প্রকৃতির কাছে গেলে যে কারো মন ভালো হয়ে যায়। আর তা যদি হয় ফুল তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আদিকাল থেকেই ফুলের প্রতি মানুষের বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। গ্রামীণ সবুজ শ্যামল প্রকৃতিতে ফোটে নানা রকমের চেনা অচেনা ফুল। এসব ফুলে প্রকৃতিও সেজে ওঠে অপরূপ সাজে।
এমনই এক অপরূপ ফুল বড়নখা কুমিল্লার গোমতী নদীর তীর সংলগ্ন এলাকার পতিত জমিতে ও অগভীর জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। এ ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। তবে স্থানীয় অনেকের কাছেই এটি পানিকচু বা ছোটপানা নামেই পরিচিত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরসংলগ্ন কিছু এলাকায় ও উপজেলায় বিভিন্ন পতিত জমি, ছোট ডোবা ও অগভীর জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফোটে আছে অবহেলায় জন্ম নেওয়া নীলচে বেগুনি রঙের বড়নখা ফুল। এ ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি যেন আরও নৈসর্গিক সুন্দর হয়ে উঠেছে। সবুজের মাঝখানে কারুকার্যময় এ সৌন্দর্য যেন পথিকের পা থামিয়ে দেয়। অনেকেই ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ক্যামেরাবন্দি করছেন। কেউ কেউ ফুল তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি। শিশুরাও খেলছে এ ফুল দিয়ে।
জানা গেছে, বড়নখা বা ছোটপানা গাছটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Monochoria hastata । এটি Pickerel weed পরিবারের একটি জলজ আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রজাতি। বড়নখা মূলত বায়বীয় কাণ্ডের জলজ বীরুৎ শ্রেণির গাছ। এটি ০.৭ থেকে ১.২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই গাছের পাতা অনেকটা কচুপাতার মতো। এর একক পাতাটি বর্ষা ফলাকৃতির হয়ে থাকে। ৬ থেকে ৯ সেমি দীর্ঘ মঞ্জরিদণ্ডের উপরিভাগে একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০টি ফুলের একটি স্তবক থাকে। আলাদা আলাদা সব ফুল মিলে একটি বড় আকৃতির ফুলের মতো দেখায়। এর প্রতিটি ফুল ১৩ থেকে ১৬ মিমি লম্বা হতে পারে। একটি পরাগধানীর রঙ নীল, ৬ মিমি লম্বা, আর অন্য ৫টি পরাগধানী হলুদ রঙের ৪ মিমি লম্বা। আর এর বীজগুলো ক্যাপসুল আকৃতির ৭ মিমি লম্বা হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা আজমল হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমাদের এলাকার অল্প পানি আছে এমন কিছু ডোবা ও জমিতে ছোটপানা (বড়নখা) ফুল এ সময়টায় দেখা যাচ্ছে। ফুলগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। এই গাছ আমরা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছি। আউশ আবাদ এখনো হয়নি এমন জমিতেও এই গাছ জন্মেছে। একসঙ্গে এত ফুল ফুটেছে যে ফুলগুলোর দিকে তাকালে মন ভরে যায়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, বড়নখা একধরনের আগাছা ও ভেষজ উদ্ভিদ। এটি দাঁতের ব্যথায় শিকড়ের রস এবং হাঁপানি রোগে কাণ্ডের ছাল বেশ ফলদায়ক। এছাড়া মানবদেহের নানা রোগে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদটি আমাদের দেশের হাওর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া এই উপজেলার কিছু কিছু জায়গায় এই ফুল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, বড়নখা একধরনের বর্ষজীবী জলজ আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদের মাধ্যমে জৈবসার প্রস্তুত করা যায়, যা কৃষকের কাজে আসে। এ ছাড়া এই উদ্ভিদটি গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানোসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদের ফুলও দেখতে চমৎকার। তবে নিচু ফসলি জমিতে বিশেষ করে ধানের জমিতে এর বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তা না হলে ফসলের ফলনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
মন্তব্য করুন