কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ০৫:১৭ এএম
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ০৮:১৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পুত্র নয়, এবার কন্যাসন্তানের দিকেই ঝুঁকছে দুনিয়া

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিশ্বব্যাপী বাবা-মায়েদের মানসিকতায় এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ঐতিহ্যগতভাবে পুত্রসন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, আর তার জায়গা দখল করছে কন্যাসন্তানের প্রতি আগ্রহ।

একসময় পরিবার গঠনে ছেলেসন্তানকে অর্থনৈতিক ভরসা, বংশ রক্ষা এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে এখন এই ধারণায় নাটকীয় রূপান্তর দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে জনসংখ্যায় শীর্ষস্থানীয় দুই দেশ- চীন ও ভারতে।

একসময় এই দুই দেশে আলট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির অপব্যবহারে বিপুলসংখ্যক কন্যাভ্রূণ গর্ভেই হত্যা করা হতো। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে অন্তত ২ কোটি কন্যাশিশু জন্মের আগেই হারিয়ে গেছে। তবে এই ধারা পাল্টাতে শুরু করেছে।

গবেষণা বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বে কন্যাভ্রূণ গর্ভপাতের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে মাত্র ১ লাখ ৭ হাজারে, যেখানে ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৬ হাজার- অর্থাৎ ৭ গুণ হ্রাস।

দক্ষিণ কোরিয়ায় আগে প্রতি ১০০ কন্যাশিশুর বিপরীতে জন্ম নিত ১১৭ ছেলে, যা ছিল জনসংখ্যার ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে স্বাভাবিক অনুপাতে- ১০৫ কন্যা : ১০০ ছেলে। চীন ও ভারতে এখনো প্রতি ১০০ কন্যার বিপরীতে জন্ম নিচ্ছে যথাক্রমে ১১১ ও ১০৭ ছেলে। যদিও সেখানেও ধীরে ধীরে ভারসাম্য ফিরছে।

ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ জার্নালের ২০২৩ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলোতেও মনোভাবের এই পরিবর্তন স্পষ্ট। বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্সে দেখা গেছে, প্রথম সন্তান কন্যা হলে অনেক বাবা-মা দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছেন না। অর্থাৎ কন্যাসন্তানকেই তারা চূড়ান্ত পছন্দ ভাবছেন।

ফিনল্যান্ডে ১৯৮০-এর দশকে কন্যাসন্তানের জন্মের পর বিচ্ছেদের প্রবণতা থাকলেও, ১৯৯০-এর পর থেকে এটি প্রায় পুরোপুরি কমে গেছে- যা সমাজে মেয়েশিশুর প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন।

বাংলাদেশ ও সাব-সাহারান আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখাকে এখন পরিবারিক স্থিতির অন্যতম শর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, জাপানে যেসব দম্পতি এক সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের ৭৫ শতাংশই কন্যাসন্তান চান- যেখানে ১৯৮২ সালে এই হার ছিল ৫০ শতাংশের নিচে।

যুক্তরাষ্ট্রেও ‘আইভিএফ’ চিকিৎসায় কন্যা ভ্রূণ বেছে নেওয়ার হার বেড়েছে, যা কন্যাসন্তানের প্রতি অভিভাবকদের চাহিদার বহিঃপ্রকাশ।

কেন কন্যাসন্তানকে এখন বেশি পছন্দ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কন্যাসন্তানদের সাধারণত যত্নশীল, পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীনের মতো দেশে অতিরিক্ত ছেলেসন্তানের ফলে বিয়ে ও সামাজিক স্থিতি নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

ব্রিটেনে ছেলেদের মধ্যে বেকারত্ব, অপরাধপ্রবণতা ও শিক্ষা বিচ্যুতি বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার কন্যাসন্তানকে ‘নিরাপদ ভবিষ্যৎ’ মনে করছেন।

কন্যাসন্তান- ভবিষ্যতের প্রতীক

একসময় কন্যাসন্তানকে বোঝা মনে করা হতো। আজ সেই ধারণার বদল ঘটছে। সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির বিবর্তনে মেয়েশিশুর গুরুত্ব বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গবেষণার ফলাফলগুলো বলছে, ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতীক হিসেবে এখন কন্যাসন্তানই হয়ে উঠছে সবার প্রথম পছন্দ।

তথ্যসূত্র : দ্য টাইমস, ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানে হামলার পক্ষে ছিলেন না ট্রাম্প

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ২ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

তারেক রহমান এখনো বৈষম্যের শিকার : আনিসুল হক

‘ম্যারাথন অব কলের’ চাপে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত

ইরানে বিপ্লবী গার্ডের সদর দপ্তরে হামলা

ইরানে হামলার পর ট্রাম্পের সহযোগী বললেন, ‘খেলা শুরু’

ইসরায়েলজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি

তেহরানের আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

‘হাইব্রিড নেতাকর্মীদের কারণে হারিয়ে যাচ্ছেন পুরোনো সৈনিকরা’

১০

ইসরায়েলের হামলায় ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ

১১

যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ ইরানে হামলা চলবে : নেতানিয়াহু

১২

ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

১৩

যা বললেন বিধ্বস্ত বিমানের বেঁচে ফেরা যাত্রী

১৪

ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক, সহায়তার প্রস্তাব

১৫

আবারও সীমান্তে ৯ জনকে পুশ ইন করল বিএসএফ

১৬

বিএনপি-গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, বিএনপি অফিস ভাঙচুর

১৭

কলেজ ছাত্রকে হত্যা করে মোবাইল ও টাকা ছিনতাই, আসামি গ্রেপ্তার

১৮

কথিত যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় সাত যুবক কারাগারে

১৯

বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে হেঁটে হেঁটে বের হন এক যাত্রী

২০
X