বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ সামনে রেখে ফুটবলের আবহমণ্ডল গরম। মাঠের উত্তাপের আগেই গরম হয়ে উঠেছে বাফুফে ভবনের সামনের পরিবেশ—টিকিট না পাওয়ার প্রতিবাদে আজ বিকেল থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন দেশের অন্যতম সংগঠিত সমর্থকগোষ্ঠী ‘ফুটবল আলট্রাস’।
‘টিকিট চাই, নইলে নেই ফুটবল’—এই বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রায় বিশজন আলট্রাস সদস্য বসে আছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের মূল ফটকের সামনে। স্লোগান, প্রতিবাদ আর শান্তিপূর্ণ অবস্থান—সব মিলিয়ে এক ভিন্নচিত্র ধরা পড়েছে ফুটবল ভবনের আশপাশে।
বাংলাদেশের ফুটবলে গত এক যুগে যা-ই ঘটুক না কেন, এই আলট্রাসরাই ছিলেন গ্যালারির অবিচল সৈনিক। খারাপ সময়ে সঙ্গ ছাড়েননি, ভালো সময়েও উদযাপন করেছেন গলা ছেড়ে। সেই আলট্রাস-ই এবার হতাশ—কারণ টিকিটের দাবিতে তাদের দেওয়া আগের সব চিঠি ও আবেদন উপেক্ষিত হয়েছে বলে দাবি তাদের।
দুই মাস আগে তারা বাফুফের কাছে অর্থের বিনিময়ে আগাম টিকিট চেয়ে আবেদন করলেও কোনো জবাব পাননি। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের জন্য মাত্র ১০০টি টিকিট বরাদ্দের প্রস্তাব এলে তা প্রত্যাখ্যান করে আলট্রাস। তাদের দাবির তুলনায় সংখ্যা এতটাই অপ্রতুল যে তারা সেটা অপমান হিসেবেই দেখছেন।
এবার বাফুফে প্রথমবারের মতো অনলাইনে সম্পূর্ণ টিকিট বিক্রি করেছে টিকিফাই নামক একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় ছিল সীমাহীন ভোগান্তি। সাইবার আক্রমণের কারণে প্ল্যাটফর্মটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেকেই চেষ্টা করেও টিকিট পাননি, অথচ ঘোষণা আসে—সব টিকিট নাকি বিক্রি হয়ে গেছে!
এই পরিস্থিতিতে সমর্থকদের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে বাফুফের টিকিটিং পার্টনার টিকিফাই-এর ওপর। এমনকি বাফুফে সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম, যিনি প্রবাসী ফুটবলারদের আনার পেছনে অবদান রেখে প্রশংসিত হয়েছিলেন, এখন টিকিট বিতরণ ও স্বচ্ছতা ইস্যুতে হয়ে উঠেছেন সমালোচনার মুখ।
‘বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরাম’সহ আরও বেশ কয়েকটি সক্রিয় সমর্থক সংগঠনও একই ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এই সমর্থকরাই ছিলেন সেই সময়ে পাশে, যখন গ্যালারি প্রায় শুন্য ছিল। এখন ফুটবল যখন সুদিন দেখছে, হামজা চৌধুরী ও সামিত সোমের মতো তারকা আসায় জাতীয় দলে নতুন আশা, তখন এই সমর্থকরাই যেন বাফুফের কাছে মূল্যহীন।
ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সমর্থকদের অবস্থানে বাধা না দেওয়া হলেও, বাফুফে কর্মকর্তারা ভবনে ঢুকছেন পেছনের গেট দিয়ে। ফুটবল সমর্থকদের দাবি ও অভিমানের প্রতিধ্বনি যেন এই নীরবতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
একটা ফুটবল ম্যাচ কেবল মাঠে ২২ জনের লড়াই নয়, গ্যালারির প্রতিটি গলা, পতাকা আর হাততালিতেই তৈরি হয় সেই লড়াইয়ের প্রাণ। সেই প্রাণ যদি টিকিট না পায়, তাহলে উৎসব হয়ে পড়ে একরকম অসম্পূর্ণ।
মন্তব্য করুন