লিটন ইসলাম, ঢাবি
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ভিসির অনুমোদনের পরেও তথ্য পান না সাংবাদিকরা!

প্রতীকী ছবি : সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির যত কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে তাদের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আবেদন করেন জাতীয় দৈনিকে কর্মরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাকিবুল হাসান (ছদ্মনাম)। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সব নিয়ম মেনে এই আবেদন করেন তিনি, যেখানে অনুমোদন দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। কিন্তু আবেদনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই তথ্য দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুধু রাকিবুল হাসানই নন, এরকম একাধিক তথ্য আছে কালবেলার হাতে যারা কেউই আবেদন করার পরেও তথ্য পাননি আবার কেউবা তথ্য পেয়েছেন কিন্তু তা নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে।

গত বছরের আগস্টের আগে দুটি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কালের কণ্ঠের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মানজুর হোসাইন মাহী। আগস্টের পরে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব পেলে তিনি এই বিষয়ে প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করেন। এর মধ্যে একটি বিষয়ে তাকে তথ্য দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আরেকটি বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য তিনি এখনো পাননি। যে বিষয়ের তথ্য পাননি সেটা হলো, ‘গত পাঁচ অথবা দশ বছরে (সঠিক সংখ্যাটি তিনি মনে করতে পারেননি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম, সাজার ধরন, কারণ ও এর মেয়াদ কতদিন।’

প্রায় চার মাস আগে ৩টি বিষয়ে জানতে চেয়ে আবেদন করেন প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক তাহমিদ সাকিব। তিনি জানান, ভিসির অনুমোদনের পরে একটি বিষয়ে তথ্য পেলেও বাকি দুই বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য দেওয়া হয়নি তাকে। সেই তথ্য আদৌও পাবেন কিনা সেটা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের আবেদনের ভিত্তিতে যে তথ্য দেওয়া হয় সেটাও সম্পূর্ণ দেওয়া হয় না। গত মাসের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন রাজধানীর কাঁটাবন সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেট ও আইবিএ হোস্টেল সংলগ্ন গ্রিন সুপার মার্কেটের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে আবেদন করেন কালবেলার ঢাবি প্রতিবেদক। এই দুই মার্কেটে নানা অনিয়ম হয় এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদক বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে সেটার আংশিক তথ্য দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি তথ্য প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশও দেন। কিন্তু ভিসির অনুমোদনের পরেও সব তথ্য দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট অফিস।

আবেদনে দোকানগুলো প্রতি মাসে কত টাকা ভাড়া দেয় এবং কোন দোকানের বকেয়া কত এসব তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু স্টেট অফিস এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেনি। শুধু বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বকেয়া আছে এবং সেই বকেয়া উত্তোলনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

রাকিবুল কালবেলাকে বলেন, আমি মনে করি, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। সব নিয়ম মেনে আবেদন করার পরেও আমি সাত মাসেও তথ্য পাইনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এটা অনুমোদন করে দেন। তাহলে কি ধরে নেব নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার তথ্য যাতে গণমাধ্যমে না আসে এজন্য তথ্য দেয়া হচ্ছে না।’

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ উপ-ধারা (১) অনুযায়ী, ‘তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য গোপন করতে বা এর সহজলভ্যতাকে সঙ্কুচিত করতে পারবে না।’ এই আইনের ধারা-৪ অনুসারে, কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার রয়েছে এবং কোনো নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য। আইন অনুযায়ী, ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য প্রদান করতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

এ বিষয়ে স্টেট ম্যানেজার ফাতেমা কালবেলাকে বলেন, আপনি যা যা তথ্য চেয়েছেন সব দেওয়া হয়েছে। বকেয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি এমন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই তথ্য দেয়া সম্ভব না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট তথ্য পেতে তথ্য অধিকার ফর্ম পূরণ করে জনসংযোগ দপ্তরে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ভিসির অনুমোদনের পরে তথ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠায় জনসংযোগ দপ্তর। এরপর সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আবার তথ্য পাঠানো হয় জনসংযোগ দপ্তরে। যেখান থেকে তথ্য পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের। যদিও এর ব্যত্যয় হয় বলে অভিযোগ ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, ‘এই প্রশাসনিক ভবনের অনেক কর্মকর্তা অবৈধভাবে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। গত পনের বছর ফ্যাসিস্টের আমলে ব্যাপক অনিয়ম করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূলত এসব তথ্য যাতে বাইরে প্রকাশ না পায় সেই জন্যই প্রশাসনিক ভবনের অনেক দপ্তরের অসৎ কর্মকর্তারা তথ্য দিতে চান না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান কালবেলাকে বলেন, সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্য দিতে হবে। যারা তথ্য দিতে চায় না তাদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। এখানে (প্রশাসনিক ভবন) অনেক অপদার্থ আছে। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় হামাসের বন্দুকধারীদের টহল

আগামীর রাষ্ট্রকাঠামোর পূর্ণ রূপরেখা ৩১ দফাতেই রয়েছে : কফিল উদ্দিন 

পরিবেশ রক্ষায় ৮০ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে : টুকু 

ক্ষমতায় এলে ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান গড়বে বিএনপি : আমিনুল হক

মিসরে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেলেন ট্রাম্প

নেইমারের জন্য এখনও দরজা খোলা রেখেছেন আনচেলত্তি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ ও প্রফেশনাল কোর্সের সব পরীক্ষা স্থগিত

ইতিহাস গড়ে ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট পেল কেপ ভার্দে

পলিথিনে মোড়ানো শপিং ব্যাগে মিলল নবজাতকের মরদেহ

রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

১০

কলাবাগানে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

১১

অবশেষে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই

১২

জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

১৩

শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

১৪

‘ড. তোফায়েলের শূন্যতা বহু দশক অনুভূত হবে’

১৫

আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার মরদেহ উদ্ধার

১৬

স্থানীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

১৭

পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা / সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

১৮

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : পিএনপি

১৯

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রোটিয়াদের কাছে বাংলাদেশের হার

২০
X