শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মালয়েশিয়ায় এক ঘরে বন্দি ৮০ বাংলাদেশি 

মালয়েশিয়ার একটি ক্যাম্পে কয়েকজন প্রবাসী। ছবি: কালবেলা
মালয়েশিয়ার একটি ক্যাম্পে কয়েকজন প্রবাসী। ছবি: কালবেলা

অনিয়মের অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মালয়েশিয়ার কলিং ভিসার কার্যক্রম। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় ধরে উভয় দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেন দরবারের পর ২০২২ সালে আবারও চালু হয় কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর প্রচুর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। ২০২২ সালের পর এখন পর্যন্ত পৌঁনে ৪ লাখের মতো কর্মী মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। আরও ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

তবে অসংখ্য কর্মীর অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ৩ থেকে ৫ মাস হয়ে গেলেও তাদেরকে কোনো কাজ দিচ্ছেন না নিয়োগ কর্তারা। আবার কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে কোম্পানি থেকে পালিয়ে গেছেন, যদি অন্য কোথায়ও কাজ পাওয়া যায় সেই আশায়। সব মিলিয়ে শত শত শ্রমিক কাজ না পেয়ে দেশটিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

শ্রমিকদের দাবি, প্রবাসীদের জীবনে এক অভিশাপের নাম ‘প্রতারণা’। পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে গরু-ছাগল, জমি বিক্রি করে, চড়া সুদে টাকা এনে এজেন্সিকে দিয়ে ভালো কাজের আশায় পা রাখেন প্রবাসে। যাদের অনেকেই হচ্ছেন প্রতারিত। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় গিয়ে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন ৭০ থেকে ৮০ জন বাংলাদেশি।

শ্রমিকদের অভিযোগ, মদিনা ওভারসিস, সিগনেচার ওভারসিজ, ফোর সাইন, আল হেরা রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার কোর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন এসডিএন বিএইচডি কোম্পানিতে ৩ থেকে ৪ মাস আগে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দেশ থেকে যাবার আগে এজেন্সিগুলো ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় পৌঁছার পরে তাদের কাজ নেই, খাবার নেই। এক ঘরে একসঙ্গে প্রায় বন্দি হয়ে থাকতে হয় ৭০ থেকে ৮০ জনকে।

এক প্রবাসী শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, আমি পাঁচ মাস মালয়েশিয়ায় এসেছি কিন্তু কোনো কাজ দেয়নি। কাজ দেবে দেবে করে ঘোরাচ্ছে। আমার রিক্রুট এজেন্সি এআর ইন্টারন্যাশনাল গতকাল বলেছে যে, তোদের কাজ দিতে পারব না তোরা বাংলাদেশে চলে যা।

অপর এক শ্রমিক বলেন, আমাদের ৪৬ জনকে একসঙ্গে আনা হয়েছে। কথা ছিল এখানে পৌঁছার পর কোম্পানি আমাদের রিসিভ করে নেবে। কিন্তু আমাদের রাখা হয়েছে একটি ক্যাম্পে। এখানে আমরা খুব কষ্টে আছি। অথচ আমাদের রাখার কথা ছিল কোম্পানিতে।

শ্রমিকরা জানান, দেশে পরিবারের কাছ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা এনে নিজেদের খাবার কিনে জীবন চালাতে হচ্ছে। জমি বিক্রি করে, ঋণ করে, সুদের ওপর টাকা নিয়ে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা এজেন্সিকে দিয়ে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন তারা। দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর বদলে উল্টো দেশ থেকে টাকা এনে জীবন বাঁচাতে হচ্ছে তাদের। যদিও চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের প্রাথমিক ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়োগ এজেন্সি ও মালয়েশিয়ার কোম্পানির।

একই রকম অভিযোগ করে আরও এক শ্রমিক বলেন, আল হেরা এজেন্সি মাধ্যমে দেড় মাস হয়ে গেছে আসছি। কিন্তু কোনো কাজ নেই।

অন্য একজন শ্রমিক বলেন, তারা একটা দিনও আমাদের খোঁজ নেয়নি। কাজ দেবে আর কি? আমরা মরে গেলাম নাকি বেঁচে থাকলাম সেটাই তো এজেন্টে জানে না। তারা এখন আছে হজ নিয়ে ব্যস্ত। এই যে হাজার হাজার লোক এনেছে এদের কি হবে। পাঁচ মাস এসেছি, এখন কোনো কাজ নেই, খাবার নেই। দেশ থেকে টাকা আনছি আর খাচ্ছি।

শ্রমিকরা আরও অভিযোগ করেন, মদিনা ওভারসিস এজেন্সির মালিক আগে তাদেরকে আশ্বস্ত করলেও এখন আর তিনি ফোনকল ধরছেন না। আর মালয়েশিয়ার কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে কাজ নেই। অন্য কোথাও কাজ করার জন্য শ্রমিকরা তাদের পাসপোর্ট নিতে চাইলে জনপ্রতি আরও ৪ হাজার রিঙ্গিত বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ টাকা করে কোম্পানিকে দিতে হবে। এ যেন তাদের ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি এএসএম জাহিদুর রহমান বলেন, কাজ না পাওয়া ও অতিকষ্টে দিনযাপন করা এসব শ্রমিকদের ব্যাপারে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তারা শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

১০

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

১১

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

১২

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

১৩

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

১৪

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১৫

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১৬

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১৭

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

১৮

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি রোধে নতুন নির্দেশনা

১৯

জুলাই শহীদদের স্মরণে জবিতে গ্রিন ভয়েসের বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

২০
X