গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, কোনো শক্তি, কোনো দমন-পীড়ন আমাদের লড়াইকে থামাতে পারবে না। আপনাদের যদি সাহস থাকে ঠেকান, আমরা রাস্তায় নামব। আমাদের কর্মীরা দেশপ্রেম নিয়ে রাস্তায় নামবে। আপনাদের কথায় আমরা ভয় পাই না।
সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে এবং একদফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতালের সমর্থনে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এই দেশ লাখ লাখ মানুষের রক্ত দিয়ে তৈরি। এ দেশে জনগণের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটা করতে হলে প্রয়োজন সরকারে বিদায় এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা, এই ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা বদল করে দেশে একটা নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। এর জন্য গণতন্ত্র মঞ্চ লড়াই করছে।
লড়াই চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, ভোটের অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, সুযোগের সমতা। সেই লড়াই চলবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিএনপিসহ যুগপৎ ধারায় ৩৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। এর বাইরেও ৬৩টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাচ্ছে না। প্রতিদিন তারা জনগণকে নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছি। এই নির্বাচন তামাশার, দেশের নাগরিক এবং দেশের বিরুদ্ধে। মানুষ তাতে সাড়া দিয়েছে।
ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা নিয়ে সাকি বলেন, আজ সকালে আমরা দেখলাম, তেজগাঁওতে চলন্ত ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে আগুনে পুড়ে বেশ কয়েকজন মানুষ হতাহত হয়েছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ রকম নাশকতার সঙ্গে চলমান আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নাই। তারা (সরকার) নাশকতা করে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে চায়।
তিনি বলেন, সরকারবিরোধী দলের নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে আন্দোলন দমন করতে চায়। এটা আমরা আগেই বলেছি। এখন সরকারের কৃষিমন্ত্রীও বলেছেন, তারা ভেবেচিন্তে পরিকল্পিতভাবে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে রেখেছেন। তাদের জেলে না রাখলে এখন যে হরতাল-অবরোধে গাড়ি চলে সেটা নাকি চলত না।
জাতীয় পার্টিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বললেন, ভিক্ষার সিট নিয়ে নির্বাচন করেন না। তার কয়েক ঘণ্টা পরে আমরা দেখলাম ২৬টি আসন সমঝোতা করে তারা নির্বাচনে গেছেন। জি এম কাদের সাহেবকে জাতির কাছে বলতে হবে, এই ২৬টি আসন কী ভিক্ষার?
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা পরিপত্র দিয়েছে। সেটাকে ধরে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বেআইনি। এটা সংবিধানবহির্ভূত একটা নিষেধাজ্ঞা। তাদের যেমন ভোট চাওয়ার অধিকার আছে, আমাদেরও নির্বাচনের বিরোধিতা করার নাগরিক অধিকার আছে। নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিকামী মানুষের অধিকার বন্ধ করতে পারবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, অনতিবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞার পরিপত্র প্রত্যাহার করুন।
এ সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের পরবর্তী কর্মসূচি
বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং একতরফা নির্বাচন ও পরিকল্পিত সহিংসতার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন