বাকৃবিতে উচ্চ ফলনশীল বাউ সরিষা-৯ উদ্ভাবন
স্বল্পমেয়াদি, উচ্চ ফলনশীল, রোগবালাই প্রতিরোধী এবং লবণাক্ততা সহিষ্ণু নতুন সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। নতুন উদ্ভাবিত জাতটির নামকরণ করা হয়েছে বাউ সরিষা-৯। যা এ বছরের ৩১ মার্চ জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধন পেয়েছে।  নতুন এ জাতটির উৎপাদনকাল ৭৮ থেকে ৮২ দিন এবং বীজে তেলের পরিমাণ ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা দেশে  প্রচলিত সরিষার সাধারণ জাতে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ। উদ্ভাবিত জাতটির আড়াই কেজি সরিষা থেকে ১ লিটার তেল পাওয়া যাবে। জাতটির হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ২ টন যা প্রচলিত অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি সরিষার জাত থেকে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি।  উদ্ভাবিত বাউ সরিষা-৯ ছাড়করণ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জাতটির উদ্ভাবক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ বি এম আরিফ হাসান খান রবিন। এ ছাড়া গবেষণা সহযোগী হিসেবে ছিলেন ওই বিভাগের একাধিক স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী।  মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে গবেষকের অফিস কক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  সংবাদ সম্মেলনে গবেষক জানান, বাউ সরিষা-৯ চাষের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, অল্টারনারিয়া  ব্লাইট, পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণ খুবই কম। জাতটি পরিমিতরূপে বন্যা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু হওয়ায় উৎপাদন প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি। কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজননের গবেষণা মাঠ এবং বাকৃবির পার্শ্ববর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় জাতটির পরীক্ষামূলক চাষ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে।  উদ্ভাবিত বাউ সরিষা-৯ এ অলিক এসিডের পরিমাণ শতকরা ১৬-১৭ শতাংশ, ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অণুপাত ২৫:১, যা সয়াবিন তেলে ১৮:১। বাউ সরিষা-৯ থেকে প্রাপ্ত তেলের স্মোক পয়েন্ট ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, যা সয়াবিন তেলের তুলনায় প্রায় ১৪ ডিগ্রি বেশি। সরিষার তেলে বিদ্যমান গ্লুকোসিনোনেট বিশ্লেষিত হয়ে আইসো থায়োসায়ানাইট তৈরি হয় যা ক্যান্সার প্রতিরোধী। ফলে, ভোজ্যতেল হিসেবে বাউ সরিষা-৯ সরিষার তেল সয়াবিন তেলের তুলনায় অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ১ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। মোট উৎপাদিত সরিষার তেলের বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এই উৎপাদন দ্বারা দেশের মোট ভোজ্যতেলের চাহিদার মাত্র ২০-৩০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়। এ কারণে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকার সরিষা, সয়াবিন এবং পাম তেল আমদানি করতে হয়। দেশীয় প্রক্রিয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় বাউ সরিষা-৯ জাতটি চাষে দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা সম্ভব হবে। প্রচলিত অন্যান্য সরিষার জাতের তুলনায় বাউ সরিষা-৯ চাষে হেক্টর প্রতি প্রায় ২৪ হাজার টাকা বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। সে হিসাবে বছরে ২৪ বিলিয়ন টাকার সরিষার বাজার তৈরি করা সম্ভব। পাশাপাশি জাতটি স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় আমন এবং বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে এটি চাষ করা যাবে। ফলে একই জমিতে বছরে চারটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে যা ফসলের নিবিড়তাও বৃদ্ধি করবে।  উদ্ভাবিত জাত সম্পর্কে গবেষক জানান, বাউ সরিষা-৯ ব্রাসিকা ন্যাপুস প্রজাতির। যাদের জীবনকাল গড়ে ৮০ দিন। কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সংরক্ষিত ২৫০টিরও অধিক জেনোটাইপের মধ্য থেকে স্বল্প জীবনকালীন পাঁচটি জেনোটাইপ প্রজাতিভেদে বাছাই করা হয়। পরে জেনোটাইপগুলোর ডায়ালাল মেটিং পদ্ধতিতে উচ্চতর গবেষণা করে বাউ সরিষা-৯ স্বল্পজীবনকালীন প্রজাতিটির উদ্ভাবন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) তিনটি প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সাল থেকে সাত বছর যাবৎ এই জাতটি উদ্ভাবনের গবেষণা করা হয়েছে।  প্রকল্প তিনটি হলো, জার্মপ্লাজম এনহান্সমেন্ট অ্যান্ড জেনেটিক পিউরিটি ফর বায়োটিক স্ট্রেস রেজিজটেন্স অ্যান্ড শর্ট ডিউরেশন ইন রাপসিড অ্যান্ড মাসটার্ড, ডায়ালাল মেটিং ইন ওয়েল সিড ব্রাসিকা জেনোটাইপস টু সিলেক্ট ফর শর্ট ডিউরেশন অ্যান্ড এবায়োটিক স্ট্রেস টলারেন্স লাইনস ফ্রম এফ-২ পপুলেশন এবং সিলেকশন ফর শর্ট ডিউরেশন, অল্টারনারিয়া ব্লাইট অ্যান্ড স্যালিনিটি স্ট্রেস টলারেন্স ইন দ্য অ্যাডভান্সড ব্রিডিং লাইনস অব রাপসিড অ্যান্ড মাস্টার্ড।  প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রগুলো স্বনামধন্য ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বিশিষ্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশকিছু গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্যে প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে জাতটির অধিকতর উৎকর্ষ সাধনে উচ্চতর গবেষণা চলমান এবং আরও কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ত্রিশালে সরিষা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। উৎপাদন খরচ কম এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই এলাকায় প্রতিবছর সরিষার ফলন ভালো হচ্ছে। সরিষা চাষ করে খুশি কৃষকরা। এদিকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষকদের দাবি, বাজারে সরিষার দাম বৃদ্ধি পেলে আরও বেশি লাভবান হতো তারা। এখন মাঠজুড়ে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। আমন ধান উৎপাদনের পরে এবং বোরো ধান চাষের শুরুতে জমিতে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। দিন দিন এ অঞ্চলে বেড়েছে সরিষা চাষ। উচ্চ ফলনশীল বীজ, সময় কম লাগা, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছে সরিষা চাষের প্রতি। কৃষকদের দাবি বাজারে সরিষার দাম তুলনামূলক কম থাকায় বেশি লাভবান হতে পারছেন না তারা। কৃষক জামানসহ কয়েকজন কৃষক জানান, গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করে আসছেন তারা। অল্প সময়ে অধিক লাভ পাওয়ায় তারা সরিষা চাষ করছেন। এই বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন আশানুরূপ হয়েছে। কৃষি অফিস সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বাজারে যদি এবার সরিষার দাম ভালো থাকে তাহলে আরও বেশি লাভবান হওয়া যাবে। উচ্চ ফলনশীল সরিষার নতুন নতুন উন্নত জাত উদ্ভাবনের ফলে এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে সরিষা চাষের জন্য। উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান জানান, রোপণের পর থেকে কৃষকদের সবসময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।  যে কারণে এবার ফলন ভালো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে ত্রিশালে ১২৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান জানান, আমন ধান ঘরে তোলার পর কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছে। সরিষার ফলন শেষ হওয়ার পর ওই জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হচ্ছে। এতে আমন আর বোরো মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছে, লাভবান হচ্ছে  অন্যদিকে জমির উর্বরতা বাড়ছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ফরিদপুরে বেড়েছে সরিষা চাষ, লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ কোটি টাকা
গত বছরের তুলনায় কয়েক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষকরা। তারা বলছেন, বর্তমানে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে। অনেকে একে ভোজ্যতেল সয়াবিনের বিকল্প হিসাবেও ব্যবহার করছেন। আর এই ফসল স্বল্প খরচ ও সময়ে পাওয়া যায়। ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, দেশীয় বাজারের ভোজ্য তেলের দর বৃদ্ধিতে এবার সদরপুরে বেড়েছে সরিষার চাষ। রবি মৌসুমের ফসল হিসাবে কৃষকের এতে আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি মাঠেই এবার আবাদ বেড়েছে সরিষার। সার, ওষুধ, পানি ও অল্প পরিচর্যায় এবং সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় দিন দিন সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। উপজেলার ভাষানচর, চরবিষ্ণপুর, আকোটেরচরসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে সরিষা ফুল। সদরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি-১৪ ও বারি-১৮ ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় ২০৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৩৯০ হেক্টর বেশি। এ বছর সময়মতো ৪ হাজার কৃষককে উন্নত জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৮ জাতের সরিষা বীজ, সার ও কীটনাশক দেয়া হয়েছে। ফলে তারা আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করেছেন। সরজমিনে সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ও চরবিষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গাছ দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত বড় হয়ে উঠেছে। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুলে ভরা সরিষার গাছ। চাষিরা জানালেন, বারি-১৪, ১৫, ১৬, ১৭, বিনা-৪, ৮, ৯, টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন বেশিরভাগ। উচ্চ ফলনশীল জাত হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ মৌসুমে জেলায় ১৪ হাজার ৮৪২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টরপ্রতি ১ হাজার ৩৬০ কেজি বা ১.৩৬ টন। সরিষার গড় বাজার মূল্য মণপ্রতি ৩ হাজার টাকার বেশি। সেই হিসাবে এই মৌসুমেই ১৫১ কোটি ৩৮ লক্ষাধিক টাকার সরিষা উৎপাদন করবেন জেলার চাষিরা। ভাষানচরের চাষি মুন্নি মৃধা, ফজল শেখসহ কয়েকজন জানালেন, বোরো ধান রোপণের আগেই কম সময়ে একটি বাড়তি ফসল আবাদ করতে কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে বীজ রোপণের মাত্র ৮০-৯০ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। বৈরী আবহাওয়া না হলে বিঘাপ্রতি ৫-৬ মণ সরিষা বীজ পাওয়া যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় ফরিদপুরে এ বছর ২ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। চাষিরা আগে যেখানে দুই ফসল ফলাত এখন সেখানে তিন ফসল চাষাবাদ করছেন। এতে তারা বাড়তি লাভের মুখ দেখছেন।
২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

নওগাঁয় সরিষাক্ষেতে পচন রোগে দিশেহারা কৃষক
নওগাঁর নিয়ামতপুরে চলতি মৌসুমে সরিষা ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সরিষার দানা পরিপক্ব হওয়ার আগেই পচন রোগ ধরায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সরিষা চাষাবাদের প্রথমের দিকে আবহাওয়া ভালো থাকলেও কিছুদিন ধরে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে হোয়াইট মোল্ড রোগ ক্ষেতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সরিষা আবাদে হোয়াইট মোল্ড নামে রোগটি মূলত ছত্রাকজনিত রোগ। রোগে আক্রান্ত সরিষা গাছে সাদা রঙের শেওলা ধরার মতো দেখা যাচ্ছে। স্বল্প দিনের মধ্যে আক্রান্ত গাছের অংশভাগ শুকিয়ে যায়। নিয়ামতপুর উপজেলার প্রায় সরিষা ক্ষেতে এ রোগের আক্রমণ লক্ষ করা যাচ্ছে। নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার হেক্টর এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সরিষা আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৬৫ হেক্টর। চলতি অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৪ হাজার ৭৬০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন বলেন, স্থানীয় জাতের সরিষা চাষাবাদ করেছি। সরিষা গাছের ফুল দেখে ভালো ফলনের আশা ছিল। কিন্তু সরিষার দানা পরিপক্ক হওয়ার আগে গাছে পচন রোগ দেখা দেয়। আক্রান্ত গাছ ও পডের অংশ সাদা হয়ে যাচ্ছে  এবং গাছ ও পড নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করে আক্রান্ত সরিষা গাছগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করছি। নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, আবহাওয়া ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি হলে এ রোগ হতে পারে। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। সরিষা আবাদের এ রোগ প্রতিকারের জন্য কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের সরিষা ক্ষেতে গিয়ে রোগ নির্ণয় করে পরামর্শ দিচ্ছে। এ বছর উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।
২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষা চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার ফলন
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে গতবারের তুলনায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভের আশায় বুক বাঁধছেন উপজেলার কৃষকরা। সোমবার (২২ জানুয়ারি) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্ত জোড়া মাঠে, মাঠে হলুদের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ শুধু হলুদের বিশাল গালিচা, যত দূরে চোখ পড়ে শুধু হলুদ আর হলুদ। চিরসবুজের বুকে যেন কাঁচা হলুদের আলপনা। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে এখন মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত। ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। প্রকৃতিতে হলুদ বর্ণে শোভা পাচ্ছে বিস্তীর্ণ সরিষার মাঠ। চারদিক ছড়িয়ে পড়ছে ফুলের গন্ধের সুবাস। পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়। সেই মোহনীয় পরিবেশ ও হলদে আভার পরশ নিতে ক্ষেতে ছুটছেন প্রকৃতিপ্রেমী উৎসুক অনেকেই। সেই সঙ্গে সরিষা ফুলের ছবি তুলতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। কৃষকের মুখে সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় হাসির ঝিলিক। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ণ প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক স্বপ্নীল পৃথিবী। যেদিকে তাকাই শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধালো বর্ণিল সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে সরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পণ এ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মুহূর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। তাই তো ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাণীশংকৈল উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষকরা তাদের জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪,বারি-১৭,বারি-১৮ ও বিনা সরিষা-৯ আবাদ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো সরিষা আবাদ করেছেন উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের রবিউল মানিক ১০ একর, বনগাঁও গ্রামের গয়গাম বিএসসি ১১ একর, বাচোর ইউনিয়নের সুরেন চন্দ্র ৫ একর, ধর্মগড় ইউনিয়নের আকবর আলী ১০ একর এবং কাশিপুর কাদিহাট মালশাডাঙ্গা এলাকায় কৃষি অফিসের সার্বিক তত্বাবধায়নে ১০ জন কৃষককে নিয়ে তাদের জমিতে ২৫ একর জমিতে বারি সরিষা-১৮ আবাদ করা হয়েছে। এ মৌসুমে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬৯৪০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত মৌসুমে সরিষার অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ হাজার ৫০ হেক্টর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ১১০৪ টন সরিষা কৃষক ঘরে তুলতে পারবে। এ ছাড়াও মৌওয়ালরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরিষা ক্ষেত থেকে প্রায় সাত শত বক্সের মাধ্যমে মণকে মণ মধু সংগ্রহ করছেন ।  এ ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন প্রায় ১৫-২০ ভাগ বেড়ে যায়। এতে সরিষার ফলন ভালো হয়। এ ছাড়া সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ একটি লাভজনক ব্যবসা। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্য দিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।  এ ব্যপারে উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের,পয়গাম বিএসসি, বাচোর ইউনিয়নের, আবু সালেহ, লেহেম্বা ইউনিয়ের রওশন আলী, হোসেনগাঁও ইউনিয়নের আব্দুল খালেক এবং ধর্মগড় ইউনিয়নের নাসরিন বেগম বলেন, আমরা সরিষা চাষ কেরেছি, খরচ তেমন নেই। শুধু গোবর সার দিয়ে জমি চাষের পর বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর গাছ বড় হলে দিতে হয় সেচ। সার বা কীটনাশক তেমন একটা দিতে হয় না। এ কারণে সরিষা চাষে কম খরচে বেশি লাভ। তাছাড়া এলাকার অনেক চাষি উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা বীজ বিনামূল্যে পেয়ে বেশ আবাদে ঝুঁকেছেন। কেমন ফলন আশা করছেন? জিজ্ঞাসা করলে মুচকি হেসে তারা বলেন, বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৯ মন তো হবেই ইনশাল্লাহ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, সরকার দেশে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা ও তেলজাতীয় ফসল আবাদের ওপর জোর দিয়েছে। রাণীশংকৈল উপজেলায় একটি তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের কার্যক্রমের কারণে  উপজেলায় সরিষার আবাদ ও ফলন প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গত এক বছরেই দেড়গুণ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জনসংখ্যা অনুপাত হিসেবে ৪০- ৫০ ভাগ সরিষার চাহিদা পূরণ হবে । তিনি আরও বলেন, সরিষা একটি লাভজনক ঝুঁকিমুক্ত ফসল। সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে সরকার কৃষকদের বীজ, সার ও পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছে। সরিষা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে প্রতিনিয়ত দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আমিসহ প্রতিটি উপসহকারী কৃষি অফিসার প্রতিদিন বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতের মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছি । এতে করে কৃষকরা সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
২২ জানুয়ারি, ২০২৪

মাদ্রাসার সাড়ে ৮ বিঘা জমির সরিষা ও ভুট্টা নষ্টের অভিযোগ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পূর্বশত্রুতার জের ধরে বিষ প্রয়োগ করে একটি মাদ্রাসার সাড়ে ৮ বিঘা জমির সরিষা ও ভুট্টা পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে নাটোরের তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও তাড়াশ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর সরদার আব্দুল হামিদ দারুল উলুম মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুজ্জামান এ অভিযোগ দেন। ইতিমধ্যে প্রাথমিক তদন্তে বিষপ্রয়োগে ফসল পুড়িয়ে ফেলার সত্যতাও পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মামলায় হেরে রফিকুল ইসলাম পোড়া বিষ দিয়ে ওই জমির ভুট্টা ও সরিষা নষ্ট করেছেন। লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার পতিরামপুর মৌজায় ১৩৮ ও ১৩৩ শতক ফসলি জমি খুবজীপুর সরদার আব্দুল হামিদ দারুল উলুম মাদ্রাসার নামে ক্রয় করা হয়। ওই জমি নিজের দাবি করে পতিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ আদালতে রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা দায়ের করেন। মামলায় রফিকুল ইসলাম নিম্ন আদালতে পরাজিত হয়ে সিরাজগঞ্জ জর্জ কোর্টে আপিল করেন। সেখানেও তিনি হেরে যান। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।  খুবজীপুর সরদার আব্দুল হামিদ দারুল উলুম মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক  আনিসুজ্জামান অভিযোগ করেন, পরপর দুইবার মামলায় পরাজিত হয়ে রফিক মাস্টার মাদ্রাসার জমির ফসল নষ্ট করছে।  তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আমার বাবা পত্তনী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছে। মামলায় হেরে গেছি সত্য। আমি উচ্চ আদালতে আপিল করেছি।  তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তদন্তে সরিষা নষ্ট করার বিষয়ের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অল্প দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। 
১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

দেবীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে সরিষা চাষ
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে এ বছর সরিষার চাষ হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষার উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং গত কয়েক বছর বাজারে সরিষার ভালো দাম থাকায় দিন দিন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ। আশানুরূপ ফলন ঘরে তুলতে শেষ সময়ে সরিষা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার সরিষা চাষিরা। সরিষা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম হলে এক বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ সরিষা উৎপাদিত হয়। বাজারভেদে প্রতিমণ কাঁচা সরিষা ২ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার ১০০ টাকা এবং শুকনো সরিষা ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। শ্রমিক খরচ তেমন নেই বললেই চলে। গত কয়েক বছর থেকে সরিষার দাম ভালো হওয়ায় চাষযোগ্য জমির পাশাপাশি পতিত জমিতেও বেড়েছে সরিষা চাষের পরিমাণ। দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেবীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত দশ ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভায় মোট ৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় ১ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে এ বছর অধিক সরিষার চাষ হয়েছে। এ ছাড়া সরিষার উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২ হাজার ১৬০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে উন্নত জাতের সরিষার বীজ, সার বিতরণ করা হয়। উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের প্রধানাবাদ গ্রামের শামসুল আলম নামের এক চাষি বলেন, গত বছর কৃষি অফিসের প্রণোদনার বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করি। ৭ মণ শুকনো সরিষা ২২ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় এবার দেড় বিঘা জমিতে বারি-১৭ জাতের সরিষা লাগিয়েছি। আশা করছি, এবারও ভালো দাম পাব। সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের আলিয়ারখা গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন নামের আরেক চাষি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সরিষার আবাদ করছি। গত বছর এক বিঘা জমিতে ৮ মণ সরিষা হয়। কাঁচা অবস্থায় ক্ষেত থেকে ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করি। সরকারি প্রণোদনার বীজ ও সার পাওয়ায় সর্বমোট ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সরিষাতে ধানের থেকেও লাভ বেশি, তাই এ বছর সরিষার আবাদ করেছি। এদিকে রোগবালাই ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণের মাধ্যমে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যার ফলে দেবীগঞ্জ উপজেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নাঈম মোর্শেদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ হয়েছে। ফলস্বরূপ, সরিষা আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। এখানকার সরিষা থেকে তেলের পাশাপাশি মধু উৎপাদিত হচ্ছে, যা স্থানীয় পর্যায়ে ভোজ্যতেল ও মধুর চাহিদা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে সরিষা চাষ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আশানুরূপ ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন উপজেলার কমবেশি সব এলাকার কৃষক। এতে করে পতিত জমিতে বেড়েছে সরিষা চাষের পরিমাণ।  ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নের ফসলের মাঠে শোভা বর্ধন করছে হলুদের আভা। আশানুরূপ ফলন ঘরে তুলতে শেষ সময়ে সরিষা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার সরিষা চাষিরা।  উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে এবং স্থানীয়ভাবে সরিষা আবাদের মাধ্যমে ভোজ্যতেলে ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৭৮ হেক্টর জমিতে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ১৮ টন। একইভাবে সরিষার উৎপাদন বাড়াতে উপজেলার ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষির মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে উন্নত মানের সরিষা বীজ, সার বিতরণ করা হয়েছে।    সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সরিষার আবাদ বেড়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে। আমন ধান কাটার পর থেকে ধান রোপণের আগ পর্যন্ত যেসব জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত এ বছর সেই সব জমিতেও সরিষা চাষ করছেন চাষিরা। উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর এলাকার সরিষা চাষি শহিদুল ইসলাম ও অহিনুর রহমান বলেন, আমন ধান কাটাই-মাড়াইয়ের ৯০ থেকে ১২০ দিন পর ইরিবোরো ধান রোপণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ সময় মাত্র ৭০ থেকে ৮০ দিনের মাথায় সরিষা ঘরে তোলা যায়। বিগত বছরগুলোতে এ সব জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকলেও এ বছর জমি পতিত অবস্থায় ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সরিষা চালের প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও রাসায়নিক সার দিয়ে সরিষা চাষে আগ্রহী করা হয়েছে কৃষকদের। ফলে  চাষিরাও সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে পতিত জমিতে বেশি বেশি সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, কম খরচে আশানুরূপ লাভ পাওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকরা ঝুঁকে পড়ায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। এতে করে সরিষা ফুলের মধুর উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও সরিষার পাতা জমিতে পড়ে উন্নতমানের জৈব সার হিসেবে পরিণত হওয়ায় পরবর্তী ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার কম লাগে। 
১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

বালিয়াকান্দিতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে সরিষা চাষ
সরিষা চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকরা। এ উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন হলুদের ঢেউ। সরিষার এই ফলনে কৃষকের চোখে মুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠেছে। বর্তমানে কৃষকরা মাঠপরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।   উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বালিয়াকান্দিতে ১ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার হেক্টর জমি গত বছর ৪ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। বালিয়াকান্দি উপজেলার পর্ব মৌকুড়ি গ্রামের সরিষা চাষি রাজ্জাক মোল্লা বলেন, প্রতি বছর বাড়ির জন্য ১৫ শতক সরিষা চাষ করতাম কিন্তু দেশে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েই চলছে। তাই তেলের চাহিদা মেটাতে আমি সরিষার চাষ করছি। এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। উপজেলার অপর কৃষক আজিজ মোল্লা বলেন, ‘প্রতি বছর গম চাষ করতাম, এ বছর আমি সরিষা চাষ করছি। এ বছর ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করেছে কৃষকেরা। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ শত হেক্টর। গত বছর এই উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছিল ৪৪৫ হেক্টর। এ বছর আমরা উপজেলায় মোট ২ হাজার ৭০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করেছি।
১১ জানুয়ারি, ২০২৪

আটঘরিয়ায় সরিষার হলুদ ফুলে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক
পাবনার আটঘরিয়ার মাঠে মাঠে যতদূর চোখ যায় দেখা যায় শুধু সবুজ আর হলুদ রঙের গালিচা বিছানো। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের গ্রামগুলো সেজেছে আপন মহিমায়। এমন নয়নাভিরাম হলুদ সরিষা ফুলের দৃশ্য, ফুলের গন্ধ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে। আর হলুদ সরিষা ফুলে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। এখন সরিষা গাছে ফুল ধরেছে, আর কিছুদিন পরেই আসবে ফল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলে কৃষক সরিয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন। বিগত বছরের তুলনামূলক এ বছর সরিষার আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। এবারে আবহাওয়া ভালো থাকায় জমিতে সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। অনেক সুন্দর আবাদ হয়েছে, ভালো ফলন হবে আশা করছেন কৃষকরা। তারা বলেন, সরিষা চাষ এখন লাভজনক হওয়ায় এলাকায় দিন দিন এ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকেরা বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার প্রতি বিঘা জমিতে ছয়-সাত মণ হারে সরিষা ঘরে তোলা যাবে। এ বছরের মতো আগামীতে ভালো দাম পাবেন বলে তাদের আশা। ফলনশীল জাতের বারী-৯, ১১, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮, বিনা-৪, টরি-৭ জাতের সরিষাসহ স্থানীয় জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্জাতা জানান, উপজেলায় বন্যার পানি দ্রুত মাঠ থেকে পানি নেমে যায়। এ জন্য মাঠের মধ্যে জলাবদ্ধতা না থাকার কারণে অনেকেই সরিষা বীজ ফেলেছেন সুবিধাজনকভাবে। তাই এ বছর সরিষা আবাদ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। উপজেলায় এ বছর আট হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ছয় হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে উপজেলার চার হাজার ৫০০ কৃষককে সরিষা বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমণ হলে কী করণীয় সে বিষয়ে কৃষককে সচেতন করা হয়েছে।
১০ জানুয়ারি, ২০২৪
X