সুশীল সমাজ নিজেদের জনগণের অভিভাবক মনে করে- এমন মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, তারা (সুশীল) নানা ডিকটেশন দেন। কিন্তু কতটুকু জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তারা দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্বে তাকান না। তারা তাকান সুদূর পশ্চিমে। সেখান থেকে যে বাণী আসে সেভাবে তারা এখানে ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল-২০২৩’ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীও দেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রদানকারী সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা করেন।
রুস্তম আলী ফরাজীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। এ দেশের জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমাদের ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন দরকার। সেজন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে। নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ড সোজা করে নির্বাচন করবে।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি অস্পষ্টতা, আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে। অনেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কখন কীভাবে নির্বাচন হবে- এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন বিএনপি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার দাপটে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। সরকার গঠনের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার সেই সংখ্যক এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেই নির্বাচনে জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। ২০১৮ সালে অধিকাংশ জায়গায় আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। এখানেও জনমতের প্রতিফলন হয়নি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সংসদে বিল পাস হয়েছে দলিল যার জমি তার। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্রের এই মালিক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা দলিল নিয়ে বসে আছে কিন্তু মালিকানা তাদের হাতে নেই। সোনার বাংলার গণতন্ত্র আজ কোথায় যাচ্ছে?
বিলের আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন নিয়ে একটি মানসিক সমস্যা হয়। যারা নির্বাচিত হন তাদের কোনো নির্বাচনী এলাকা আছে কিনা?- এই বিষয়টি তারা বুঝতে পারেন না। এটা নিয়ে তারা নিজেরাও বিব্রতবোধ করেন। নির্বাচনে মহিলাদের বেশিসংখ্যক নমিনেশন দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যবাধকতা করা যায় কিনা সেই প্রস্তাব দেন এই এমপি।
রওশন আরা মান্নান বলেন, অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মহিলারা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে নির্বাচন করে জনপ্রিয়, তাদের কি দরকার আছে সংরক্ষিত আসনের। তাদের দুর্বল বলা যায় না। মহিলারা অনেক বছর ক্ষমতায় কিন্তু সবাই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী কিংবা শিরীন শারমিন চৌধুরী হতে পারবেন না। আরও এক যুগে হবে কি না... দেশে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্য সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল–২০২৩’ পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের জামানত হবে ২০ হাজার টাকা। বিদ্যমান আইনে সংরক্ষিত আসন শূন্য হলে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আছে। সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। বিলে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নারী আসন বণ্টন পদ্ধতিতেও সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন