জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৩ পিএম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘যৌন নিপীড়ক’ শিক্ষককে রক্ষা করতে চায় প্রশাসন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে গঠিত স্ট্রাকচার্ড কমিটি ৪০ দিনেও কাজ শুরু করতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত হননি যে তারা কমিটিতে আছেন।

গত ১০ আগস্ট উপাচার্যের সভাপতিত্বে নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে একই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি ও অধিকতর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সিন্ডিকেট সভা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়, দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুসারে স্ট্রাকচার্ড কমিটি ৬ সদস্য বিশিষ্ট হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। এ ছাড়া নিজ অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, দুজন সিন্ডিকেট সদস্য এবং রেজিস্ট্রার এই কমিটির সদস্য মনোনীত হন। স্ট্রাকচার্ড কমিটির কার্যক্রম উপাচার্যের আহবানে সংগঠিত হয়। সে হিসেবে মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে গঠিত এই কমিটিতে আছেন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফুজা মোবারক এবং সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ-উল আলম।

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম বলেন, ‘পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি স্ট্রাকচার্ড কমিটিতে আছি। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাইনি। এ ছাড়া স্ট্রাকচার্ড কমিটি কবে বসবে সে বিষয়েও অবগত না।’

পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সভাপতি মাহফুজা মোবারক সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্ট্রাকচার্ড কমিটিতে আছি তা শুনেছি, তবে আমাকে অফিসিয়ালি কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। অসুস্থ আছি তাই এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

গত বছরের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনি ও একই বিভাগের এক নারী প্রভাষকের অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস হয়। একইসঙ্গে বিভাগের শিক্ষক পদে আবেদনকারী এক ছাত্রীর সঙ্গে অন্তর‌ঙ্গ আলাপনের অডিও প্রকাশ্যে আসে।যেখানে মাহমুদুর রহমান জনি ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর বিষয়টি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে।

এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে উঠলে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নিয়মিত সিন্ডিকেটে নৈতিক স্খলন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ সময় জনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন।

এ ছাড়া জনির বিরুদ্ধে দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেয় মহিলা পরিষদ। পরে জনির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় ইউজিসি।

পরবর্তীতে জনিকে দায়মুক্তি দেওয়ার শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলন শুরু করেন। ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার বাইরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। সেদিন আন্দোলনের চাপে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ হয়নি বলে জানায় সিন্ডিকেট। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবারও অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেট।

সর্বশেষ ১০ আগস্ট ওই কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু জনিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

স্ট্রাকচার্ড কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো মিটিং হয়নি। তবে কবে বসা যায় তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’

উপাচার্যের ‘গড়িমসি’

এদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি খামে উপাচার্যকে গালিগালাজ করার অডিও ক্লিপ সম্বলিত ডিভিডি, একটি দায়মুক্তিপত্র প্রত্যাহারের আবেদন ও একটি উড়ো চিঠি সাংবাদিকদের পাঠানো হয়।

‘যৌন নিপীড়ক জনিকে বাঁচাতে তৎপর উপাচার্য, নেপথ্যে...’ শিরোনামে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান রীতি অনুসারে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিললে অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়। তবে জনির ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। সে বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা কথা বললে সিন্ডিকেটের সভাপতি (উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম) সুকৌশলে জনিকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।’

প্রাথমিক সতত্য নিশ্চিত হওয়ার পরেও জনিকে বহিষ্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্যকে গালাগালি করা ও উপাচার্য পদে নিয়োগে জনির প্রভাব থাকার এমন ন্যক্কারজনক অডিও ফাঁসের পরেও যদি উপাচার্য তার বক্তব্য স্পষ্ট না করেন, এমনকি কোনো ব্যবস্থা না নেন তাহলে সবাই বুঝবে যে জনি যা বলেছে- তা সত্য। এক্ষেত্রে উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারাবেন। তিনি সবসময় তার কাছের শিক্ষকদের নানা অপকর্মে নিরব থেকেছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন। উপাচার্যের এমন আচরণের কারণেই তারা এসব অপকর্ম দ্বিগুণ উৎসাহের সাথে বারংবার ঘটাচ্ছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যোগ করা সময়ে গোল খেয়ে লিড হারাল বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে বড় ‘সুখবর’ দিল যুক্তরাজ্য

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করল জবি প্রশাসন 

অর্থবছর শেষে কমেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

মধুমতীতে বিলীন ১৪ ব্যারাক, আরও ৩টি অতিঝুঁকিতে

ভাঙার দুই দিনেও মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, তলিয়েছে ঘরবাড়ি

শহীদ মীর মুগ্ধের জন্মদিনে ভাই স্নিগ্ধের আবেগঘন পোস্ট

ঢাকায় ১০ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা, নিতে পারবে নিবন্ধন ছাড়াও

২৮ বছরের ক্রিকেট ইতিহাস নতুন করে লিখলেন ভারতীয় ওপেনার

হামাস-ইসরায়েলের সংলাপকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

১০

‘আইয়া দেখি মা-বাবাকে মাইরা খাটের ওপর বইসা রইছে’

১১

নওগাঁর সাবেক এমপি ওমর ফারুক কারাগারে

১২

হামজাদের খেলা দেখতে গেট ভেঙে স্টেডিয়ামে ঢুকলেন দর্শক

১৩

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানিকালে ৭৫ হাজার কেজি সুতা জব্দ

১৪

মায়ের লাশ আটকে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা, ২০ ঘণ্টা পর দাফন

১৫

ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড

১৬

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশে নতুন করে দমন-পীড়ন : এইচআরডব্লিউ

১৭

রাকসু নির্বাচন / ১৬ দফার ইশতেহার দিল গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ

১৮

ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা, তিন দিন পরও হয়নি মামলা

১৯

হঠাৎ খুমেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, বিপাকে রোগীরা

২০
X