কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জে পুলিশ হেফাজতে পৃথক ঘটনায় দুজনের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এ সময় বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
শনিবার (২১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৯ জুন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকা থেকে শেখ জুয়েল নামে একজন যুবককে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক করে পুলিশ। আটক অবস্থায় থানা হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, জুয়েল পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন।
অন্যদিকে, ১৩ জুন দিবাগত রাতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকায় পুলিশের অভিযানে ফিরোজা বেগমকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকা সত্ত্বেও তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন সকালে থানা হেফাজতেই তার মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটিকে পুলিশ প্রাথমিকভাবে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করলেও, এখন পর্যন্ত থানা ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি, যা পরিস্থিতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অপরিহার্য।
উল্লেখ্য, উভয় ঘটনার ক্ষেত্রেই নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। পুলিশ এ সকল অভিযোগকে আমলে না নিয়ে আগে ভাগেই হেফাজতে মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করেছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষের এ ধরনের বক্তব্য পরিবার কর্তৃক অভিযোগগুলোর প্রতি মৌলিক নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতার পরিপন্থি। তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একতরফা ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোনো অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ার এখতিয়ার নেই। বরং, প্রতিটি অভিযোগ স্বাধীনভাবে যাচাই করে সত্য উদঘাটনের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় সংস্থার ওপরই বর্তায়।
আসক মনে করে, পুলিশ হেফাজতে নাগরিকের মৃত্যুর অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর। যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’-এর আওতায় স্পষ্টত তদন্তযোগ্য। এ ধরনের ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত অপরিহার্য, যাতে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিরপেক্ষভাবে খুঁজে বের করা যায় এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হয়। একইসঙ্গে, উভয় ঘটনার পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা প্রদান এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
মন্তব্য করুন