

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই আমাদের চালিকাশক্তি। আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণ করেন উপদেষ্টা। পাশাপাশি জুলাইয়ে আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘তাদের আত্মত্যাগই আমাদের চালিকাশক্তি।’ নতুন প্রজন্ম যাতে চাকরির পেছনে না ছুটে উদোক্তা হতে পারে সেজন্য প্রশিক্ষণ বাড়ানোর উপর জোর দেন উপদেষ্টা। এ সময় জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বিসিকের কর্মসূচির প্রশংসা করেন তিনি এবং তা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
বিসিকের কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, বিসিক ৬৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। দেশব্যাপী শিল্প বিকাশে এটি কাজ করছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত বাংলাদেশের জন্য ২০২৫ সালের এ সম্মেলন একটি সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ, যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নযাত্রায় নতুন গতি সঞ্চার করবে।
তিনি আরও বলেন, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘ সূত্রতা এখনই ঝেড়ে ফেলতে হবে। সামনের বাংলাদেশে এমন বিসিক দেখতে চাই যা স্বচ্ছ ও উদ্যোক্তাবান্ধব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সামনের বাংলাদেশে এমন বিসিক দেখতে চাই, যা স্বচ্ছ ও উদ্যোক্তাবান্ধব। আমি বিসিক সম্মেলনের সব আয়োজনের সফলতা কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) দুই দিনব্যাপী ‘বার্ষিক সম্মেলন ও কর্মশালা-২০২৫’ উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ছিল এ আয়োজনের প্রথম দিন। এ দিন বিসিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
পরে স্বাগত বক্তব্য এবং বিসিকের কর্মকাণ্ডের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন বিসিকের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম। অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
এ ছাড়া এ দিন সম্মেলন কক্ষে দুপুর সাড়ে ১২টায় ’৬৯ বছরে বিসিক: অর্জন, সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় বিসিকের নানা কার্যক্রমের প্রসঙ্গ উঠে আসে এবং অংশগ্রহণকারীরা তা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর তার বক্তব্যে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সেক্টরের সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সংযুক্ত করার চেষ্টা করছি। এ জায়গাটায় আমরা বিশেষভাবে ফোকাস করছি। যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি পণ্য কেনা অনেক বেড়ে গেছে— তারা সেখানে বসে চায়না থেকে পণ্য কিনে নিচ্ছে। তাহলে আমাদের জামদানি কেন বিদেশ থেকে কিনতে পারবে না!
গভর্নর আরও বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদন বিস্তার, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি খাত অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তিনির্ভর ও উদ্ভাবনভিত্তিক শিল্পায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিসিক প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, যা শিল্প খাতকে আরও টেকসই করে তুলেছে।
বিসিকের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের শিল্পায়নের বাস্তব রূপ। আমরা আমাদের রূপকল্প ও অভিলক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের উন্নয়নধারায় এবং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমেই আমরা একটি সুখী-সমৃদ্ধ-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব— এই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে বিসিক নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
স্বাগত বক্তব্যের এক পর্যায়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বিসিকের চেয়ারম্যান বলেন, পরিবেশবান্ধব নতুন শিল্পনগরী/শিল্প পার্ক স্থাপন, শিল্পনগরীর অনাবাদ্দ প্লটগুলোর ১০০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌচাষ উন্নয়নসহ বিসিকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন