কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে এখন যেসব পথ খোলা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি : সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। এরপর থেকে ভারতে রয়েছেন তিনি। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটিতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। চরম গোপনীয়তার মধ্যে তিনি দেশটিতে অবস্থান করলেও তার বিষয়ে ভারত চূড়ান্ত কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানের ভিত্তি কী হবে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের শীর্ষপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। এর ভিত্তিতে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি ‘অপশন’ বা রাস্তা খোলা আছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সামনে প্রথম রাস্তাটি হলো নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন এমন তৃতীয় কোনো দেশে শেখ হাসিনার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা।

দ্বিতীয়টি হলো ভারতে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’) দেওয়া। এর ফলে তিনি দেশটিতে আপাতত থাকার সুযোগ পাবেন।

আর তৃতীয় পথটি এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে দেশটির কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের মতে, কিছুদিন পর উপযুক্ত পরিবেশ ফিরলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে। কেননা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের শক্তি এখনো ফুরিয়ে যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম পথটিই ভারতের কাছে সেরা অপশন তা নিয়ে অবশ্য কূটনৈতিক বা থিঙ্কট্যাঙ্ক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ শেখ হাসিনা ভারতে থেকে গেলে আগামীতে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় হস্তান্তরের অনুরোধ আসলে তা কোনো না কোনো যক্তিতে ভারত খারিজ করে দেবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে পর্যবেক্ষকরা কোনো বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে মনে করছেন না।

তৃতীয় কোনো বন্ধু দেশে পাঠানো

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সবশেষ জানানো হয়েছে যে শেখ হাসিনার এবার ভারতে আসার বিষয়টি ছিল সাময়িক। গত ৬ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশটির পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে ‘ফর দ্য মোমেন্ট’ (তখনকার মতো) কথাটা ব্যবহার করেছিলেন। এরপর থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি।

কেননা শেখ হাসিনাকে নিরাপদ কোনও তৃতীয় দেশে পাঠানোর চেষ্টা এখনও পুরোদস্তুর অব্যাহত আছে। তবে সেটি সফল না হলে দিল্লিও তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে ‘যতদিন খুশি’ ভারতে রাখতে কোনো দ্বিধা করবে না।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘উই আর হোপিং ফর দ্য বেস্ট, প্রিপেয়ারিং ফর দ্য ওয়র্স্ট ‘ অর্থাৎ ভারত এখনো আশা করছে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালোটাই ঘটবে (তৃতীয় কোনও বন্ধু দেশে তিনি গিয়ে থাকতে পারবেন), কিন্তু কোনো কারণে সেটি সম্ভব না হলে সবচেয়ে খারাপটার জন্যও (শেখ হাসিনাকে লম্বা সময়ের জন্য ভারতেই রেখে দিতে হবে) দিল্লি প্রস্তুত থাকবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তাব প্রথমেই বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ইউরোপের দু-একটি দেশের সঙ্গে ভারত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিল। তবে আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ কাতারের সঙ্গেও শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে ভারত কথাবার্তা শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।

প্রশ্ন উঠেছে তৃতীয় কোনো দেশ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিলেও কোন পাসপোর্টে তিনি দিল্লি থেকে সেখানে সফর করবেন? এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, এটি বড় কোনো সমস্যা নয়। বাংলাদেশ সরকার যদি তার পাসপোর্ট বাতিলও দেয়, তারপরও ভারত সরকারের ইস্যু করা ট্র্যাভেল পারমিট দিয়েই তিনি অনায়াসে তৃতীয় দেশে যেতে পারবেন।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যেমন ধরুন, ভারতে এ রকম হাজার হাজার তিব্বতি শরণার্থী রয়েছেন যারা জীবনে কখনও ভারতের পাসপোর্ট নেননি। এসব লোকদের ক্ষেত্রে ভারত একটি ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করে থাকে, সেটি দিয়েই তারা পৃথিবী চষে বেড়াতে পারেন।

রাজনৈতিক আশ্রয় একান্ত প্রয়োজনে ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে রেখে দিতে হলেও সেটি করতে তারা দ্বিধা করবে না বলে এখনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ভারতে এর আগে তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা, নেপালের রাজা ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহ এবং আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর মতো অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। এমনকি ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনা নিজেও সপরিবার ভারতের আতিথেয়তা পেয়েছিলেন।

ভারতের অনেক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনাকে ভারত যদি আশ্রয় দিয়ে রেখে দেয় তাহলে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সেটা অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।

‘রাজনৈতিক কামব্যাকে’ সাহায্য

ভারতে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের পর্যায়ে একটা প্রভাবশালী মহলের বিশ্বাস, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে শেখ হাসিনা মোটেই ‘চিরতরে ফুরিয়ে যাননি’ । ফলে উপযুক্ত পরিবেশ আর সময় আসলে তার রাজনৈতিক পুনর্বাসনে ভারতের উচিত হবে তাকে সাহায্য করা।

এ ধারায় বিশ্বাসী এমন এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা অন্তত তিন-তিনবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্ধর্ষ ‘কামব্যাক’ করেছেন। এগুলো হলো ১৯৮১, ১৯৯৬ আর ২০০৮ সালে। এই তিনবারই অনেকে ভেবেছিলেন, তার পক্ষে হয়তো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না। কিন্তু প্রতিবারই তিনি তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন!

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোজাকে বিয়ের পর তাহসানকে আমি শুভেচ্ছা জানিয়েছি : মিথিলা

সুখী দেশ ডেনমার্কের বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটিতে গোলযোগ

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ট্রাক শ্রমিকদের অবরোধ

এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে সাহস পাচ্ছে না ইসি : সারজিস

কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে, জানালেন সিইসি

সেই ক্লিপ নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন তাসনিম জারা

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উদযাপন

নোয়াখালীর শীর্ষ মাদক কারবারি বুলেট ফারুক গ্রেপ্তার

প্রেমিকের দেখা পেতে বাসে উঠে ঘুম, অতঃপর...

রাউজানে অস্ত্র-গুলিসহ ‘সন্ত্রাসী’ ওসমান গ্রেপ্তার

১০

বিআইডব্লিউটিএতে ২ শতাধিক পদে বড় নিয়োগ, আবেদন যেভাবে

১১

পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

১২

বিপাকে আমির খানের প্রেমিকা

১৩

বাংলাদেশে অনলাইন রিয়েল এস্টেটের নতুন ঠিকানা মানসীড়

১৪

প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের

১৫

বিগ ব্যাশে যোগ দিলেন অশ্বিন 

১৬

বাংলাদেশ রেলওয়ের জরুরি বিজ্ঞপ্তি

১৭

স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে রেহাই পেলেন না স্বামী

১৮

ঘোষণা শুনেই বাজারে বাড়ল খোলা তেলের দাম

১৯

চলন্ত ট্রেনের হুকে ৫ মিনিট আটকে ছিলেন নারী, অতঃপর...

২০
X