জনবহুল ও আবাসিক এলাকা থেকে সিগারেট কারখানা অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট।
রোববার (১৮ মে) তামাকবিরোধী ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত সিগারেট কারখানা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। এই এলাকা থেকে কারখানা দ্রুত অপসারণ করার দাবি জানিয়ে তামাকবিরোধী ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শাহবাগে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ক্ষতিকর তামাক কারখানার অবস্থান সরকারের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
বর্তমানে এটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, জনবহুল ও অভিজাত এলাকা। এখানে রয়েছে বহু মানুষের আবাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, অফিস-কারখানা এবং বাস টার্মিনাল। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এধরনের একটি ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানার অবস্থান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বক্তারা আরও বলেন, মহাখালী ডিওএইচএস এলাকাস্থ বিএটিবির কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিকের কারণে বাতাস দূষিত হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও সর্বস্তরের জনগণ। তামাকের কাঁচামাল ও সিগারেট পরিবহনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মহাখালী এলাকার প্রধান সড়ক ও আবাসিক এলাকায় অবাধে চলছে বিএটিবির ভারী ভারী সব যানবাহন। তামাক কোম্পানির এই বড় বড় যানবাহন চলাচলের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এতে করে এলাকাবাসী সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা)-এর উদ্যোগে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শহর থেকে সিগারেট কারখানা অপসারণ জরুরি শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল টকশো আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, উন্নয়ন পরামর্শক নাসির উদ্দিন শেখ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এড. মাসুম বিল্লাহ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন- ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষ্ণা বসু।
বক্তারা বলেন, যখনই কারখানায় উৎপাদন শুরু হয় তখনই সারা এলাকায় তামাকের কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আরও বেশি উদ্বেগের কারণ কারখানাটির অল্প দূরেই অবস্থান করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কোন অজানা কারণে দীর্ঘদিন লাল ক্যাটাগরির এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ অধিদপ্তরের দৃষ্টিগোচর হয় নাই। এমনকি এক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও দেখা যায়নি। শুধু এলাকাবাসীই নয় বরং কারখানা থেকে নির্গত ভারী রাসায়নিক ধোঁয়া সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে যা অধূমপায়ী জনগণকেও পরোক্ষভাবে গণধূমপায়ীতে পরিণত করছে।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, এইড ফাউন্ডেশন, টিসিআরসি, ডাস, নাটাব, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, মানস, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, প্রত্যাশা, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পাবলিক হেলথ ল’ইয়ার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস (বিটিসিএ), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), আইনজীবী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে এসব সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বেলা ১২টায় রাজধানীর বাড্ডায় বিভিন্ন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক প্লাটফর্ম ‘আবাসিক এলাকা থেকে তামাক কারখানা অপসারণের দাবিতে’ একটি মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে। এ সময় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের হামিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের শাগুফতা সুলতানা, পাবলিক হেলথ ল’ইয়ার নেটওয়ার্ক এর পক্ষে ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেলের সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান, বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস এর ফারহানা জামান, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির ইব্রাহীম খলিল বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে শরিক হয়।
মন্তব্য করুন