সার্জিও রামোস কখনো রিয়ালের ঐতিহাসিক সাদা জার্সি ছাড়া অন্য কোনো জার্সি গায়ে জড়াবেন এটি হয়ত কখনো ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি কিন্তু বাস্তবতা এমনই যে নিজের স্বপ্নের ক্লাব ছেড়ে গায়ে জড়াতে হয়েছে আরও দুই ক্লাবের জার্সি। গতকাল আবার ভাগ্যের পরিহাসে নিজের ‘নতুন ক্লাব’ সেভিয়ায় আতিথেয়তা দিতে হয়েছে তার পুরোনো ক্লাবকে।
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম সেভিয়ার ম্যাচে সবার চোখ ছিল রামোসের ওপরই। ১৬ বছর রিয়ালের ঘরের ছেলে হয়ে দলের রক্ষণদুর্গ আগলে রেখেছিলেন রামোস। এই ক্লাবে খেলেই নিজেকে নিয়ে গেছেন সর্বকালের সেরার কাতারে। গতকাল সেই ক্লাবের বিপক্ষে মাঠে নামার অনুভূতিটা একটু অন্য রকম হওয়ারই কথা, তা-ও রামোস যখন আবার খেলছেন শৈশবের ক্লাবের হয়ে।
সব মিলিয়ে সেভিয়ার মাঠ রামন সানচেজে রিয়াল-রামোসের এই পুনর্মিলনী দেখতে মুখিয়ে ছিল সবাই। তাদের সেই পুনর্মিলনী হয়েছেও দেখার মতো। ছড়িয়েছে উত্তেজনাও। রামোস নিজেও জড়িয়েছেন সেই উত্তাপে। তবে একাধিকবার রিয়ালের আক্রমণ সামলে হয়েছেন সেভিয়ার ত্রাতাও। শেষ পর্যন্ত রিয়ালকে রুখেও দিয়েছেন। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি শেষ হয়েছে ১-১ গোলের ড্রয়ে।
শনিবার (২১ অক্টোবর) রামন সানচেজ পিজুয়ান স্টেডিয়ামে সেভিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ১-১ গোলে ড্র করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ডেভিড আলাবার আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দানি কার্ভাহাল গোল শোধ করেন।
সেভিয়ার মাঠে এদিন শুরুটা ভালোই করেছিল কার্লো আনচেলত্তির দল। চতুর্থ মিনিটেই বল জালে পাঠান জুড বেলিংহাম। আরও একবার দলের নায়ক বনে উদযাপনও করছিলেন তিনি। কিন্তু ভিএআরে অফসাইড ধরা পড়ায় গোলটি বাতিল করেন রেফারি।
তবে এরপরেই রিয়ালকে চেপে ধরেছিল সেভিয়া। বল দখলে রিয়াল কিঞ্চিত এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে স্বাগতিক সেভিয়াই এগিয়ে ছিল।
প্রথমার্ধেই দুদলই দিয়েছে গোল মিসের মহড়া। তাতে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ এক আক্রমণাত্মক থ্রিলারের প্রতিশ্রুতিই মিলছিল। পয়েন্ট টেবিলে সেভিয়া খুব একটা ভালো জায়গায় না থাকলেও রিয়ালের বিপক্ষে তারা ভালো লড়াই করবে তেমন আশাই করা হচ্ছিল। এই ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর পর লা লিগায় রিয়ালের প্রতিপক্ষ হিসেবে নেমেছিলেন সার্জিও রামোস। ২০০৫ সালে সেভিয়া থেকেই রিয়ালে যোগ দিয়েছিলেন রামোস। সেখানে খেলেই পেয়েছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের তকমা। হয়েছিলেন রিয়ালের অধিনায়ক।
সাবেক দলের বিপক্ষে খেলতে নেমে আবেগ ছুঁয়ে গেলেও মাঠের খেলায় মোটেও ছাড় দেননি রামোস। এমনকি বেশ কয়েকবার রিয়ালের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দ্বন্দ্বেও জড়িয়েছেন।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেই গোলের দেখা পাচ্ছিল না কোন দলই। অবশেষে ৭৪ মিনিটে আত্মঘাতী গোলেই এগিয়ে যায় সেভিয়া। বাঁ প্রান্ত থেকে আর্জেন্টাইন লেফটব্যাক মার্কাস আকুনা ক্রস করেন রিয়ালের বক্সে। ছয় গজি বক্সে তক্কে তক্কে ছিলেন ইয়োসেফ এন-নেসরি। আলাবা তাকে ঠেকাতে বল কেপার উদ্দেশ্যে বাড়ান। কিন্তু বলের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে জালে জড়িয়ে যায়।
সমতায় ফিরতে অবশ্য দেরি করেনি রিয়াল। চার মিনিট পরেই গোল করেন কার্ভাহাল। টনি ক্রুসের ফ্রিকিক থেকে বল পেয়ে কাছের পোস্টে জড়ান এই স্প্যানিশ রাইটব্যাক।
এদিন ম্যাচের নায়ক বনে যেতে পারতেন রামোস। মঞ্চ প্রায় তৈরি করেই ফেলেছিলেন তিনি। ৮০ মিনিটে দারুণ হেডে বল প্রায় জালে জড়িয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু অবশ্বাস্যভাবে সে হেড থামিয়ে দেন তিনি।
এই ড্রয়ের পরও ১০ ম্যাচে ৮ জয় ও ১ ড্রয়ে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রিয়াল মাদ্রিদ। ৯ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জিরোনা। সমান ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে ৩ নম্বরে বার্সেলোনা।
মন্তব্য করুন