বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি) থেকে বিএড সনদপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উচ্চতর বেতনস্কেল না দেওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা অবিলম্বে এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের অবসান দাবি করেছেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে বিএড ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষকরা উচ্চতর স্কেল পেলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসা শিক্ষকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা এটিকে একটি ‘বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এমপিও নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে যে বিএড ডিগ্রি অর্জনের পর শিক্ষকদের দশম গ্রেড (১৬ হাজার টাকা) দেওয়া হবে, কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। অনেক শিক্ষক ২০২৩ সালে ভর্তি হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ফলাফল পান এবং চলতি বছরের শুরুতে সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন। এরপর স্কেল পাওয়ার আবেদন করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির কারণে সেগুলো বাতিল হয়ে যায়।
শিক্ষিকা রাবেয়া আক্তার জানান, বিএড ডিগ্রি না থাকায় তিনি এখনো একাদশ গ্রেডে (১২ হাজার ৫০০ টাকা) বেতন পাচ্ছেন, যা বর্তমান বাজারে টিকে থাকার জন্য অপর্যাপ্ত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্কুল থেকে তিন বছরের আগে ছুটি পাওয়া যায় না, ফলে এক বছরের কোর্স শেষ করতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
শিক্ষক মেহেদী হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন শিক্ষক হয়ে দিনের পর দিন ক্লাস নিচ্ছি, অথচ শুধু অনুমোদনের ফাঁদে পড়ে আমরা বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমাদের অপরাধটা কী? আমরা তো কোনো ভুয়া সনদ নেইনি।’
তিনি প্রশ্ন করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হয়ে, ক্লাস করে, পরীক্ষা দিয়ে, সরকারি ফি পরিশোধ করে ডিগ্রি পাওয়ার পর যদি সেই ডিগ্রির কোনো মূল্য না থাকে, তাহলে তাদের সময়, কষ্ট ও অর্থ সবই কি ব্যর্থ গেল?
আরেক শিক্ষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যেখানে একজন সহপাঠী পাশের কলেজ থেকে বিএড করে স্কেল পাচ্ছেন, আমি একই সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে করে বঞ্চিত হচ্ছি। এটা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়।’
তিনি এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং বলেন, দ্রুত সমাধান না হলে তারা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২১ জানুয়ারি এক চিঠিতে কনটেম্পট পিটিশন নং ১৫৩/২০১৪ অনুযায়ী ২৩টি নির্দিষ্ট বেসরকারি টিটি কলেজ থেকে অর্জিত বিএড ডিগ্রিকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়। এই ২৩টি কলেজের বাইরে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সনদের ভিত্তিতে স্কেল প্রদান করলে তা সরকারি অর্থের অপব্যবহার হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
তবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তাদের অধিভুক্ত সকল বেসরকারি বিএড প্রতিষ্ঠানের সনদের মান সমান।
সরকার অনুমোদিত ২৩টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের তালিকা:
মহানগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (ঢাকা)
হাজী ওয়াজেদ আলী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (সাতক্ষীরা)
আমিরুল ইসলাম কাগজী টিটি কলেজ (খুলনা)
হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন (চাঁদপুর)
পিরোজপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
কলেজ অব এডুকেশন (বরিশাল)
মুন্সী মেহেরউল্লা টিটি কলেজ (যশোর)
জয়পুরহাট বিএড কলেজ
মঠবাড়িয়া টিটি কলেজ
বগুড়া বিএড কলেজ
দক্ষিণ বঙ্গ টিটি কলেজ (পটুয়াখালী)
কক্সবাজার টিটি কলেজ
পরশ পাথর টিটি কলেজ (চট্টগ্রাম)
ড. মিয়া আব্বাস উদ্দীন টিটি কলেজ (বাগেরহাট)
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (যশোর)
উপশহর টিটি কলেজ (যশোর)
মাগুরা টিটি কলেজ (মাগুরা)
খান, সেকান্দার, সিটি, ন্যাশনাল টিটি কলেজ
কলেজ অব এডুকেশন (নর্থ আমানতগঞ্জ)
সিটি টিটি কলেজ (চট্টগ্রাম)।
মন্তব্য করুন