বছরের প্রায় প্রতিদিনই থাকে কোনো না কোনো বিশেষ দিবস। কিছু কিছু দিবস তো রয়ে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে জুন মাস এলে অনেকে অপেক্ষা করেন তৃতীয় রোববারের। কারণ এদিন পালন করা হয় বিশ্ব বাবা দিবস। বাবাকে চমকে দিতে এদিন সন্তানরা করে থাকে নানা আয়োজন। অনেকের কাছে জীবনের প্রথম সুপারহিরো বাবা, অনেকেই বলেন, বাবা হলো সেই বটবৃক্ষ—যিনি ঝড়ঝাপটা থেকে সন্তানকে আগলে রাখেন পরম মমতায়। কারও মতে, বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনই বাবা দিবস। তবে বিশেষ একটি দিন যদি খানিকটা সময় আলাদা করে বাবাকে দেওয়া যায়, স্মরণ করা যায় বাবাকে, তবে ক্ষতি কী?
শতবছর আগ থেকে শুরু হয় বাবা দিবস উদযাপন। বাবার জন্য আলাদা একটু সময় বের করে ভালোবাসা প্রকাশের আয়োজন করা হয়। আজ জুন মাসের তৃতীয় রোববার, আষাঢ় মাসের প্রথম দিনেই পালিত হবে বিশ্ব বাবা দিবস। এ বছরও শতাধিক দেশে পালিত হবে বাবা দিবস।
বাবা দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চের মাধ্যমে দিনটির প্রচলন। জানা যায়, ওয়াশিংটনের ভ্যাংকুভারে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সাধারণ মতে, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনোরা স্মার্ট ডোড। যখন তার বয়স ১৬, তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সোনোরাই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে থেকে সোনোরা ডোডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট নবজাতকসহ পাঁচ সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। সোনোরা বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন, ছয় সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে। উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন সাহসী, নিঃস্বার্থ একজন ভালো বাবা, যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সোনোরা স্মার্ট বিয়ে করেন জন ব্রোস ডোডকে। তাদের সন্তান জ্যাক ডোড জন্মের কিছুকাল পরে সোনোরার স্বামীও মারা যান। এ অবস্থায় বাবা আর মেয়ে মিলেই পুরো জীবন পার করে দেন তারা।
বাবার প্রতি সম্মান জানাতে বাবা দিবস ঘোষণার বিষয়টি সোনোরার চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। মা দিবসের অনুষ্ঠানে সে বছর চার্চে যান সোনোরা ডোড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হয় মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন, যেখানে মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। প্রকাশ করা হবে ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রিসভার কাছে তিনি তার বাবার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান। তার প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও মন্ত্রিসভা ৫ জুনকে বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোয় বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডোড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস। একটি স্থানীয় পত্রিকা সেদিন ছুটি ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন দোকানি বাবাদের জন্য নানা রকমের উপহারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে রাখেন। পরের বছর কংগ্রেসে বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণা করার প্রস্তাব করে বিল উত্থাপিত হলেও তা পাস হয়নি। এনিয়ে আশাহত না হয়ে ডোড বাবা দিবসের দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে ঘোষণা করেন। ডোডের মৃত্যুর পাঁচ বছর পূর্বে ১৯৭২ সালে রিচার্ড এম নিক্সন বাবা দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। সে উপলক্ষে সোনোরা ডোডকে লেখা চিঠিতে নিক্সন উল্লেখ করেন, ‘দুই সুন্দরী কন্যার বাবা হিসেবে, যারা কখনো বাবা দিবস ভোলেনি, আমেরিকান জীবনে এ মহান ঐতিহ্য শুরু করার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।’
মন্তব্য করুন