ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সব রাস্তা ও ফুটপাতে গাছ লাগানো হবে। আর এসব গাছ পরিচর্যায় ১০০ জন মালি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মেয়র আনিসুল হক সড়ক সংলগ্ন ডিএনসিসি এলাকায় দুই লাখ গাছ রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, গাছ লাগানো অনেক সহজ কিন্তু গাছ বাঁচানো অনেক কঠিন। গাছের পরিচর্যার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১০০ জন মালি নিয়োগ দেবে। একেকজন মালিকে ১ কিলোমিটারের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এক কিলোমিটারের মধ্যে যত গাছ আছে, সেসব গাছের রিপোর্ট তারা আমাদের দেবেন। এ পদে অনেক শিক্ষিত ছেলেরাও আবেদন করছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছে। কারণ তারা পরিবেশ রক্ষার্থে কাজ করতে চায়। এ ছাড়া গাছ বাঁচানোর জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মেয়র বলেন, ডিএনসিসি এলাকার সব রাস্তা ও ফুটপাতে গাছ লাগানো হবে। আমরা একটি জিআইএস ম্যাপ তৈরি করেছি। যার মাধ্যমে জায়গা নির্বাচন, গাছ মনিটরিং করা হবে। কোনো জায়গা খালি রাখতে চাই না। ফুটপাতে ছাতিম, বকুল, কাঠ বাদাম, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, সড়কের সড়ক বিভাজনে কাঁটা মেহেদী, রঙ্গন, করবী, বাগান বিলাস, বামন জারুল ও রসকাউ লাগানো হবে। আর আমাদের খালের পাশে বিভিন্ন ধরনের ফলদ গাছ যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হবে। নগরে কোনো পাখি নেই। আমরা বন বিভাগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রসকাউ লাগাচ্ছি। রসকাউ ফলটা পাখিদের জন্য খুবই প্রিয়। ক্লিনিং, গ্রিনিং ও ফিডিং- এ তিনটিকে বিবেচনায় নিয়ে গাছ লাগানো হবে।
তিনি বলেন, ‘সবুজে বাস, বারো মাস’- এ স্লোগানের মাধ্যমে আমরা আজকে বৃক্ষরোপণ শুরু করলাম। আমি নগরবাসীকে আহ্বান করছি যার যার বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগাবেন। আমি রাজউকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ‘প্রতি বাড়িতে এক কাঠায় অন্তত একটি গাছ’ এটি যেন রাজউক অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা ফুটপাতে ছাতিম গাছ লাগাব, ছায়া দেবে, বকুল গাছ লাগাব ফুলের গন্ধ দেবে, যেখানে বেশি জায়গা পাব সেখানে আমরা কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাব। গাছগুলো দেখাশোনার জন্য আমাদের পরিবেশ বিভাগকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে বৃক্ষরোপণের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
আতিকুল বলেন, সিটি করপোরেশন নিজেদের ইচ্ছামতো গাছ লাগাচ্ছে না। প্রত্যেকটি গাছ বন বিভাগ, পরিবেশবাদী ও নগর পরিকল্পনাবিদের পরামর্শ নিয়ে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা যে গাছগুলো লাগাচ্ছি সেই গাছগুলোর মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমে যাবে, এক্সট্রিম হিট কমবে, বায়ো-ডাইভারসিটি সংরক্ষণ হবে, ভূমির ক্ষয়রোধ হবে, ছায়া দেবে এবং অর্থনৈতিকভাবে সুফল আনবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, গাছের বিষয়ে আমার ক্লিয়ার ম্যাসেজ। আমি বারবার বলেছি, গাছ কাটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সড়কের বিদ্যমান গাছগুলো না কেটেই উন্নয়ন কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। নগরের উন্নয়নের জন্য গাছ কাটা যাবে না। ডিএনসিসি এলাকায় গাছ কাটতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হবে।
রাজউকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৩৫ শতাংশ জায়গা খালি রেখে বাড়ি-স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। প্রতিটি বাড়ির এক কাঠায় যদি একটি গাছ লাগাতে পারি তাহলে ঢাকা সবুজে ভরে যাবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব, নগর পরিকল্পনাবিদ আখতার হামিদ, গ্রিন সেভার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান রনি, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন