জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গণনার কাজ। এই নির্বাচন নিয়ে নিজের ফেসবুকে ‘ধন্ধে পড়া’ স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু দায়েন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা ১৬ মিনিটে তিনি এ-সংক্রান্ত পোস্ট দেন। ওই পোস্টটি কালবেলা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
বিকেল থেকে খবর দেখছি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ৪টি বাম সংগঠন নির্বাচন বর্জন করেছে। বামদের বর্জনের বিষয়ে কিছু বলার নেই। ছাত্রদলের বর্জনের বিষয়ে ধন্ধে পড়েছি। ছাত্রদল নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে বোধ হয় ভোট দেওয়ার সময় ফুরানোর ১০ মিনিট আগে। অনিয়মের অভিযোগগুলোও দেখলাম। নির্বাচনে কারসাজি করার অভিযোগ আসলে কার বিরুদ্ধে? ফেসবুকে একজনের পোস্টে ৪টা নাম দেখলাম। তারা চারজন সম্ভবত ৪টি হলের প্রভোস্ট। একজন নারী শিক্ষকও রয়েছেন তার মধ্যে। তার রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। বাকি তিনজনের দুজন বিগত আমলে আওয়ামিপন্থি শিক্ষক ফোরামে সক্রিয় ছিলেন। অপরজনকে চিরকাল বিএনপিপন্থি শিক্ষক হিসেবে জেনে এসেছি, অন্তত গত ৩৩ বছর ধরে। বিভিন্ন নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির মনোনয়নে তিনি সিনেট, সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা যদি প্রভোস্ট হয়ে থাকেন, ৪টি ভোটকেন্দ্র তাঁদের চারজনের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা। কিন্তু যার অধীনে তারা কাজ করেন, সেই উপাচার্যকে বিএনপির কোর অর্গানাইজার হিসেবে চিনি ৩৩ বছর ধরে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, তিনি অফুরন্ত ক্ষমতার মালিক। তার টিমে যারা আছেন দুজন উপ-উপাচার্যের একজন সামাজিকভাবে জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত (সত্যি কি না আমার ধারণা নেই)। অপরজন চাকরিতে যোগ দেন বিএনপি আমলে। বিএনপির ফ্রন্টলাইনার সাপোর্টার ছিলেন। আওয়ামী আমলে পরিচিতি বদলান। দীর্ঘ সময় প্রভাবশালী আওয়ামী শিক্ষক ছিলেন। ট্রেজারার বগুড়ার গাবতলির সন্তান। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত হলো প্রতিনিধি।
প্রক্টরসহ নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন, প্রায় সবাই বিএনপি ঘরাণার ত্যাগী ও বিরূপ পরিস্থিতিতে নানাভাবে নিগৃহীত শিক্ষক। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজনীতি প্রশ্নে বিভিন্ন সময় সরব অবস্থানে থাকলেও তার রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই। ডাকসু নির্বাচনে অভিযোগের কেন্দ্রে উপাচার্য, যার জামায়াতপন্থি হওয়ার জোর আলোচনা লক্ষ্য করা যায়। জাকসুতে বিএনপিপন্থি উপাচার্য ও প্রশাসনের সর্বত্র প্রায় সব দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বিএনপি সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও কে কারচুপি ও অনিয়ম করল? বিশেষত মাথার ওপর যেখানে উপাচার্য। তার নেতৃত্ব বাইপাস করে অনিয়ম ও কারসাজি হলো? তিনি মেনে নিলেন বা হতে দিলেন? অভিযোগ নিয়ে তিনি চুপ থাকবেন? প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানে তো তার বিরুদ্ধেই অনিয়মের আঙুল তোলা। তিনি বিএনপির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছেন? সেটা মানা কঠিন নয়? তবে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়? একটা আচানক ধন্ধে পড়ে গেছি। বিকেল থেকে নানাজনকে জিজ্ঞেস করছি, ভোট শেষ হওয়ার আগে আগে বর্জন, যদি বর্জনকারীরা জিতে যায়, কী হবে? যাকেই জিজ্ঞেস করি বলে, জিতবে না। তারা কীভাবে জানেন জিতবে না? একটা ধন্ধে পড়ে আছি। আসলে দিনকাল ভালো না।
মন্তব্য করুন