জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে আরও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
বুধবার (২ আগস্ট) সকাল ১১টায় সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জেন্ডার বাজেট মনিটরিং’বিষয়ক গবেষণা কার্যের ফল’ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক ও অন্য অংশীজনদের সামনে উপস্থাপিত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। গবেষণার প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান এবং ডিবিসি নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইশরাত জাহান ঊর্মী।
গবেষণার তথ্য উপস্থাপনে ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, গবেষণায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব, জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট নিয়ে গবেষণার সার-সংক্ষেপ; জেন্ডার সংবেদনশীল পলিসি ডকুমেন্টের বিশ্লেষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেন্ডার বাজেট যে প্রক্রিয়ায় করা হয় তাতে কিছু পরিমার্জনের দরকার আছে। প্রকল্পগুলোর জেন্ডার সংবেদনশীলতা যাচাইয়ের খাতগুলো কতটা জেন্ডার সংবেদনশীল তা যাচাই করা দরকার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কতটা তা দেখতে হবে। নারীর জন্য থাকা সুনির্দিষ্ট প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দগুলোর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলোতে বরাদ্দ থাকলেও বরাদ্দকে যে জেন্ডার লেন্সের মাধ্যমে দেখা হয় সেই জেন্ডার লেন্সকে পরিবীক্ষণ করতে হবে। মনিটরিং ও পরিবীক্ষণ মূল্যায়নে জোর দিতে হবে। বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বরাদ্দের ব্যয় হচ্ছে কিনা, সঠিকভাবে তার বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করার ওপর জোর দিতে হবে। সর্বোপরি মৌলিক যে বিষয়গুলো আছে যেমন- নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সরকারি যে পলিসি ডকুমেন্টগুলো আছে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে; বাল্যবিয়ে কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কর্মক্ষেত্রে, সম্পদে সমানাধিকার, নারীর অপ্রদর্শিত শ্রমের দিক চিহ্নিত করা; শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়ার হার কমানো রোধে ভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি প্রচলিত জেন্ডার রীতিনীতি ও চিরাচরিত গৎবাধা প্রথাসমূহের পরিবর্তন করা না হলে প্রকৃত উন্নয়ন আসবে না। একইসঙ্গে এ জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল নীতি ও জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন অপরিহার্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আজকের তথ্যবহুল এই গবেষণার ফল মিডিয়ায় প্রচার হওয়া দরকার। প্রণীত নীতিমালা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা আছে। নানা স্টেকহোল্ডার চলে আসে। বহু জনস্বার্থ, অভ্যন্তরীণ চাপ আছে। নাগরিক সমাজের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা ও পর্যালোচনা হওয়া দরকার যাতে জনচাহিদা তৈরি হয়। বর্তমান রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যেও অর্থনৈতিক আলোচনাগুলো আসাও জরুরি। জেন্ডার বাজেট প্রণয়নে ইতিবাচক সাড়া আসার পরিপ্রেক্ষিতে ৪৪টি মন্ত্রণালয়ে এখন জেন্ডার বাজেট আছে। ২৫-৩৪ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন আনছে কিনা তা দেখতে হবে। বাজেটের ৪৩ শতাংশ এখন জেন্ডার সংবেদনশীল এটা প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি যা বেশ অগ্রগতি বলে মনে করি। ৫০:৫০ বরাদ্দ দিলেই ন্যায্যতা আসবে তা বলা যায় না, নারী-পুরুষের চাহিদার ক্ষেত্র ভিন্ন- এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। জেন্ডার বাজেট মনিটরিং প্রতিবেদন তৈরির জন্য জনচাহিদা তৈরির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ভূমিকা পালন করতে হবে। বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি আমাদের উন্নয়নে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সূচক যা দ্রুত কমিয়ে আনতে হবে। আগামীতে প্রকল্পগুলো করার সময় জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে আরও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও ডিবিসি নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইশরাত জাহান ঊর্মী বলেন, আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারী সম্পকির্ত কার্যক্রম এবং এসডিজি বাস্তবায়নের পরিস্থিতি নিরুপণ, বিভাজিতভাবে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে কিনা তার ওপর জোর দিতে হবে। নারীদের মধ্যে যারা প্রান্তিক নারী তাদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ করা যায় কিনা সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড সাপোর্ট বৃদ্ধি এবং বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
মন্তব্য করুন