নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চার দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে তিনি দিল্লি থেকে ঢাকায় আসেন। উজরা জেয়ার সঙ্গে এই সফরে আরও এসেছেন দেশটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
রাজধানীয় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে উজরা জেয়াকে স্বাগত জানান। এ সময় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ নিয়ে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর উজরা জেয়াই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফরে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম সম্পর্কিত বিষয়, মানবপাচার ও রোহিঙ্গা সংকট গুরুত্ব পাবে।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউএসএইডের এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌরও উজরা জেয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকায় নেমেই অঞ্জলি কৌরসহ দুই মার্কিন প্রতিনিধি কানেক্টিং ফ্লাইটে কক্সবাজার গেছেন। আগামীকাল বুধবার উজরা জেয়াও কক্সবাজার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে যাবেন। তবে ডোনাল্ড তার সঙ্গে যাবেন কিনা এখনো জানা যায়নি।
সূত্র জানায়, উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু’র সফরে মানবাধিকার ও নির্বাচন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হবে। তাদের সফরটি চার দিনের বলা হলেও তারা আসলে দুদিন বাংলাদেশে আলোচনার সুযোগ পাবেন। কারণ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এসে তারা ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে সার্বিক পরিস্থিতি জেনেছেন। কাল বুধবার (১২ জুলাই) কাটাবেন কক্সবাজার। আর আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সরকার, নাগরিক সমাজ ও রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৃহস্পতিবার সকালে উজরা ও লু’র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। একই দিনে তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায়ও অংশ নেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশ সফরে থাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন তারা।
জানা গেছে, এ সফরে তারা নির্বাচন এজেন্ডার আওতায় অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সরকারের পাশাপাশি রাজনীতিকসহ সংশ্লিষ্টদের মনোভাব জানার চেষ্টা করবেন। মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার এজেন্ডায় শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামের হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়েও জানতে চাইবেন। হাই-প্রোফাইল এই মার্কিন সফরে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে আলোচিত নাম ডোনাল্ড লু থাকায় সফরটির দিকে চোখ সরকার, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজসহ সবার। এ সফরের আগে ওয়াশিংটনে গিয়ে হোমওয়ার্ক করে এসেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
এদিকে গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লুর সফরের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন দূরত্ব কিছুটা কমেছিল। এবার মার্কিন প্রতিনিধিরা ভারত হয়ে বাংলাদেশ আসছেন বলেও ঢাকা, ওয়াশিংটন ও দিল্লির সম্পর্কের সমীকরণও আলোচনায় রয়েছে। দিল্লি-ওয়াশিংটন শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পরপরই মার্কিন প্রতিনিধিদের ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসার বিষয়টিও বিশেষ বার্তা দেয়। কারণ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে দিল্লির ভূমিকা বরাবরই ইতিবাচক।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা আসার আগে উজরা জেয়ার তিন দিনের ভারত সফরে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশদ তথ্য দিতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে নিয়েছিল দিল্লি। মার্কিন প্রতিনিধিদের এ দেশের গণতন্ত্র, বর্তমান রাজনীতির পাশাপাশি গত দেড় দশকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় শেখ হাসিনার সরকারের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
নিজেদের বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপে ন্যুব্জ বাংলাদেশ দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার নজির স্থাপন করেছে। একইসঙ্গে ঢাকা, দিল্লি ও ওয়াশিংটন একযোগে কাজ করলে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব প্রতিরোধেও সহায়ক হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে ভারত। আঞ্চলিক অর্থনীতিতেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছে দিল্লি ও ওয়াশিংটন।
মন্তব্য করুন