ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে ভারতীয় পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ পুলিশেরও একটি দল ভারতে যাবে। আগামী রোববার (২৫ মে) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারির কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, দ্রুতই আমাদের একটি দল ভারত যাবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আগামী রোববার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ আসতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশে এসেছে ভারতীয় পুলিশের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর কর্মকর্তা অন্তু কুমার ও জয়দীপসহ চারজন এসেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তারা।
এ সময় ডিবি ওয়ারী বিভাগের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ডিএমপি ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে তারা রাত সোয়া ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। ভারতীয় পুলিশের সদস্যরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় পুলিশের সদস্যরা ঢাকাতেই থাকবেন, শনিবার (২৫ মে) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা আবার ডিবি কার্যালয়ে আসবেন।
এর আগে ভারতীয় পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ভারতীয় পুলিশের যে টিম ডিবিতে এসেছেন তারা আমাদের হেফাজতে থাকা আসামিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ডিবির কাছে যে তথ্যগুলো আসামিরা জানিয়েছিলেন তারা ভারতীয় পুলিশের কাছে একই তথ্য স্বীকার করেছে।
নিহত সংসদ সদস্যের মরদেহ উদ্ধারে ভারতীয় পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ভারতীয় পুলিশ যে আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে তার মাধ্যমে চেষ্টা করছে এমপির মরদেহ কোথায় ফেলেছে তা খুঁজে বের করার। মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে ভারতীয় পুলিশ। আশা করছি দ্রুতই পেয়ে যাবে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন তিনি। এরপর ১৩ মে যান কলকাতার নিউটাউন। সেখানে আরও কয়েকজনের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে যান। ওই ফ্ল্যাটেই হত্যার শিকার হন তিনি। তবে তা প্রকাশ হয় আরও পরে।
কয়েকদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গোপাল কলকাতায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে এমপি আনারের পরিবার থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেও জানানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও ডিবি নিখোঁজ আনারের সন্ধান করতে গিয়ে ওই অভিজাত ফ্লাটের সন্ধান পায়। তদন্তে জানতে পারে এমপি আনার হত্যার শিকার হয়েছেন এবং তার মরদেহ গুম করে ফেলা হয়েছে।
দুই দেশের পুলিশের তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে। তারা হলেন- আমানুল্লাহ, ফয়সাল ও শিলাস্তি রহমান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহিন। যিনি নিহত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বন্ধু এবং অবৈধ সোনা কারবারের অংশীদার। ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বে এক সময়ের চরমপন্থী নেতা আমানুল্লাকে দিয়ে সংসদ সদস্যকে হত্যা করান।
হত্যার সঙ্গে জড়িত শাহিনসহ আরও বেশ কয়েকজন পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি ডিবি। এমপি আনার হত্যার খবর বাইরে আসার আগেই দেশ ছেড়েছেন শাহিন। নেপাল, দুবাই হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানে তার নাগরিকত্ব রয়েছে।
শাহিন দেশ ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সময় আমি ভারতে ছিলাম না। আমার আইনজীবী বলেছে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলতে। মানুষ দেশে অনেক কথাই বলে। যদি কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে দেখাক।
ঘটনা কবে ঘটেছে তা তিনি পত্রিকায় দেখেছেন দাবি করে শাহিন বলেন, আমি যদি ফ্ল্যাট ভাড়া নেই। আমি কি আমার ফ্লাটে এ ধরনের কাজ করবো? আমার পাসপোর্ট রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখন বলা হচ্ছে আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কীভাবে আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি, কোথা থেকে পেলাম আমি এত টাকা? এখন এগুলো মানুষ বললে আমার কি করার আছে। ঘটনা কবে ঘটেছে সেগুলো আমি পত্রিকায় দেখেছি। সে সময় আমি বাংলাদেশে ছিলাম।
মন্তব্য করুন