জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১৭ হলে ও একটি অনুষদে মোট ৮৮ জনকে দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। হল কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে পুণরায় গণরুম, গেস্টরুম ও র্যাগিং কালচার ফিরে আসার আশঙ্কা করে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটিগুলো অনুমোদন করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬টি ছাত্রী হল, ১১টি ছাত্র হলে ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কমিটি গঠন করা হলো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর এবং সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীক এই কমিটি অনুমোদন করেন।’
কমিটি দেওয়া ছাত্রী হলগুলো হলো- নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল, প্রীতিলতা হল, ১৩নং ছাত্রী হল, ফজিলতুন্নেসা হল, রোকেয়া হল, বীর প্রতীক তারামন বিবি হল। এছাড়া ছাত্র হলগুলো হলো- আল-বেরুনী হল, শহীদ সালাম বরকত হল, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল, মওলানা ভাসানী হল, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, ১০নং ছাত্র হল, ২১নং ছাত্র হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, মীর মোশাররফ হোসেন হল।
এছাড়াও জাবির ৬টি অনুষদের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এদিকে শাখা ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা। লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাস ও হলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, অবৈধভাবে সিট দখল, গণরুম, গেস্টরুম এবং র্যাগিং কালচারকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণের চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে গণরুম, গেস্টরুম এবং র্যাগিং কালচারকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হলগুলোতে রাজনৈতিক কমিটি গঠন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই প্রাণের চাওয়াকে উপেক্ষা করেছে। আমরা মনে করি এর মাধ্যমে হলগুলোতে পুনরায় গণরুম, গেস্টরুম ও র্যাগিং কালচার ফেরত আসবে, যা হবে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় সাথে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আজকে যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক কাঠামোর সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্তি চায়, সেখানে ছাত্রদলের হল কমিটি দেওয়া যেন ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে একটি নতুন রূপ দেওয়ারই প্রয়াস। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখেছি এবং ছাত্রদল বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বরাবরই ছিল এক বজ্রকণ্ঠ। সেই ছাত্রদল ফ্যাসিবাদী কাঠামো ফেরত আনার যে প্রয়াস আজ দেখিয়েছে, তা ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি সংগঠনকে হতাশ করেছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রত্যেকটি সচেতন শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে আহ্বান জানাচ্ছে এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য।
মন্তব্য করুন