কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অক্টোবরে সড়কে ঝরেছে ৪৬৯ প্রাণ

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

গত অক্টোবর মাসে সারা দেশে ৪৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪৬৯ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন ১২৮০ জন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বুধবার (১২ নভেম্বর) সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য তুলে ধরে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২ জন ও ১ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৩২টি দুর্ঘটনায় ৫২৮ জন নিহত এবং ১৩১০ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৭০ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন নিহত, ১৩৭ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬.২৪ শতাংশ, নিহতের ৩৭.৫২ শতাংশ ও আহতের ১০.৭০ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ১২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ৩৪৩ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে, ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৯ জন চালক, ১১৯ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৮ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক, ৯৭ জন নারী, ৪০ জন শিশু, ১ জন আইনজীবী, ২ জন সাংবাদিক, প্রকৌশলী ৩ জন এবং ১৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন ৪ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন র‌্যাব সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন আইনজীবী, ৩ জন প্রকোশলী, ১৩৩ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯৯ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, ৩৫ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘটিত ৭৭২টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৫.৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১.২৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.০৬ শতাংশ বাস, ১২.৮০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪.২৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৮.৪১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৪.৭৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯.৮৯ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৫.১৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯.৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৪.৬৯ শতাংশ বিবিধ কারনে এবং ০.৬৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪২.৪৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩.৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৭.২৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৬৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৬৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ :

১. বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশের সড়কের মাঝে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি, এসব গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।

২. সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, নছিমন-করিমন অবাধে চলাচল।

৩. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা।

৪. সড়কে মিডিয়ান বা রোড ডিভাইডার না থাকা, সড়কে গাছপালায় অন্ধবাঁকের সৃষ্টি।

৫. মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি, যানবাহনের ক্রটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।

৬. উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।

৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন।

৮. বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ :

১. বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সড়ক-মহাসড়ক জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা।

২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।

৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।

৪. গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে ফুটপাতসহ সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা করা।

৫. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।

৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।

৭. সড়ক পরিবহন আইন উন্নত বিশ্বের আদলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রয়োগ করা।

৮. সারা দেশে উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা।

১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।

১২. ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী চালকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাট ও আয়কর অব্যাহতি দিতে হবে।

১৩. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ড. ইউনূসের দ্বৈত দায়িত্বে ‘স্বার্থের সংঘাত’ দেখছেন সালাহউদ্দিন

বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের চাহিদা

বৃহস্পতিবার খোলা থাকবে শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান : মালিক সমিতি

আমীর খসরুর আসনে লড়তে চান এনসিপি নেতা যুবরাজ 

‘যারা জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে’

রাজধানীতে পুলিশের গাড়িতে আগুন

কপ৩০ সম্মেলন / জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকাতে ব্রাজিলের চেষ্টা

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর / ‘বাংলার মানুষ কাঁদো, ভোলার গাছে গাছে ঝুলছে মানুষের লাশ’

সব জায়গায় একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার কতটা ঝুঁকি

সৌদিতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ

১০

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বিসিবিকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য গামিনির

১১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের আগুন

১২

অক্টোবরে সড়কে ঝরেছে ৪৬৯ প্রাণ

১৩

যা আগে ক্রিকেটে দেখা যায়নি, তা ঘটবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে

১৪

আড়াই কোটির টাকার হেরোইনসহ মাদক কারবারি আটক

১৫

‘ফ্যামিলি ম্যান ৩’ থেকে সরে যাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন পরিচালক সুপর্ন

১৬

চাকরির ইন্টারভিউতে যে ১২টি সাধারণ ভুল আমরা করি

১৭

গুণগত ব্যবস্থাপনায় ইউল্যাবের আইএসও ৯০০১:২০১৫ অর্জন

১৮

উত্তরায় মাইক্রোবাসে আগুন

১৯

নতুন নিরাপত্তা চুক্তি করল অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া

২০
X