রমজান মাসে রোজা রাখা প্রতিটা মুসলমানের জন্য ফরজ করা হয়েছে। একটি মাস সুবহে সাদিকের আগ থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়।
আমাদের মধ্যে রমজান নিয়ে আছে অনেক ভ্রান্ত ধারণা।
তবে, ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের অনেকেই জানতে চান কেমন ছিল প্রিয় নবীর রমজান পালন। কীভাবে কাটাতেন তিনি রমজানের দিনগুলি।
সরল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন আমাদের প্রিয় নবীজি। প্রাচুর্যের হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন। খাবারের ব্যাপারেও ছিল এ সারল্যের ছাপ। তিনি সাধারণ খাবার দিয়ে সেহরি করতেন। ঘরে যখন যা থাকত তাই সেহরি হিসেবে গ্রহণ করতেন।
সেহরির খাবার হিসেবে তার বিশেষ কোনো পছন্দের কথা জানা যায় না। তবে হ্যাঁ, তিনি অন্য সব সময়ের মতো সেহরিতেও খেজুর পছন্দ করতেন।
সেহরির পর যখন ফজরের আজান হতো, নবীজি কারিম (সা.) নামাজ আদায় করে নিতেন। দিনের আলো ফুটলে সাহাবিদের রমজান ও রোজাসংক্রান্ত মাসআলা শিক্ষা দিতেন।
ইফতার সারা দিনের রোজার ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে মনে অপার্থিব আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে আসে। রোজাদার কেমন আনন্দ অনুভব করে তা কেবল যারা রোজা রাখে তারাই অনুধাবন করতে পারেন।
হাদিসে বলা হয়েছে, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ- একটি ইফতারের সময় ও অপরটি যখন আল্লাহর সঙ্গে মিলবে তখন। (বুখারি, ১৯০৪)।
খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা রাসুল (সা.)-এর অভ্যাস ছিল। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘নবীজি (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (সুনানে তিরমিজি; রোজা অধ্যায় : ৬৩২)।
রাসুল (সা.) সব সময় তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজে আরও বেশি মগ্ন হয়ে যেতেন। রমজানে কখনো তার তাহাজ্জুদ ছুটত না। রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদের জন্য তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন।
আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন রমজানের দিবসের রোজাকে ফরজ করেছেন। আর তার হাবিব (সা.) ‘কিয়ামে রমজান’-এর ঘোষণার মাধ্যমে তারাবির মতো মূল্যবান এ তোহফা দান করেছেন।
নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সাওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে কিয়ামে রমজান আদায় করবে তার বিগত গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি, ২০০৯)।
প্রিয় নবীজি (সা.) স্বভাবগতভাবেই মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। রমজান মাস এলে তার দানের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যেত।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান এলে প্রতি রাতে নবীজি (সা.)-এর কাছে জিবরাইল (আ.) আগমন করতেন। একে অপরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (বুখারি : ৩৫৫৪)।
নবীজি প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, নবীজি কারিম (সা.) ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। (সহিহ মুসলিম, ১১৭২)।
রমজানের রোজা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ফরজ হয়। এরপর থেকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত মোট ৯ বার রমজানের ফরজ রোজা রেখেছিলেন।
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মোট ৯ বছর রমজানের রোজা রেখেছেন। কেননা তা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ফরজ হয়। আর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে ইন্তেকাল করেন।’ (আল-মাজমুআ ৬/২৫০)
সাহাবায়ে-কেরাম (রা.) শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। পবিত্র মাস আগমনের আগে থেকেই তাদের মাঝে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিত।
নতুন রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে তারা পুরোনো কোনো রোজা কাজা থাকলে তা আদায় করতেন।
সাহাবায়ে-কেরাম (রা.) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, দাউদ তায়ি, মালেক ইবনে দিনার, আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) প্রমুখ ইফতারসামগ্রী প্রদানের প্রথম সারিতে ছিলেন।
মন্তব্য করুন