

একটি সুস্থ ও নিরাপদ মাতৃত্বের যাত্রা শুরু হয় গর্ভকালীন যত্ন (ANC) থেকে। নিয়মিত ও সঠিক গর্ভকালীন পরিচর্যা মা ও অনাগত শিশুকে যেমন নিরাপদ রাখে, তেমনি স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনাও অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
গর্ভাবস্থায় অন্তত ৮ বার চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে ANC ভিজিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ভিজিটের মাধ্যমে মায়ের রক্তচাপ, রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে যে কোনো জটিলতা আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি এই নিয়মিত ফলোআপ একজন মাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে।
স্বাভাবিক প্রসবের উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকাও জরুরি। স্বাভাবিক প্রসবে ঝুঁকি তুলনামূলক কম, খরচও কম হয়। প্রসবের পর মা ও শিশু দুজনই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতের গর্ভধারণে জটিলতার আশঙ্কাও কম থাকে। তাই চিকিৎসাগত কোনো প্রয়োজন না থাকলে স্বাভাবিক প্রসবই হওয়া উচিত প্রথম পছন্দ।
এক্ষেত্রে একটি সুপরিকল্পিত জন্ম পরিকল্পনা (Birth Plan) অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। গর্ভকালীন সময়েই চিকিৎসকের সঙ্গে এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করে এই পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। যেখানে স্বাভাবিক প্রসবকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং কেবলমাত্র চিকিৎসাগত প্রয়োজনেই সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গর্ভকালীন যত্ন ও স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। স্বামী, শাশুড়ি ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের সচেতন করা জরুরি—যাতে তারা বুঝতে পারেন, সব সময় সিজার করা প্রয়োজন হয় না। পরিবার যত বেশি সহায়ক হবে, মা তত বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
এছাড়াও কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিক প্রসবের গুরুত্ব বোঝানো যেতে পারে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, নিরাপদ মাতৃত্ব, সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু।
লেখক : কনসালটেন্ট (প্রসূতি ও গাইনি), ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
মন্তব্য করুন