বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে এবং সব ধর্মের মানুষ আওয়াজ তুলে বলবে আমরা এখানে সংখ্যাগুরুও নই, কেউ সংখ্যালঘুও নই, আমরা সবাই সমান।
তিনি বলেন, আমি চাই এখানে (বাংলাদেশে) সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু কথাটির কবর রচনা হোক।
সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীতে মন্দির পরিদর্শন শেষে পূজা কমিটি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিত এবং নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মন্দির কমিটির সভাপতি বাবু তপনেন্দ্র নারায়ণ হোড়ের সভাপতিত্বে ও বাবু হরিপদ দাস দোলনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাবু মনোজ সরকার, বাবু শিব শংকর সাহা, নিথীশ কুমার সাহা, ডাক্তার বিপ্লব।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ডা.ফখরুদ্দিন মানিক,ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার- মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ, আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় এদেশে আমাদের যাদের জন্ম হয়েছে আমরা সবাই বাংলাদেশি। একজন বাংলাদেশি নাগরিককে আমার দেশের সংবিধান যে অধিকার দিয়েছে সকল ধর্মের নাগরিক ইন্ডিভিউজিয়াল (স্বতন্ত্র ব্যক্তি) নাগরিক সমানভাবে তা ভোগ করবে। আমরা তার কমবেশি দেখতে চাই না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মেধা যোগ্যতার ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করবে এদেশের তরুণ সমাজ। এইখানেও আমরা কোনো ব্যবধান বরদাশত করব না। দলের জনশক্তিদের সততার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এই ধরনের কোনো অসমতা করাকে, দুর্বৃত্তায়নকে প্রশ্রয় দেই না। কাজেই এই কাজের জন্য আমাদের কাউকে বহিষ্কার করারও প্রয়োজন হয় না। যেহেতু এখানে তৈরিই হয় না এমন কিছু, বহিষ্কার করব কেন? দরকার তো নেই আমার।
জামায়াত আমির বলেন, এই আঙিনাকে আমরা পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই। আমি শুধু আমাদের কথা বলছি না। আমি বলব যারাই রাজনীতি করেন মেহেরবানি করে একটা রাজকীয় মন নিয়ে আসেন। ফকিরের মন নিয়ে রাজনীতে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি রাজনীতি করবেন; আপনি একজন ভিক্ষুকের সন্তান হতে পারেন; কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু মনটা আপনার হতে হবে রাজকীয় মন।
তিনি বলেন, আপনি সমস্ত মানুষকে ধারণ করবেন। আপনি আত্মাকে বাদ দিয়ে বাকি সবাইকে শ্রদ্ধা করবেন। আপনি আত্মাকেসহ সবাইকে ভালোবাসবেন- তখনই আপনার জন্য রাজনীতি মানায়। রাজনীতির নামে লুটপাট, নিজের কপাল-কিসমত গড়া আর দুইদিন দশদিন পরে বলবেন যে আমার দেশ এখন সোনালি যুগে পদার্পণ করেছে আর এই কথা শুনতে চাই না। এই কথা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি।
ডা. শফিক বলেন, আগে আপনি সোনার মানুষ হন তারপর আমার সোনার দেশ হয়ে যাবে। আমি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে অনুরোধ করব যে আসুন আমরা পরস্পরকে ভাই এবং বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি। তাহলে হিংসা এবং হানাহানি থাকবে না। আর কয়দিন পরপর এখানে এসে এসে পাহারা দিতে হবে না। আমার বিবেক আমাকে পাহারা দিবে। বলবে! তুমি মানব সন্তান; তোমার ধর্মের প্রতি তুমি যেমন শ্রদ্ধাশীল, তেমনি অন্যের ধর্মের প্রতিও তোমার সহনশীল হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো ধর্ম কাউকে দুর্বৃত্ত হতে শেখায় না। হিংসা-প্রতিহিংসা শেখায় না, আমি তা বিশ্বাস করি না। এ রকম যদি কেউ হয় তাহলে ধর্মই না। ধর্ম মানুষকে পরিশীলিত করে। ধর্ম মানুষকে মানুষ বানায়। মানুষকে পশু বানায় না। বরং পাশবিক চরিত্র যাদের আছে তাদেরও মনুষত্বের দিকে নিয়ে আসে।
জামায়াত আমির বলেন, আসুন হাতে হাত মেলাই, দেখানোর জন্য না অন্তরে ধারণ করি। মুনাফিকের হাত নয় ভালো মানুষের হাত মেলাই, যেই হাত ভাঙবে কিন্তু ছুটবে না। লেগে থাকবে একে অন্যের সঙ্গে। যদি কোনো দুঃখ আসে তাহলে সকলে মিলে এই দুঃখ বরণ করে নেবো, যদি কোনো সুখ আসে তাও ভাগাভাগি করে নেবো সুখ-দুঃখের আমরা সমান অংশীদার হবো।
সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক হয়েছে এই দেশবাসীর ওপর... আসুন আমরা এখন ভালো হয়ে যাই। আমরা সত্যিকারের একটি সম্প্রীতির আওয়াজ যেমন তুলি, মুখে আওয়াজের দরকার নাই, বাস্তবেই প্রমাণ করি যে এই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।
ডা. শফিক বলেন, আমাকে একটা ফুলের তোড়া দিয়েছিলেন, আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আমি তোড়াটা হাতে নিয়ে বলেছিলাম- আমি এটা উৎসর্গ করলাম সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্য। আবারও আমার শেষ কথা আসুন একটা সম্প্রীতির বাংলাদেশ, সত্যিকারের অর্থে আমরা হাতে হাত মিলে গড়ে তুলি।
মন্তব্য করুন