হেমন্তের ভোরের শিশির ভেজা ঘাস জানান দিচ্ছে নবান্নের উপস্থিতি। অগ্রহায়ণে মাঠে দুলছে সোনালি পাকা ধান। তাইতো কৃষক ছুটছে কাস্তে হাতে পাকা ধান কাটতে। এদিকে মৃদু শীত আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে পিঠাপুলির। কবি, সাহিত্যিকদের ভাষায় যেটাকে বলে নবান্ন। নতুন ধানের পিঠা যেন এক অভিন্ন স্বাদের অনুভূতি। সমাজে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ওরা বুঝে না নবান্ন কী। কিন্তু শীতের আমেজ বলে দিচ্ছে পিঠাপুলির আয়োজন করতে হবে। দাওয়াত করতে হবে মেয়ে, জামাইসহ আত্মীয়স্বজনদের। কিন্তু নিম্নবিত্তদের নেই নিজস্ব ধানের জমি। কৃষক ধান কেটে নিয়ে গেলে ক্ষেতে পরে থাকা ধান ও ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে নতুন ধান সংগ্রহ করতে দেখা যায় হতদরিদ্র মানুষগুলোকে। উদ্দেশ্য নতুন ধানের চালে শীতের পিঠা তৈরি করতে হবে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই নতুন ধান জোগাড় করতে দেখা যায় শিশু ও মহিলাদের। এদের অধিকাংশই নিম্নআয়ের মানুষ। রামপুর চতিলা গ্রামে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এভাবে দৈনিক তারা ২-৩ কেজি ধান সংগ্রহ করেন। ধান পাকলে ৭ দিনের মধ্যে মাঠের ধান কাটা শেষ হয়। এরমধ্যেই তারা ১৫-২০ কেজি ধান সংগ্রহ করতে পারেন। ধান সংগ্রহের পর মাটি ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হয়, সেই ধান মেশিনে ভাঙিয়ে চালের গুঁড়ায় বানান ভাপা, মুঠো, দুধ পুলি, দুধ চিতইসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা। এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভানার প্রচলন থাকলেও এখন তা বিলুপ্ত।
আছিয়া খাতুন জানান, শীত এসেছে মেয়ের জামাইকে পিঠা খাওনের দাওয়াত দিতে হবে। আমাগো আবাদি ক্ষেত নাই। এভাবে যত ধান পাইছি পরিবারের সবাই মিলে পিঠা খেতে পারব।
জবেদা বেগম বলেন, আমরা ছোটবেলায় পাড়ার সকল মেয়েরা দল বেঁধে এভাবে ধান কুড়াতাম। এখনকার মেয়েরা চড়ায় (মাঠে) আসে না। আগের মতো সেই আনন্দ এখন আর নেই। তিন মেয়ে-জামাই আছে ও নাতি নাতনিদের পিঠা খাওয়ানোর জন্য ধান কুড়াই।
জমিরন বেওয়া বলেন, আগে আমাদের ধানের আবাদ আছিল, সেই ধানের পিঠা অনেক স্বাদ আছিল। এখন আগের মতো পানি হয় না, তাই আমাদের ধানের আবাদ নাই। এখন পাইজাম ও গাইঞ্জা ধানের আবাদ হয়। এগুলোই কুড়াচ্ছি পিঠা বানামু।
মন্তব্য করুন