ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ১১:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তোকে খুন করলেও আমার কিচ্ছু হবে না : স্ত্রীকে ইবি শিক্ষক

অভিযুক্ত শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সাহা। ছবি : সংগৃহীত
অভিযুক্ত শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সাহা। ছবি : সংগৃহীত

যৌতুকের দাবিতে ও নিজের অপকর্ম ঢাকতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিয়ের পর থেকেই এসব নিয়ে স্ত্রীকে নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে যেতেন বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের সামনে এসব বিষয় লিখিতভাবে তুলে ধরেন তিনি।

অভিযুক্ত ড. সঞ্জয় কুমার সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক। ভুক্তভোগী স্ত্রীর নাম জয়া সাহা। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ওই দম্পতির ৫ বছর বয়সী এক পুত্রসন্তান রয়েছে।

লিখিত বক্তব্য সূত্রে, ৯ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় জয়া ও সঞ্জয় কুমারের। বিয়ের পর থেকেই তাদের সাংসারিক জীবনে অশান্তি ও কলহ লেগেই থাকত বলে জানান সঞ্জয়ের স্ত্রী। বিয়ের সময় ২৫ লাখ টাকা ও ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা আসবাবপত্র দেওয়া হয় সঞ্জয়কে। তাকে দেওয়া স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ২০২০ সালে ঢাকার গাবতলি এলাকায় নিজের নামে জমিও কেনেন তিনি এবং সেই জমিতে স্ত্রীকে শেয়ার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী। এতকিছু দেওয়ার পরও সবসময় অতৃপ্ত ও অখুশি থাকত বলে জানান তার স্ত্রী। এ নিয়ে তাকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ তার।

পরে স্বামীর অনিচ্ছায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভর্তি হওয়ায় তার ওপর শারীরিক নিযার্তন শুরু করেন সঞ্জয়। ক্লাসে যেতে ও অন্যদের সঙ্গে মিশতে বাধা দেন ওই শিক্ষক। এ ছাড়া বোরকা পরে ক্যাম্পাসে আসতে চাপ প্রয়োগ করেন তাকে। ক্লাসে যেতে চাইলে সঞ্জয় তার স্ত্রীকে বলতেন, ‘কীসের ক্লাস, কীসের যাওয়া লাগবে ক্যাম্পাস ... (প্রকাশ যোগ্য নয়)।’ নিজ বিভাগের ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, যৌন হয়রানি, অশ্লীল ফোনালাপসহ নানা অপকর্ম ঢাকতে তাকে ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দিতেন বলে অভিযোগ স্ত্রীর।

বিষয়টি নিয়ে তাকে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী। বিভিন্ন সময়ে স্যান্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, খুন্তি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধরও করা হতো। মারতে মারতে তিনি বলতেন, ‘...(প্রকাশ যোগ্য নয়)... তোকে নাটোর ... রেখে আসব। তোর বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্টিকে সাইজ করে আসব। কী পাইছু এখানে, তুই নাটোরে যাস না কেন। বাঁচতে চাইলে বাপের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয়।’ অনেক সময় মারতে মারতে অসুস্থ হয়ে গেলে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি নাটোরে রেখে আসতেন সঞ্জয়।

এ ছাড়া অনেক সময় স্ত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন তিনি। এ সময় তিনি বলতেন, ‘তোকে আমি মেরেই ফেলব। এমন কায়দায় খুন করব সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করেছিস। খুন করেছি জানলেও আমার কিচ্ছু হবে না। আমার হাত অনেক লম্বা। আমার অনেক পাওয়ারফুল লোক আছে। তোর বাপের কী ক্ষমতা আছে।’ এ ছাড়া বঁটি দিয়ে তাকে হত্যা করতেও উদ্যত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী।

এদিকে সন্তান হওয়ার পর সন্তানের সামনেই স্ত্রীকে পাশবিক নির্যাতন চালাতেন ওই শিক্ষক। এ ছাড়া সন্তানের সঙ্গেও বাজে আচরণ ও তাকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ স্ত্রীর। পরে গত বছরের ২৪ জুন স্ত্রী-সন্তানকে মেরে নাটোরে পাঠিয়ে দেন সঞ্জয়। এরপর ভুক্তভোগীর মা-বাবা বিষয়টি মধ্যস্থতা করতে চাইলে সঞ্জয় ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে স্ত্রীকে নেবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন তিনি।

এদিকে ছয় মাস আগে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর বাবা রতন কুমার সাহা। তবে অভিযোগ করলেও এখনো কোনো প্রতিকার পাননি তারা।

ভুক্তভোগীর বাবা রতন কুমার বলেন, উচ্চশিক্ষিত ছেলে ভেবে আমার মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের আচরণ যে এতটা জঘন্য ও ঘৃণ্য হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। বাবা হিসেবে মেয়ের সুখ চেয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মেয়ের মলিন চেহারা আমাকে মর্মাহত করত। আমি আমার মেয়ের ওপর হওয়া অমানসিক নির্যাতনের বিচার চাই।

ভুক্তভোগী জয়া সাহা বলেন, আমার উপর হওয়া নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।

অভিযুক্ত শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, অভিযোগগুলো বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কারো ইন্ধনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সে এসব অভিযোগ তুলেছে। আমি তার সঙ্গে সংসার করতে ইচ্ছুক। কিন্তু নানাভাবে টালবাহানা করে সে আমার বাসায় আসতে চাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমি মোকদ্দমাও করেছি।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টা যেহেতু পারিবারিক তাই আমাদের এখানে করার কিছু নাই। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ৫ জুলাই নিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে নিপীড়ন, হুমকি ও মানসিক হেনস্তার অভিযোগ ওঠে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও যৌন আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

দেশের ৮১ সরকারি কলেজ স্থান পেল ‘এ’ ক্যাটাগরিতে

স্ট্রোক করে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চলন্ত ট্রেনে পপকর্ন বিক্রেতাকে হত্যা

আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, গ্রেপ্তার ২৪

বস্তিবাসীর জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের আশ্বাস আমিনুল হকের

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে: সাকি

তিন মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি গ্রেপ্তার

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে : ডা. শাহাবুদ্দিন

১০

‘যারা কাসেমীর ফাঁদে পড়েছ, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো’

১১

ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা বাংলাদেশের

১২

বৃহত্তর নোয়াখালী নারী কল্যাণ সংঘ ইতালির আত্মপ্রকাশ

১৩

শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের

১৪

‘হাসিনার কালো আইন বাতিল করুন, না হয় নিবন্ধন দিন’

১৫

বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

১৬

আহত শিশুকে নেওয়া হলো হাসপাতালে, সড়কে পড়ে ছিল বিচ্ছিন্ন হাত

১৭

বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৮

যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের ২ সদস্য বরখাস্ত

১৯

দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রাণ গেল ২ বন্ধুর

২০
X