বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আদালতে কাঁদলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্য ও সে সময় আদালতে হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরতে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তার আইনজীবী। বিএনপির আইন সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সর্বোচ্চ আদালতে বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্না করে ফেলেন।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয় রেফাত আহমেদের নের্তৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এই মামলা বাতিল আবেদনের ওপর তৃতীয় দিনের মতো শুনানি চলছিল। পরে এ মামলার অপর আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল (ইকোনো) কামালের আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত না হওয়ায়, আদালত আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মূলতবি করেন। ওইদিন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে।

বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলায় বিচারিক আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্য পড়ে শোনানা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

ওই বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘প্রায় ৩ যুগ আগে মানুষের ডাকে ও ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে আমি রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখি। সে দিন থেকেই বিসর্জন দিয়েছি নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ। আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দেশে ও জনগণের ভাগ্যের সঙ্গে নিজের ভাগ্যকে একাকার করে ফেলেছি। আমার নিজের কোনো পৃথক আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাই আমার আশা আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। আমার জীবন পুরোপুরি জড়িয়ে গেছে এদেশের মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যয়ের সঙ্গে। তারে সুখ-দুঃখ ও উত্থান পতনের সঙ্গে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘দেশ জাতি যখন সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে, আধিকার হারিয়েছে, বিপন্ন হয়েছে তখন আমিও নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছি। আমার পরিবারও পড়েছে নানামুখী সমস্যা সংকটে। বারবারই প্রকাশ হয়েছে যে বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের ভাগ্যের সঙ্গে আমার নিজের ও আমার পরিবারের ভাগ্য একসূত্রে গাথা হয়ে গেছে।’ এই বক্তব্য তুলে ধরার সময় কায়সার কামালের চোখে জল চলে আসে। যখন অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি এই বক্তব্য তুলে ধরছিলেন তখন পুরো আদালত কক্ষে পিনপতন নীরবতা।

আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়ার য়ো দীর্ঘ বক্তব্যের অংশ বিশেষ তুলে ধরে আপিল শুনানিতে কায়সার কামাল বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে বিশেষ আদালতে এই মামলার শুনানি করতে হয়েছে। ১০/১২ জন আইনজীবীকে ভেতরে যেতে অনুমতি দিত। এমনকি সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতের কাছে অনুনয় বিনয় করে খালেদা জিয়াকে বসার জন্য অনুমতি চাইতেন। আমরা পিঁড়ি নিয়ে আদালতে যেতাম। সেই ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে আমাদের আইনি লড়াই চালাতে হয়েছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তো দেশের কোনো সাধারণ নাগরিক নন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী। সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে যে আচরণ তার প্রতি করার দরকার ছিল দুকের তৎকালীন পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল সেটা করেননি। খালেদা প্রতি তীর্যক মন্তব্য করেছেন বিচার চলাকালে। আমারে প্রত্যাশা দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন ন্যায়বিচার পাবেন। মামলায় আনীত অভিযোগের সঙ্গে যার কোনো বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নাই সেই মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। যা ছিল অন্যায়।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিশেষ আদালত বিচারের নামে অবিচার করেছে। আপিল বিভাগের কাছে আবেদন ওই আদালতের রায় বাতিল করে খালেদা জিয়াকে খালাস দেওয়া হোক। শুধু খালেদা জিয়াই নয় অন্যান্য আপিলকারী ও আপিল করেনি তাদেরও খালাস দেওয়ার আবেদন করছি।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও দুদকের পক্ষে মো. আসিফ হাসান শুনানি করেন। এদিকে মামলার দণ্ডিত আসামি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত না হওয়ায় আগামী ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছে আপিল বিভাগ।

আদালতে আপিলের পক্ষে ছিলেন আরও শুনানিতে ছিলেন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

এর আগে ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে আপিলের অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছিলেন আপিল বিভাগ। পরে খালেদা জিয়া আপিল করেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল করেন। একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। এছাড়া পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।

এদিকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান একটি রায় দেন। রায়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

পরে একই বছরের ১৮ নভেম্বর ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। পরে শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত নভেম্বরে আপিল মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াসহ সবার সাজা বাতিল করে দেন। যদিও এ দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। তারপরও আপিল শুনানি কেন? আমরা বলেছি, তিনি (খালেদা জিয়া) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নীতি-আদর্শের পরিবর্তন করতে পারলেই শান্তি আসবে : ফয়জুল করীম

সেভিয়ার মাঠে বিধ্বস্ত বার্সা

আন্তঃশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন কাঞ্চন একাডেমি

একই দিনে বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু

বিএনপিতে যোগ দিলেন ৫ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী

মায়ের মৃত্যুর শোক শেষ না হতেই ডেঙ্গুতে ছেলের মৃত্যু

রাত ১টার মধ্যে ঢাকাসহ ১৭ জেলায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের শঙ্কা

শিক্ষক দিবসে ক্যানসারে নিভল ‘জালাল স্যারের’ প্রাণ

জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে ইসরায়েলকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা

সুপ্রিম কোর্টে ভোট ডাকাতি : আবু সাইদ সাগর কারাগারে 

১০

শেষ ম্যাচে আফগানদের ১৪৩ রানে থামাল বাংলাদেশ

১১

ইসলামকে যথাযথভাবে ও পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে : জামায়াত আমির

১২

মুলা-বেগুন মার্কা নির্বাচন কমিশনের রুচিবোধের প্রকাশ : সারজিস

১৩

রাষ্ট্রের উন্নয়নে ধানের শীষকে জয়যুক্ত করতে হবে : শিমুল বিশ্বাস 

১৪

নির্বাচনের দিন গণভোট চায় বিএনপি-এনসিপি, জামায়াত চায় আগে

১৫

সড়ক দুর্ঘটনায় জামায়াত নেতা নিহত

১৬

তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে সার বিতরণ

১৭

চার জেলায় বন্যার আশঙ্কা

১৮

মির্জা গালিবের হার্ভার্ডে নিয়োগ নিয়ে যা জানা গেল

১৯

কর্ণফুলী টানেলে বাস দুর্ঘটনা, চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু

২০
X