দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীর জন্য প্রথমবার ডাক পেয়েছেন রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভা থেকে ডাক পাওয়র বিষয়টি জিল্লুল হাকিম নিজেই মোবাইল ফোনে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন। তবে ঠিক কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটি তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
জিল্লুল হাকিমের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার খবরে রাজবাড়ী ও পাংশা শহরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আনন্দবাজার গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো. আবুল হোসেন নিজেও ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী। তার পৈতৃক বাড়ি পাংশা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। জিল্লুল হাকিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন গোয়ালন্দ মহকুমা কমান্ডার ছিলেন তিনি। তিনি সংসদ সদস্যের পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী সাঈদা হাকিম ও দুই ছেলে মিতুল হাকিম ও রাতুল হাকিমও সফল ব্যবসায়ী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম ৬ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বার অর্থাৎ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাসিরুল হক সাবুর কাছে হেরে যান তিনি। পরবর্তী ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাসিরুল হক সাবুকে পরাজিত করে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন রণাঙ্গনের এই লড়াকু সৈনিক।
জিল্লুল হাকিম সংসদ সদস্যের পাশাপাশি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ তিনি ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্যের পাশাপাশি তিনি জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর আমরা সংবাদটি পাওয়ার পর থেকেই পাংশা শহর আতশবাজি ফুটিয়ে উৎসব করেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিমের মন্ত্রী হওয়ার খবরে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। জিল্লুল হাকিম মন্ত্রী হলে পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী তথা রাজবাড়ী জেলার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। আমরা পাংশাবাসী গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম খায়ের ঢাকা বলেন, জিল্লুল হাকিমের মন্ত্রী হওয়ার খবরে আমরা কালুখালীবাসী আনন্দিত। রাজবাড়ী-২ আসন থেকে এবারই প্রথম পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন তিনি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান মোল্লা বলেন, বালিয়াকান্দির আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে জিল্লুল হাকিম রাতদিন খেটেছেন। তিনি এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, ব্রিজ কালভার্টের উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে জিল্লুল হাকিমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। তৃণমূলের থেকে উঠে আসা জিল্লুল হাকিম মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এটা তার প্রাপ্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফখরুজ্জামান মুকুট বলেন, এমপি জিল্লুল হাকিমের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। তিনি বারবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এমপি জিল্লুল হাকিম আস্থার নাম। তিনি প্রতিটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়, উপজেলা পর্যায় ও জেলা পর্যায়ের প্রতিটি নেতাকর্মীদের যেকোনো বিপদ আপদে পাশে থাকেন। তাদের সুখ-দুঃখের কথা শোনেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাঁচবারের মতো বিজয় লাভ করেছন। এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর ডাকে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন, এটা তার প্রাপ্য ছিল। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ ও রাজবাড়ীবাসীর জন্য গর্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই জিল্লুল হাকিমকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় দেওয়ার জন্য।
জেলা আওয়মী লীগের সহসভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফকির আব্দুল জব্বার কালবেলা বলেন, জিল্লুল হাকিম বাংলাদেশ সরকার মন্ত্রিপরিষদে নিয়োগ পেয়েছেন। তার প্রতি আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল। আমি আশা করি, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে। সেই সঙ্গে রাজবাড়ী জেলার সর্বসাধারণ মানুষের সকল চাওয়া বাস্তবায়নে অবদান রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস।
মন্তব্য করুন