আওয়ামী লীগ সরকারের অবৈধ ক্ষমতাকে সুরক্ষার জন্য এখন রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিপীড়ণ যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ মরণকামড় দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে। গতকাল ঢাকা জেলা আদালত প্রাঙ্গণে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট আয়োজিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ফরমায়েশি সাজার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে পুলিশ কাণ্ডজ্ঞানহীন নারকীয় হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জনের মতো পুরুষ ও মহিলা আইনজীবী।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, এ দেশের জনগণ নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রত্যাশী। বাংলাদেশের মানুষ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন, ন্যায়বিচার, বহুমাত্রিকতা ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। বাংলাদেশি জাতি সুপ্রাচীন, এখানে নীতি ও ন্যায্যতার ধারণা সুদীর্ঘকালের। সেই কারণে মানবাধিকারের পক্ষে অন্তর্নিহিত তাগিদ মানুষের মনে ক্রিয়া করে। বর্তমানে বাংলাদেশে কতৃর্ত্ববাদী শাসনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরাই সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছে। নিপীড়ন-নির্যাতন চরম মাত্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে গণতন্ত্রকামী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে এক উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দেশ থেকে আদালতের ন্যায়বিচারের ক্ষমতা নি:শেষ হয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদেরসহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন বিচারিক অসদাচরণের। আওয়ামী চেতনায় রঞ্জিত বিচারকরা অন্যায্য আচরণ করছেন। বর্তমানে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পালাক্রমে আদালতের সাজা ইতোপূর্বে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর হুমকির হুবহু প্রতিধ্বণি। জেলখানাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে পূর্ণ করার পরও প্রধানমন্ত্রীর আশা মেটেনি। আদালতের বারান্দাগুলোয় হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীদের ভিড়ে এক দম বন্ধ করা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাজিরার নামে আদালতকে এখন হিটলালের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। সরকার ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী নেতাকর্মীদের টুঁটি টিপে ধরার জন্য আদালতকে ব্যবহার করছে।
রিজভী আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো পাতানো নির্বাচন করতে আবারও মরিয়া হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। এই কারণে করুণা ভিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু কোথাও হালে পানি পাচ্ছেন না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার ও জনগণের ইচ্ছার পক্ষে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরলেও আর কোনো লাভ হবে না। নির্যাতন ও বৈষম্য রোধ এবং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার কথা ও কাজের মধ্যে কখনোই মিল ছিল না। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার কথা ছিল না, কিন্তু ক্ষমতায় এসেই অসৎ উদ্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন, যার পরিণতি আমরা দেখেছি ২০১৪ ও ২০১৮ এর একতরফা জালিয়াতির নির্বাচনে। অথচ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা অন্যের ব্রেনচাইল্ড হলেও সেটি আওয়ামী লীগের কোলে লালিত পালিত হয়েছে একটি জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিধ্বংসী আন্দোলনে। অথচ শেখ হাসিনা গোপন কথাটি গোপনে রেখে ক্ষমতায় এসেই ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মুছে দেন চিরদিন দেশের জনগণের প্রভু থাকার জন্য। আর তাই গণতন্ত্রের আওয়াজ পেলেই তার পুলিশ বাহিনীর বুটের আঘাতে সেটি পদপিষ্ট করতে চান। গতকাল ঢাকা জেলা আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা পূর্বপরিকল্পিত, শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমেই হাইকোর্ট ও জজকোর্টের পুরুষ ও নারী আইনজীবীদের রক্ত ঝরিয়েছে দলদাস পুলিশ। পুরুষ পুলিশের নারী আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ সভ্যতার ভয়ঙ্কর কলঙ্ক। আমি আইনজীবীদের ওপর এই পৈশাচিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি, যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আহত আইনজীবীদের নাম, সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কতৃর্ক হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, গুরুতর আহত হন- মাহবুবুর রহমান খান, দেওয়ান রিপন, মোজাহিদুল ইসলাম সায়েম, কে এম মিরাজ হোসেন, সাইদুর রহমান সোহাগ, কে এম বরকত সবুজ, মাহবুব আলম আক্তার, শফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম সুমন, হাজী মো. মহসীন, কাজী পনির, এস এম হুমায়ুন কবির, মোঃ কাইয়ুম, রোকনউদ্দিন মিয়া, মারজিয়া হীরা, কাজী রওশন দিল আফরোজা, শাহনাজ শিরীন, হাসেমী, মো. আবু সায়েম, রাফিজা আলম লাকী, শাহীনা খুকী, নজরুল ইসলাম জাহিদ, মোঃ কাইয়ুম, মাজেদুর রহমান সোহাগ, নারগিস পারভীন মুক্তি, আখলিমা আক্তার আলো, মাজেদুর রহমান সোহাগ, আখলিমা আক্তার আলো, এইচএম মিরাজ, হাসেমী, মো. দেলোয়ার জাহান রুমী, রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, শাহীনুর বেগম সাগর ও দেওয়ান রিপনসহ মোট ৩৬ জন অ্যাডভোকেট।
রিজভী বলেন, উক্ত আইনজীবীদের উপর হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- কোতওয়ালী থানার উপপুলিশ পরিদর্শক মুহিত, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন, নাজমুল (ওসি অপারেশন), লালবাগ জোনের এডিসি শহিদুল ইসলাম, কোতওয়ালী থানার ওসি শাহিনুর রহমান, ওসি তদন্ত মেহেদী হাসান।
এ ছাড়া গত ২৮ ও ২৯ জুলাই হতে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মোট আহত ১৪৩০ জন, মোট মামলা ৩৩৩ টি, মোট গ্রেফতার ১৮২০ জন, মোট আসামী ১৪,১৫০ জন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জমান সেলিম, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটু, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন