বললেন, না না, কি যে বলেন! বলেই রাফিদকে কাছে নিলেন। ওর কথা আমাকে বলেছে তাবিথ ভাই, ফাহাদ ভাই। আমি মুহূর্তটি ফ্রেমবন্দী করতে মোবাইলে ছবি তুলতে লাগলাম। হামজা, রাফিদের ছোট ছোট কথপোকথন চলমান। রাফিদ ফুটবল খেলে কিনা, কোথায় খেলে ইত্যাদি। রাফিদও স্বাভাবিকভাবে ছোট করে উত্তর দিচ্ছে। হামজার সাথে দেখা করার জন্য ও খুব অস্থির ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় রাফিদকে খুব আড়ষ্ট লাগছিল। হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্য তার স্বীকারোক্তি জেনেছিলাম- লজ্জায় কথা বলতে পারেনি ঠিকমত। আরো একজন অতিথি কিন্তু সেদিন ছিলেন আমাদের সঙ্গে। দেশের সেদিনের পরিস্থিতিটে সিকিউরিটি দুজন এলেও গার্ডিয়ান হিসেবে রাফিদের সঙ্গে নিশাত তাসনিম শুচি এসেছিলেন। সে কথা আগেই বলেছি। তিনি সম্প্রতি বর্ষসেরা সিইও হিসেবে সি-স্যুট অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ পেয়েছেন। তার সঙ্গেও হামজার কুশল বিনিময়, কথোপকথন হলো। একসাথে সবাইকে রেসপন্স করছে হামজা। একবার মিরাজের সাথে। একবার রাফিদ। আবার কখনো আমাদের সাথে। সিএমও সাহেব অবশ্য বেশিরভাগ সময় হামজার বাবার সাথে গল্পে মজে ছিলেন। রাফিদ একটা ব্যাগে জার্সি নিয়ে এসেছে অটোগ্রাফ নেবে বলে। আমি ব্যাগ থেকে জার্সি এবং অটোগ্রাফ পেন বের করে দিলাম। সামনে ছোট্ট টেবিলের উপরে জার্সি রেখে রাফিদকে নামের বানান জিজ্ঞাসা করলেন হামজা চৌধুরী। নাম লিখে অটোগ্রাফ দিলেন। তারপর অতি আদরের সাথে কলমের মুখ বন্ধ করে রাফিদকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর আমরা একে একে সবাই ছবি তুললাম প্রিয় ফুটবলারের সঙ্গে। আরও কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল আমাদের হামজা, এবং তার বাবা-মায়ের সঙ্গে।
এবার বিদায় নেয়ার পালা। আন্টি দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন আমাদের। হঠাৎ দেখি মিরাজ নেই। ভেতরে উঁকি দিলাম। দেখি মিরাজের কাঁধে হাত রেখে হামজা গল্প করছেন। মনে হলো পুরনো বন্ধুর মিলন। মিরাজ ওর মোবাইল এগিয়ে দিয়ে আমাকে বলল, ভাইয়া ছবি তুলে দেন। দিলাম। নিজেও দুজনের সাথে সেলফি তুললাম। শীর্ষ দুজন ক্রিকেটার এবং ফুটবলারকে একসাথে আর কোনো দিন পাব না জানি। তাই সুযোগ নিলাম। হা হা হা হা।
হামজা মিরাজকে জিজ্ঞাসা করলো ইউকে কবে যাবে, কবে খেলা আছে? মিরাজ জানাল সামনের বছর। হামজা কড়া ভাষায় বলে দিলেন- তুমি কিন্তু আমার বাসায় উঠবে, হোটেলে উঠবে না। এরপর মিরাজের কাছে মোবাইল নম্বর চেয়ে নিল, দুজন দুজনের ফোন নম্বর সেইভ করলো একসাথে। মিরাজকে বলল, তুমি থাকো, তুমি তো এই হোটেলেই আছো। আগামীকাল সকালে ন্যাশনাল টিমের প্র্যাকটিস আছে। কাল সন্ধ্যায় ফ্রি থাকব জানাল মিরাজ। হামজা মনে করিয়ে দিলেন কাল ইন্ডিয়ার সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচ। ওওও ইয়েস বলে মাথা নাড়ল মিরাজ। বলল, তাহলে ম্যাচ শেষ করে হোটেলে ফিরে আপনি ফোন দিয়েন। হামজা জানতে চাইল তাহলে বারোটা? অসুবিধা হবে? মানে রাত বারোটা। মিরাজ হেসে জানাল- যত রাত হোক সমস্যা নেই। এরপর দুজনেরই হাসি।
এবার শেষবারের মতো হাত মিলিয়ে মিরাজ আর আমি বিদায় নিলাম হামজার কাছ থেকে। অনিন্দ্য সুন্দর ও উপভোগ্য এক সন্ধ্যা কাটল হামজার স্যুইটে।
লেখক : মো: রবিউল ইসলাম মিলটন এডিশনাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মার্কেটিং এন্ড কমিউনিকেশন ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি।
মন্তব্য করুন