ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (আইইবি) এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিংয়ে (ইওজিএম) যোগ দিতে আসা বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীদের ওপর আওয়ামী লীগপন্থি প্রকৌশলীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১০ মে) দুপুর ১২টায় রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ভবনের মূল ফটকে এ হামলা হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
প্রকৌশলীরা জানান, আইইবির সাবেক সেক্রেটারি আওয়ামী পন্থি প্রকৌশলী মিয়া মো. কাইয়ুম, মহিবুর রহমান সবুজ, তারিকুজ্জামান তালুকদার শাহীনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন বহিরাগত ইওজিএমে হামলা করে। এতে পুলিশ সদস্যসহ আইইবির বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী গুরুতর জখম হন।
আহতরা হলেন— ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবদুল্লাহ আল মামুন, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর, এসআই যাক্কার, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, মুহাম্মদ কামরুল হাসান খান, মো. আরাফাত রহমান রাকু, নাহিদুল ইসলাম, মুক্তাদির বিল্লাহ, সালমান খান, এমএম জিহান ও বাদল আহমেদ।
বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, শনিবার বেলা ৩টায় আমাদের এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিং ছিল। দুপুর ১২টার দিকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়াররা এ মিটিং পণ্ড করার জন্য হামলা চালায়। তারা আমাদের ওপর ইট-পাটকেল ও গরম পানি নিক্ষেপ করেছে। এতে আমাদের ৮ থেকে ১০ জন আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন বলেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের সময় দীর্ঘদিন আইইবি জিম্মি করে রেখেছে। এখন আমরা যখন নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে এসেছি, তখন তারা হামলা চালিয়েছে। এদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর কালবেলাকে বলেন, তাদের অতর্কিত হামলায় আমরা বেশ কয়েকজন আহত হয়েছি। আমার বুকে একাধিক ইট লেগেছে। তবে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম কালবেলাকে বলেন, দুপুর ১২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে হামলা হয়েছে। এতে পুলিশের ৭ থেকে ৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা গরম পানি নিক্ষেপ করেছিল। পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এবিষয়ে আইইবি ঢাকা সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী একেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু জানান, বিকেলে আইইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ইওজিএমে মূলত গঠনতন্ত্র মোতাবেক ২০২৬-২০২৭ সেশনের নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
ইওজিএমে আইইবির প্রকৌশলী নেতারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর যারা পরিকল্পিতভাবে ইওজিএম ঠেকাতে হামলা ও সাধারণ প্রকৌশলীদের রক্তাক্ত করেছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে আইইবি থেকে তাদের সদস্য পদ বাতিল এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, আইইবির নতুন কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনার জন্যই ইওজিএম আহ্বান করা হয়েছে। কেননা, আইইবির নির্বাচন নিয়ে গঠনতন্ত্রে বিস্তারিত বলা আছে, ৩০ জুনের মধ্যেই অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটা নির্বাচন কমিশন বা সিইসি গঠন করতে হবে, ভোটার লিস্ট করতে হবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। যা সিইসি সিদ্ধান্ত দেবে। আমরা ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটির কাছে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাই।
তিনি বলেন, সকালে মুষ্টিমেয় কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে বহিরাগতরা এসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। ফ্যাসিস্টদের সহযোগী কয়েকজন সন্ত্রাসী হামলা চালালে প্রকৌশলী, পুলিশ ও সাংবাদিকরাও আহত হয়েছে। আমরা নিন্দা ও তদন্ত সাপেক্ষে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আহতদের পাশে থাকবো।
মন্তব্য করুন