

ক্যানসার হঠাৎ করে আক্রমণ করে না, এটি ধীরে, নিঃশব্দে শরীরে জায়গা করে নেয়। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, আমরা অনেকেই ভাবি ক্যানসার মানেই জিনগত সমস্যা বা একেবারে ভাগ্যের ব্যাপার। অথচ গবেষণা বলছে, আমাদেরই প্রতিদিনের ছোট-ছোট কিছু অভ্যাস নীরবে বাড়িয়ে দেয় এই প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি।
আমরা কী খাই, কীভাবে ঘুমাই, কতটা নড়াচড়া করি —এই সাধারণ আচরণগুলোই নির্ধারণ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা শক্ত থাকবে। তাই সচেতন হলে এবং কয়েকটি স্বল্প পরিবর্তনে ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো পুরোপুরি সম্ভব।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী নিচে নিত্যদিনের এমনই ৭টি অভ্যাসের কথা রইল, যেগুলো অজান্তেই আপনাকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে—
১. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া
চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, সফট ড্রিংক বা রেডি-টু-ইট খাবারে অতিরিক্ত চিনি, লবণ, সংরক্ষণকারী ও কৃত্রিম উপাদান থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের খাবার স্তন ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
কী করবেন : তাই সম্ভব হলে বাড়িতেই তাজা খাবার রান্না করুন এবং ফল, সবজি, বাদাম ও পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার বেশি খান।
২. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন অফিস ডেস্কে, গাড়িতে বা টিভির সামনে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা শরীরের মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে ও প্রদাহ বাড়ায়। এতে কোলন, এন্ডোমেট্রিয়াল এবং ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার উঠে হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন, আর দিনে অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি মানের ব্যায়াম করুন।
৩. সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা না নেওয়া
সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা বা দীর্ঘ সময় রোদে থাকা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে স্কিন ক্যানসার ও মেলানোমার ঝুঁকি বাড়ে।
কী করবেন : বাইরে বেরোলে এসপিএফ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন এবং দুপুরের তীব্র রোদ এড়িয়ে চলুন।
৪. খারাপ ঘুমের অভ্যাস
যথেষ্ট ঘুম না হলে শরীরের জৈবঘড়ি বা সারকাডিয়ান রিদম নষ্ট হয়, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয় এবং কোষের মেরামত প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। দীর্ঘদিন ঘুমের ঘাটতি স্তন, প্রোস্টেট ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
কী করবেন : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যান ও উঠুন এবং অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।
৫. ধূমপান ও তামাকসেবন
ধূমপান হোক বা চিবানো তামাক, যেকোনোভাবে তামাক শরীরে বিষ ছড়ায়। তামাক ব্যবহার করলে ফুসফুস, মুখ, গলা, অগ্ন্যাশয় ও মূত্রাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে।
মনে রাখুন : তামাকের কোনো নিরাপদ পরিমাণ নেই।
৬. অ্যালকোহল পান
অ্যালকোহল শরীরের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কোষ মেরামতের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ লিভার, স্তন, মুখ, গলা ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
সমাধান : সুস্থ জীবনের জন্য অ্যালকোহল সম্পূর্ণ পরিহার করাই সর্বোত্তম।
৭. মানসিক চাপকে উপেক্ষা করা
চাপ বা স্ট্রেস সরাসরি ক্যানসার সৃষ্টি না করলেও এটি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে এবং ধূমপান, অতিভোজন বা মদ্যপানের মতো ক্ষতিকর অভ্যাসে ঠেলে দেয়। এগুলোই পরোক্ষভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি।
সমাধান : তাই ধ্যান, যোগ, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মতো অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
শেষ কথা
প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। সচেতন জীবনযাপন, সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম আর মানসিক প্রশান্তি— এই পাঁচটি অভ্যাসই ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে কার্যকর। আপনার আজকের সচেতন সিদ্ধান্তই আগামী দিনের সুস্থ জীবনের ভিত্তি।
মন্তব্য করুন