১৬ সেকেন্ডে ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ হওয়ার কথা ছিল- কিন্তু তা হয়নি! তাহলে কি এটাই দুর্ঘটনার পেছনের কারণ? ভারতের গুজরাতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭১ বিমানে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা ঘিরে ঘনাচ্ছে একের পর এক প্রশ্ন। খবর আনন্দ বাজার.কম।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) লন্ডনগামী এই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি ঠিকমতো রানওয়ে ছাড়লেও অল্পক্ষণ পরই উল্লম্বভাবে নেমে আসে এবং আছড়ে পড়ে ও বিস্ফোরিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে বিমানটি আকাশে হঠাৎ নেমে এসেছে, তা অনেকটাই ‘ফ্রি ফল’ বা বিনা নিয়ন্ত্রণে পতন প্রকাশ করে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে- যাদের মধ্যে ২৪১ জন যাত্রী।
কনফিগারেশন এরর
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যান্ত্রিক বা প্রযুক্তিগত যে ব্যবস্থা বিমানকে ওড়ার বা অবতরণের উপযুক্ত অবস্থা বজায় রাখতে সহায়তা করে - যেমন ল্যান্ডিং গিয়ার, ফ্ল্যাপ বা থ্রাস্ট- এর যে কোনো ঘাটতি বা সমস্যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সে ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, তা এখনো তদন্তাধীন।
অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮
যে বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে, তা বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার- আধুনিক ও সুদূর যাত্রার উপযুক্ত বিমান। এর ইঞ্জিন ছিল জিই জেনএক্স। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন পর্যন্ত এর যাত্রাপথ ছিল ৪,২০০ কিলোমিটার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন যে, বিমানে ১.২৫ লাখ লিটার জ্বালানি ছিল- যে কারণে দুর্ঘটনার পর বিস্ফোরণের মাত্রাও অনেক প্রবল হয়।
টেকঅফের গতি ও আবহাওয়া
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেদিন আবহাওয়া ভালো ছিল- আকাশ ছিল পরিষ্কার ও রোদেলা। বাইরে ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা হাওয়াকে পাতলা করে ও বিমানে থ্রাস্টের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। ওড়ার ৮ মিনিটের মধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭৮৭ ওড়ার জন্য অন্তত ঘণ্টায় ৩৭০-৪৬৩ কিমির গতি চাই- কিন্তু সে মুহূর্তে এর গতি ছিল ঘণ্টায় মাত্র ৩২৫ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ছিল মাত্র ৬২৫ ফুট।
ল্যান্ডিংগিয়ার
একজন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছিলেন যে, টেকঅফের ১৬ সেকেন্ডের মধ্যেই ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত, কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা ১০১ সেকেন্ড পরও খোলা ছিল, যা অস্বাভাবিক এবং সম্ভাব্য ঘাটতির দিকে ইঙ্গিত দিতে পারে।
ফ্ল্যাপ
ফ্ল্যাপ হলো বিমান ওড়া ও নামার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ঘাটলে উড্ডয়নে অসুবিধা হতে পারে। পাইলটরা আবহাওয়া ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক করে নেন যে, কখন ও কিভাবে এই ফ্ল্যাপ ব্যবহার করবেন। যদি এর কার্যকারিতায় ঘাটতি থাকে, তাহলে ওড়ার স্থিতিশীলতা হ্রাস পেতে পারে।
থ্রাস্ট
ইঞ্জিনের শক্তিতে ঘাটতি বা ভুল ব্যবস্থাপনাও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বাইরে আবহাওয়া গরম ও হাওয়া পাতলা হলে থ্রাস্ট কমে যায়, পাইলটরা চাইলে তা সামঞ্জস্য করতে পারবেন কি না, করেছিলেন কি না, তা তদন্তে প্রকাশিত হয়নি যে, বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে, এর ওজন ছিল ২২৭ টন।
রানওয়ে
সর্দার বল্লবভাই পেটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ২৩-এর দৈর্ঘ্য ৩৬০০ মিটার, যা টেকঅফের জন্য যথেষ্ট। অনেক ক্ষেত্রে যদি রানওয়ে সম্পূর্ণ ব্যবহার না করে টেকঅফ শুরু হয়, তাহলে বিমানের উড্ডয়নের জন্য চাইলে যে গতি ও থ্রাস্ট প্রয়োজন, তা পাওয়া যায় না। পাইলটরা নির্দিষ্ট তথ্য (ওজন, আবহাওয়া ও রানওয়ে) ব্যবহার করে সে সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু যদি সে তথ্য ভুল হয়, তাহলে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে পারে।
সময়ের আগেই রোটেশন
রোটেশন অর্থ হলো ওড়ার মুহূর্তে বিমানের নাক উপরের দিকে ওঠানো। এর গতি অন্তত ঘণ্টায় ২৬০-৩০০ কিলোমিটার হওয়া চাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এর আগে নাক ওঠানো হয়, তাহলে বিমানটি উপযুক্ত লিফট পেতে ব্যর্থ হয় এবং পিছে ঘষা খেয়ে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে, ঠিক এআই ১৭১-এর ক্ষেত্রে এ রকম হয় কি না, তাও তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন