ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের নতুন কোচ হিসেবে কার্লো আনচেলত্তির আগমন বিশ্ব ফুটবলে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিল। কিন্তু এ নিয়োগকে ঘিরেই এবার ফিফার তদন্তের মুখে পড়েছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)। অভিযোগ, আনচেলত্তির চুক্তিতে একজন অননুমোদিত মধ্যস্থতাকারীকে ১.২ মিলিয়ন ইউরো কমিশন প্রদান করা হয়েছে, যা সরাসরি ফিফার এজেন্ট নীতিমালার লঙ্ঘন।
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ফুটবল চুক্তি বা দলবদলে কেবলমাত্র নিবন্ধিত এজেন্টরা মধ্যস্থতা করতে পারবেন। অথচ, আনচেলত্তির চুক্তিতে নাম আছে ডিয়েগো ফার্নান্দেজ নামে এক ব্রাজিলীয় ব্যবসায়ীর, যিনি ফিফার অনুমোদিত এজেন্ট নন। ইএসপিএন ব্রাজিল জানায়, চুক্তিপত্রে তার নাম যুক্ত থাকায় এবং তাকে আনচেলত্তির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগ্রগামী ভূমিকায় দেখা যাওয়ায় বিষয়টি সন্দেহজনক হয়ে ওঠে।
উইওল স্পোর্টস–এর তথ্যমতে, ফিফা ইতিমধ্যেই CBF-কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ডিয়েগো ফার্নান্দেজের সঙ্গে চুক্তি ও সংশ্লিষ্ট সকল মেসেজ বা নথিপত্র আগামী ৪ জুনের মধ্যে জমা দিতে হবে। এই তারিখের ঠিক একদিন পরেই আনচেলত্তি ব্রাজিলের হয়ে কোচ হিসেবে প্রথম ম্যাচে নামবেন ইকুয়েডরের বিপক্ষে গায়াকুইলে।
বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয় যখন দেখা যায়, আনচেলত্তির সঙ্গে একই ফ্লাইটে রিওতে আসেন ফার্নান্দেজ। এ সময় তিনি ব্রাজিল দলের রেট্রো জার্সি পরিহিত অবস্থায় ছিলেন এবং নিজেকে সিবিএফের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করেন। তার এই দৃশ্যমান উপস্থিতি ও প্রভাব নিয়ে সিবিএফের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। নতুন সভাপতি সামির জাউদের অধীনে কাজ শুরু করেছে বোর্ড, যিনি পূর্ববর্তী সভাপতি এডনালদো রদ্রিগেজকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন।
৬৫ বছর বয়সী কার্লো আনচেলত্তির নিয়োগ ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত মেয়াদে, এবং তার বার্ষিক বেতন প্রায় ১ কোটি ইউরো। এমন একজন সফল কোচকে নিয়োগ দেওয়াটা যেমন ব্রাজিলের ফুটবলের জন্য বড় পদক্ষেপ, তেমনি এ চুক্তিকে ঘিরে তৈরি হওয়া আইনি জটিলতা ব্রাজিলের ফুটবল প্রশাসনের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে।
এ ধরনের অননুমোদিত মধ্যস্থতার ঘটনায় আগে আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ফিফা। এবার লাতিন আমেরিকায় এটিই হতে পারে প্রথম বড় নজির। সিবিএফ যদি যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আনচেলত্তির চুক্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে, এমনকি আর্থিক বা প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে।
কার্লো আনচেলত্তির মতো অভিজ্ঞ কোচের নেতৃত্বে ২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে যাত্রা শুরু করলেও, শুরুতেই ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন যে ধাক্কা খাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে অস্বস্তির। ফিফার তদন্ত এখন শুধু একটি চুক্তির বৈধতা নয়, বরং গোটা ব্রাজিলিয়ান ফুটবল প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই চ্যালেঞ্জ করছে।
মন্তব্য করুন